ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

৫৫ বছর পর চিলাহাটি হলদিবাড়ি লাইনে ট্রেন চলাচলের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ২৮ অক্টোবর ২০২০

৫৫ বছর পর চিলাহাটি হলদিবাড়ি লাইনে ট্রেন চলাচলের উদ্যোগ

তাহমিন হক ববী, চিলাহাটি থেকে ॥ সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হলো বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার চিলাহাটি ও ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার হলদিবাড়ি ব্রডগেজ সেকশন রুটে নবনির্মিত রেললাইনটি। ৫৫ বছর পর মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে চিলাহাটি রেলস্টেশন থেকে ৬ দশমিক ৭২৪ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের (জিরো ল্যান্ড) বাংলাদেশে রেলওয়ের ইঞ্জিনের মহড়া হয়। ৮৬ কিলোমিটার গতি বেগে এই মাহেন্দ্রক্ষণে বাংলাদেশের ইঞ্জিনটি নোম্যান্স ল্যান্ড সীমান্ত পর্যন্ত নিয়ে যান ইঞ্জিন চালক (লোকো মাস্টার) মনিরুল ইসলাম ও সহকারী চালক আব্দুল মান্নাফ। এর আগে বাংলাদেশ অংশের নতুন রেলপথটির ইঞ্জিনের মহড়া সূচনায় চিলাহাটি স্টেশন থেকে ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোঃ হাফিজুর রহমান চৌধুরী। সেখানে মোনাজাত পরিচালনা করেন রেলের পাকশী বিভাগের প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম। দোয়া শেষে জেলা প্রশাসকসহ ইঞ্জিনে করে মহড়ায় অংশ নেন নীলফামারী ৫৬ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মোঃ মামুনুল হক, পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান প্রকৌশলী আল-ফাতাহ্ মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান, পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আনন্দ মোহন চক্রবর্তী, পাকশী বিভাগীয় সিগন্যাল ও টেলিকম প্রকৌশলী রুবাইয়াত শরীফ, বাংলাদেশ রেলওয়ে পার্বতীপুর চীফ ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলাম, চিলাহাটি রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুর রহিম, নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন ও উপসহকারী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম এবং গণমাধ্যম কর্মীরা। ভারতের হলদিবাড়ি সীমানার নোম্যান্স ল্যান্ডে বাংলাদেশের মহড়ার ইঞ্জিনটি পৌঁছলে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান ভারতীয় উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের চীফ ইঞ্জিনিয়ার ভিকে সিনহা, ডেপুটি চীফ ইঞ্জিনিয়ার (কনস্ট্রাকশন) এনজেপি ভিকে মিনা, ডি.এস.টি.ই সুভাস সরকার, সিনিয়র এডিএন ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার সন্দীপ কুমার, এ.এস.টি.ই বিনোদ কুমার, সিনিয়র মেক্যানিকাল ইঞ্জিনিয়ার বিপ্লব ঘোষ প্রমুখ। সেখানে ঘণ্টাখানে উভয় দেশের প্রতিনিধিরা শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। নোম্যান্স ল্যান্ডে উভয় দেশের প্রতিনিধিরা প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় অংশ নেন। নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোঃ হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, সাফল্যের সঙ্গে ইঞ্জিন মহড়া হলো। আশা করছি চলতি বছরের বিজয় দিবসকে সামনে রেখে অচিরের এই পথে মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু করবে। সরেজমিনে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক সীমান্তের স্থানে যেখানে দুই দেশের রেললাইন সংযুক্ত হয়েছে সেই স্থানটি বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের অংশে লাল-সবুজ ও ভারতীয় অংশে লাল-সাদা। তারপর নোম্যান্স ল্যান্ড। নোম্যান্স ল্যান্ড পেরিয়ে তারকাঁটা বেড়া। তারকাঁটার কিছু অংশ কেটে সেখানে ভারতের পক্ষে নির্মাণ করা হয়েছে খাচার মতো করে দরজা। দুই দেশে ট্রেন প্রবেশের সময় সেই দরজা খুলে যাবে। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ও ভারতের যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত এই পথেই চলত ট্রেন। ছিটমহল বিনিময় চুক্তির পর দুই দেশের সরকার এই রেলপথ ফের চালু করতে উদ্যোগী হয়। ৫৫ বছর পর পুরনো হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রেল রুটে ইঞ্জিনের মহড়া দেখতে দুই দেশেরই বহু মানুষ সীমান্তে হাজির ছিলেন এ দিন। অনেকেই পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করতে থাকেন এ দিন।
×