ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইলিশ খেলে হৃদযন্ত্র মস্তিষ্ক চোখ হাড় ভাল থাকে

প্রকাশিত: ২২:৪১, ২৮ অক্টোবর ২০২০

ইলিশ খেলে হৃদযন্ত্র মস্তিষ্ক চোখ হাড় ভাল থাকে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ একটা সময় ছিল যখন ইলিশ ধরা ছিল মানা। সেকালের মানুষ নিয়ম মানতেন অক্ষরে অক্ষরে। তাই বর্ষায় এ রুপালি ইলিশ মিলত যথেষ্ট। বিশ্বজুড়ে চলমান কোভিড মহামারীর এই বছরে আমরা যদি আবার সেই নিয়ম চালু করি ইলিশের আকাল সামলানো যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন। শুধু স্বাদের দিক থেকেই নয় পুষ্টির দিক থেকে বিচার করলেও মাছের রাজা ইলিশই। হৃদযন্ত্র থেকে মস্তিষ্ক, চোখ থেকে হাড়ের কাঠামো সবই মজবুত ও স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে ইলিশে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, কপার ও জিঙ্কসহ অজস্র পুষ্টিকর উপাদান। ডায়েটিশিয়ান রেশমী রায়চৌধুরী বলেন, ইলিশের বিজ্ঞানসম্মত নাম তেনুয়ালোসা ইলিশা। এতে আছে যথেষ্ট পরিমাণে পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড বা পুফা। ডায়াবেটিস, হার্টের অসুখ, ক্যান্সার প্রতিরোধের পাশাপাশি ওজন স্বাভাবিক রাখতে যথেষ্ট সাহায্য করে এই পুফা। পুফাতে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে হাই ডেনসিটি কোলেস্টেরল বা এইচডিএল যা আমাদের হৃদযন্ত্রের রক্তবাহী ধমনীকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। অনলাইন সূত্রে প্রাপ্ত খবরে বলা হয়, রক্ত চলাচল ভাল হলে হৃদযন্ত্র-ফুসফুসসহ শরীরের যাবতীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুস্থ থাকবে। ইলিশের অসাধারণ স্বাদের মূলে আছে বেশ কয়েকটি মোনো ও পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড সংক্ষেপে মুফা ও পুফা। ওলেইক, লেনোলেইক, নেনোলেনিয়িক, অ্যারাকআয়োডোনিক, ডকোসা-হেক্সায়োনিক এসিডসহ নানা অত্যন্ত দরকারি উপাদান থাকে ইলিশ মাছসহ সমুদ্রের নানা তৈলাক্ত মাছে। এদের মধ্যে নিঃসন্দেহে সব থেকে স্বাদু রুপালি ইলিশ। এই কোভিড যুগে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বেশি বেশি ইলিশ খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। রেশমী জানালেন, পুফা ও মুফা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি মস্তিষ্কের নানা ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করতে সাহায্য করে। এর ফলে মানসিক অবসাদ, এ্যাংজাইটি ও স্নুায়ুর ক্ষয়জনিত নানা অসুখ প্রতিরোধ করতে কার্যকর ভূমিকা নেয়। মুফা ও পুফার গুণের শেষ নেই। এই ফ্যাটি এসিড শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএল মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে বন্ধু কোলেস্টেরল এইচডিএলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে হার্ট এ্যাটাক ও ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়। আমেরিকান ডায়াবেটিস এ্যাসোসিয়েশন ও আমেরিকান হার্ট এ্যাসোসিয়েশন এ দুই লাইফস্টাইল সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধ করতে নিয়মিত মাছ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দৈনিক ৫০-১০০ গ্রাম মাছ খেলে ভাল হয়। তবে বিজয়ার পর ইলিশ না খাওয়াই ভাল। এই সময়ে অন্য তৈলাক্ত সামুদ্রিক মাছ ও অন্যান্য মাছ খাওয়া যেতে পারে। ইলিশ মৌসুমি মাছ। তাই বর্ষার সময় কয়েকদিন ইলিশের স্বাদে মজতে পারলে শরীর মন দুই ফুরফুরে থাকবে সেকথা নিশ্চিত বলা যায়। খবরে বলা হয়, সর্ষের সঙ্গে ইলিশের সঙ্গে মাছের পুষ্টিগুণ কিছুটা বাড়ে। তবে বেশি তেল-মসলা দিলে স্বাদ ও পুষ্টি দুয়েরই কমতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বেশি বয়সের মানুষজনও ইলিশ খেতে পারেন নির্ভয়ে। ক্রনিক কিডনির অসুখ বা অন্য কোন জটিল শারীরিক সমস্যায় ইলিশ খাওয়া চলবে না। বয়স্কদের ডিমেনশিয়া, পার্কিনসন্স ও আলজেইমার্স ডিজিজ প্রতিরোধ করতে ইলিশ মাছে থাকা পলি-আনস্যাচুরেটেড ও মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড কিছুটা সাহায্য করে। আবার ক্যালসিয়াম, ফসফরাসের মতো উপাদান থাকায় হাড় মজবুত হয় বলে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মতো বাতের ব্যথার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। ইলিশ ছাড়াও যে কোন সামুদ্রিক ও তৈলাক্ত মাছ খেলে একই ফল পাওয়া যাবে, বললেন রেশমী। হবু মায়েদের কোন শারীরিক সমস্যা না থাকলে ইলিশসহ অন্য সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন। এর ফলেগর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক ও দৃষ্টি শক্তির বিকাশ হয়।
×