ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একটি প্রতিষ্ঠানকে সাপোর্ট দিতে দেড় বছর ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে একটি টেণ্ডার!

চট্টগ্রামে রেলের সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দফতরের তেলেসমাতি

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ২৮ অক্টোবর ২০২০

চট্টগ্রামে রেলের সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দফতরের তেলেসমাতি

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামের সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিংয়ের (সিআরবি) সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দফতরে টেন্ডার নিয়ে তেলেসমাতি চলছে। দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর একটি টেন্ডার নিয়ে আদৌ সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। ঝুলিয়ে রেখেছে টেন্ডার প্রক্রিয়া। একটি প্রতিষ্ঠানকে সাপোর্ট দিতে গিয়ে এ ধরনের কেলেঙ্কারি ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উন্মুক্ত বিক্রয় দরপত্র/সেল-এর আওতায় থাকা এ টেন্ডারটি নিয়ে সর্বনিম্ন দরপত্রদাতা রূপালী ট্রেডিং নামের চট্টগ্রামের একটি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার কর্তৃপক্ষকে নানাভাবে জটিলতায় ফেলছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ প্রতিষ্ঠানটিকে ছাড় দিতে গিয়ে টেন্ডার প্রক্রিয়াকে কলুষিত করার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন বিক্রয় দরপত্রের বিপরীতে বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের দুর্বলতাকে আগামীতে পুঁজি করার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ নোয়া ইস্যুর পর উক্ত ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান অকেজো কাগজের ক্রয়মূল্য জমা না দিয়ে উল্টো সময় বর্ধিতকরণের চিঠি দাখিলের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। এমনকি সময় বর্ধিতকরণের চিঠি দাখিলের পর আরেক দফায় রেলের সঙ্গে প্রতারণার উদ্দেশ্যে টেন্ডার সিকিউরিটি ফেরতের আবেদনও জানিয়েছে। অথচ টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত টেন্ডার সিকিউরিটি ফেরত নেয়ার কোন বিধান নেই। আরও অভিযোগ রয়েছে মূলত রূপালী ট্রেডিংয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীর ভাই শাহাদাত হোসেন এ কর্মকা- ঘটাচ্ছেন। রেলওয়ের একমাত্র প্রিন্টিং প্রেস পাহাড়তলীতে কর্মরত থাকাকালীন এসএসএই শাহাদাত হোসেন নানাভাবে অপকর্ম চালিয়েছেন। এমনকি পাহাড়তলীর নিউ স্টোর ডিপোর ‘কে’, ‘এল’ এবং ‘এম’ ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা শাহাদাত হোসেন পণ্যের চাহিদাপত্র ইস্যুর বইটি পর্যন্ত গায়েব করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরে। এমনকি গত এক বছর আগে তিনি অবসরে গেলেও নানা জটিলতা ও দাফতরিক বিভিন্ন পণ্যের ঘাটতির কারণে চাকরির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি আটকা পড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ১২০ রিম টিকেট বোর্ডের চাহিদাপত্র গায়েব করার মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন এ কর্মচারী চাকরিতে থাকাকালীন সময়। এ ব্যাপারে সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক/পূর্ব প্রকৌশলী মোঃ বেলাল হোসেন সরকার জনকণ্ঠকে জানান, সর্বোচ্চ দরপত্রদাতাকে বারবার তাগিদ দেয়ার পরও প্রতিষ্ঠানটি অকেজো কাগজের বিক্রয় দরপত্র মূল্য জমা দেয়নি। সরকারী স্বার্থে সর্বোচ্চ দরদাতাকে পণ্য সরবরাহের জন্য সময় অতিবাহিত হয়েছে। বিষয়টি জেনারেল ম্যানেজার/পূর্ব এর সঙ্গে আলোচনা করে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা চলছে। সিআরবির রেলের পূর্বাঞ্চলীয় সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে দুটি জাতীয় ও দুটি স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে এ দফতর থেকে উন্মুক্ত বিক্রয় দরপত্র/সেল-এর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এর বিজ্ঞপ্তির আওতায় বেশ কয়েকটি বিক্রয়যোগ্য মালামাল রেল কর্তৃপক্ষ বিক্রির জন্য বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করে। ২০টিরও বেশি আইটেম থাকায় দরপত্র খোলার সময়ও ছিল ভিন্ন ভিন্ন তারিখে। উন্মুক্ত বিক্রয় দরপত্র নং-সেল/২০১৮/২৪-এ বিক্রয় দরপত্রটির বাক্স ওপেনিংয়ের দিন ছিল গত বছরের ২৬ জুন। দরপত্র দাখিলের দিন চট্টগ্রামে সর্বনিম্ন দরপত্রদাতা একটি প্রতিষ্ঠান নির্দেশিত হলেও ঢাকায় এ টেন্ডারটি দাখিলের আরেকটি স্থান থাকায় চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর সিডিএ মার্কেট এ ঠিকানায় থাকা মেসার্স রূপালী ট্রেডিং নামের প্রতিষ্ঠানটি ঢাকায় দরপত্র দাখিল করেছে। একদিন পর কুরিয়ারযোগে ঢাকা থেকে দরপত্রটি সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক/পূর্ব-এর দফতরে পাঠানো হয়। টেন্ডার নীতিমালা অনুযায়ী এ প্রতিষ্ঠানটি রেল কর্তৃক বিক্রয়যোগ্য পণ্যের ক্রেতা হিসেবে সর্বোচ্চ দরদাতা ঘোষিত হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) অনুযায়ী সরকারী ক্রয়ে সর্বনিম্ন দরদাতাকে এবং বিক্রির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দরদাতার গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আরও জানা গেছে, রূপালী ট্রেডিং নামের এ প্রতিষ্ঠানটি প্রথম সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে এ টেন্ডারটিতে ৭ টন নষ্ট কাগজের মূল্য হিসেবে ৬১ হাজার ৬শ টাকা দরপত্রে উল্লেখ করেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা ৪০ হাজার টাকা মূল্যের উক্ত পণ্য ক্রয়ের জন্য দরপত্র দাখিল করেছেন। উল্লেখ্য, সর্বশেষ বিক্রয় দর অনুযায়ী প্রতিটন ৮ হাজার ৪শ টাকায় বিক্রয় করা হয়েছে। পিপিআর অনুযায়ী বিক্রয় দরপত্রে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে রূপালী ট্রেডিংয়ের কাছে অকেজো কাগজ বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে অনুযায়ী চলতি বছরের ৩ মার্চ নোয়া ইস্যু করা হয়। নিয়মতান্ত্রিকভাবে নোয়া ইস্যুর সাত কর্মদিবসের মধ্যে দরদাতা পণ্যের মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে ক্রয়যোগ্য পণ্য প্রাপ্তিতে সক্ষমতা অর্জন করেন। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানটি টেন্ডারমূল্য পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ না করে উল্টো সময় বৃদ্ধিকরণের জন্য আবেদন জানিয়েছেন সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক/পূর্ব বরাবর। টেন্ডারের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে এ প্রতিষ্ঠানটি সময় বৃদ্ধিকরণের চিঠির পর চলতি বছরের ৩ সেপ্টেম্বর টেন্ডার সিকিউরিটি তুলে নেয়ার আবেদন জানায়। পিপিআর অনুযায়ী নোয়া ইস্যুর পর বিক্রয় দরপত্রে টেন্ডার মূল্য পে-অর্ডারের মাধ্যমে দাখিল করে পণ্য গ্রহণের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু রূপালী ট্রেডিং টেন্ডারের নিয়মনীতি ভঙ্গ করে টেন্ডার সময়ক্ষেপণের অবৈধ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। পিপিআর অনুযায়ী ১২০ দিনের মধ্যে যে কোন টেন্ডার নিষ্পত্তির কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ নিজেও অসাধু কর্মকা-কে সাপোর্ট দিতে গিয়ে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছরেও টেন্ডারটি নিষ্পত্তি করেনি।
×