ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেশের সব নাগরিককে বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন দেয়া হবে

প্রকাশিত: ২২:৪০, ২৮ অক্টোবর ২০২০

দেশের সব নাগরিককে বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন দেয়া হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী মাসে আসছে করোনার টিকা! যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এ্যাস্ট্রাজেনেকা সম্ভাব্য এ করোনার টিকা আবিষ্কার করেছে। ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য সান এক প্রতিবেদনে বলেছে, নবেম্বরে লন্ডনের একটি হাসপাতালে এ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনার সম্ভাব্য টিকার প্রথম সরবরাহটি পৌঁছাবে। এ জন্য হাসপাতালের কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন, যে দেশ বা প্রতিষ্ঠান আগে ভ্যাকসিন উৎপাদন করবে, বাংলাদেশ তাদের থেকেই ভ্যাকসিন কিনে আনবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশ করোনার টিকা সরবরাহ করবে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এদিকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কিনে দেশের সব নাগরিকের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত সাত অক্টোবর মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ভ্যাকসিন কিনে ফেলবে সরকার। বিদ্যমান বিনামূল্যে টিকাদান কর্মসূচীর মতোই এই ভ্যাকসিন বিতরণ করা হবে। ভ্যাকসিন ক্রয়, মজুদ, পরিবহন ও বিতরণ করতে চারটি উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ইতোমধ্যে দুই বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এআইডিবি এবং জাইকার প্রত্যেকের কাছে ৫০০ মিলিয়ন ডলার করে চেয়ে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেয়া চিঠিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, সরকার নিজস্ব খরচে ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও বিতরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, এ বছরের শেষের দিকে বৃহৎ পরিমাণে ভ্যাকসিনের বাণিজ্যিক উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ এর জরুরী প্রয়োজনে চিকিৎসা সামগ্রী সংগ্রহের জন্য এ বছরের বাজেটে ১২ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলেও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এদিকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম-গুলোতে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, এ্যাস্ট্রাজেনেকা জানায় তাদের সম্ভাব্য টিকাটির কার্যকারিতার প্রমাণই শুধু পাওয়া যাচ্ছে না, প্রবীণদের মধ্যে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অনেক কম দেখা গেছে। প্রতিষ্ঠানটির এক মুখপাত্র বলেন, এটা আশাব্যঞ্জক যে প্রবীণ ও তরুণদের মধ্যে সম্ভাব্য টিকাটি একই রকম রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবীণদের শরীরে টিকা প্রয়োগের পর প্রয়োজনীয় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠার খবরটি ইতিবাচক। কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং করোনার সংক্রমণে প্রবীণদের জটিলতা ও মৃত্যু ঝুঁকি বেশি। করোনাভাইরাসের মহামারী নিয়ে অস্থির সময় কাটাচ্ছে পুরো বিশ্ব। করোনা ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে কয়েকটি টিকা উদ্ভাবন নিয়ে কাজ চলছে। ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত হালনাগাদ করা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) খসড়া তালিকা অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ১৯৮টি সম্ভাব্য টিকা নিয়ে কাজ চলছে। এর মধ্যে মানবদেহে পরীক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে ৪৪টি টিকা। এগুলোর মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে অক্সফোর্ডের টিকা, চীনের সিনোভ্যাক, সিনোফার্ম ও ক্যানসিনো, রাশিয়ার গামালেয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট, যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার, মডার্না ও নোভাভ্যাক্স এবং জার্মানির কিওরভ্যাক। এই টিকাগুলো মানবদেহে পরীক্ষার তৃতীয় ধাপে রয়েছে। কবে আসবে একটি নিরাপদ ভ্যাকসিন, এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে বিশ্বব্যাপী। গবেষকরা জানিয়েছেন, ২০২১ সালের শুরুতে একাধিক টিকা পাবে বিশ্ব। এর মধ্যে অক্সফোর্ডের টিকা নিয়ে আর কোন জটিলতা দেখছেন না গবেষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে এ্যাস্ট্রাজেনেকার সমন্বয়ে তৈরি টিকা ডিসেম্বরে বড়দিনের পর অর্থাৎ নতুন বছরের শুরুতেই মিলবে বলে জানিয়েছেন ব্রিটেনের শীর্ষ এক মেডিক্যাল কর্মকর্তা। মার্কিন প্রতিষ্ঠান ফাইজার জানিয়েছে, তাদের বানানো টিকা কতটা নিরাপদ তার ফল জানার অপেক্ষায় রয়েছেন গবেষকরা। টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো হয়েছে অন্তত ৪৪ হাজার মানুষের ওপর। প্রতিষ্ঠানটি প্রস্তুতি নিয়েছে গণহারে উৎপাদনের। এর মাধ্যমে তারা জরুরী ভিত্তিতে টিকা প্রয়োগের জন্য অনুমোদন নিতে চায়। আর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আশাবাদ, নবেম্বরে নির্বাচনী মাসেই টিকা পাবেন মার্কিনরা। বিশ্বের যেসব দেশ এবং সংস্থা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরি চেষ্টা করছে তাদের সঙ্গে সরকার যোগাযোগ রাখায় এ ভ্যাকসিন প্রস্তুত হয়ে গেলে বাংলাদেশ তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবে বলে আশা প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা। সম্প্রতি মন্ত্রিসভার এক বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে আজ বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে কম দামে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এটি পাবে। শুধু তাই নয়, আমাদের এক বা একাধিক ওষুধ সংস্থাগুলোও ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে সক্ষম হবে’। কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছে আমরা শুরু থেকেই তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউইচও) স্বীকৃতি ছাড়া কোন ভ্যাকসিনের অনুমতি দেবে না। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সংগ্রহ করার লক্ষ্যে সরকার একটি প্রকল্পের আওতায় ৬০০ কোটি টাকা আলাদা করে রেখেছে। ‘সুতরাং ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য অর্থের অভাব হবে না। যেখানে পাওয়া যায় সেখান থেকেই বাংলাদেশ এটি সংগ্রহ করবে,’ বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এবং ব্রিটেনের প্রথম সারির ট্যাবলয়েড সান পত্রিকার খবর ২ নবেম্বর, সোমবার থেকেই টিক দেয়া শুরু হতে পারে। সে দিন থেকেই ওই হাসপাতালকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ওই হাসপাতাল ট্রাস্টের এক আধিকারিককে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
×