ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষমতাসীনরা স্বেচ্চারি হয়ে গেছে- নজরুল

প্রকাশিত: ১৭:৩১, ২৭ অক্টোবর ২০২০

ক্ষমতাসীনরা স্বেচ্চারি হয়ে গেছে- নজরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হাজী সেলিম পুত্র ইরফান সেলিম নৌ বাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধর কারার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ক্ষমতাসীনরা স্বেচ্চারি হয়ে গেছে। মঙ্গলবার দুপুরে যুব দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে শেরেবাংলানগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলঅপকালে তিনি এ কথা বলেন। নজরুল ইসলাম বলেন, সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা মওকুফ কওে বিএনপি চেয়ারপার্সন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছেন। তাঁকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। তাঁর সুচিকিৎসার জন্য আমরা স্থায়ী মুক্তি চাই। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ব্যর্থ মন্তব্য করে নজরুল বলেন, বিশ্বেও অন্যান্য দেশের মতো মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশের মানুষও করোনায় আক্রান্ত। কিন্তু কি দুর্ভাগ্য আমাদের! দেশের জনগন প্রকৃত তথ্য জানেনা, কতজন আক্রান্ত হয়েছে আর কত জন মারা গেছে। সরকার প্রতিদিন যে তথ্য দেয় তা জনগণ বিশ্বাস করে না। কারণ সরকারের মন্ত্রী এবং কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আইসিডিডিআরবি‘র মতো প্রতিষ্ঠান যখন বলে ঢাকা শহরের শতকরা ৪৫ জন মানুষ করোনায় আক্রান্ত আছে বা আক্রান্ত হয়েছিলো। এ হিসেবে শুধু ঢাকাতেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা ৯০ লাখ হওয়ার কথা। কিন্তু সরকারি হিসেবে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম। নজরুল ইসলাম বলেন, এ সরকারের ওপর জনগনের বিশ্বাস নেই, যে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের আমলে ঢাকা মহানগরীতে মাত্র শতকরা ১০ ভাগ লোক ভোট দিতে যায়। তার মানে ভোট প্রক্রিয়া, ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার এই বিষয়গুলোর ওপর মানুষ বিতৃষ্ণা এসে যাচ্ছে, মানুষ হতাশ হয়ে যাচ্ছে, মানুষ নিরাশ হয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষ গণতন্ত্র সম্পর্কে হতাশ ও নিরাশ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে তো চলতে পারে না। এটা হতে দেয়া যাবে না। এর বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ ফসল গণতন্ত্রকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। নজরুল বলেন, ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষা করার লক্ষ্যেই বার বার যারা এদেশে সোচ্চার হয়েছে, আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে- সেই বিএনপি, সেই জিয়ার আদর্শে উদ্দীপ্ত হয়ে, সেই খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমাদেও সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, যুব দল অতীতের মতো এবারও গণতন্ত্রেও লড়াইয়ে সামনের কাতারে থাকবে এবং আন্দোলন সফল হবে। নজরুল খান বলেন, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় প্রমাণিত হচ্ছে যে সরকার জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয় না, যে সরকারের ক্ষমতার নৈতিক ভিত্তি নেই, সেই সরকারের আমলে তার মন্ত্রীরা দুর্নীতিগ্রস্থ হয়, সেই দলের নেতারা দুর্নীতিগ্রস্থ হয় এবং সবাই স্বেচ্ছাচারি হয়ে যায়। এর প্রমাণ আমরা দেখলাম কক্সবাজারে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা হত্যার ঘটনা এবং অতি সম্প্রতি দেখলাম নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধর করার ঘটনা। নজরুল বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত’ বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে বক্তব্য দিয়েছেন তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ওবায়দুল কাদের সাহেবের অনেক মন্তব্যই আসে যেগুলো নিয়ে পাল্টা মন্তব্য করা প্রয়োজনই বোধ করি না। কারণ দেশের মানুষ তার কোনো মন্তব্যকে গুরুত্ব দেয় না। তবে ওবায়দুল কাদেরকে আমি একটা প্রশ্ন করতে চাই ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিলেন। তখন কি তারা পদত্যাগ করেছিলেন নাকী তারা রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছিলেন? আমাদেও তো ক্ষমতার বাইরে থাকার এষনও ২১ বছর হয়নি। তাহলে আমরা কেন পদত্যাগ করবো? নজরুল বলেন, সরকারি দলের স্বেচ্ছাচারি মনোভাব দূও হওয়া প্রয়োজন। সম্রাট-পাপিয়া, ফরিদপুরের নেতারা এবং তাদের আরও অনেক নেতা যেসব দুর্নীতি-অনাচার করেছে সেটা থেকে বের হওয়ার একটাই পথ। আর তা হলো জনগনের কাছে দায়বদ্ধ এবং জনগনকে জবাবদিহিমূলক একটা সরকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ কওে দেয়া। আর সেটা সম্বব শুধু অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে। তার জন্য প্রয়োজন ক্ষমতায় একটা নিরপেক্ষ সরকার থাকা এবং আর একটা যোগ্য নির্বাচন কমিশন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, জনগনের দাবি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং একটা যোগ্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক। সেই নির্বাচনে জনগন তার পছন্দমত ভোট দিয়ে যাকে নির্বাচিত করবে তারা রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিচালনার দায়িত্ব নেবে এবং তাদেরকে যেহেতু জনগনের কাছে দ্বায়বদ্ধ থাকতে। যেহেতু তাদেরকে জনগনের কাছে জবাবদিহি করতে হবে সেহেতু সেই সরকারের কোনো মন্ত্রী কিংবা ক্ষমতাাসীন দলের কোনো নেতা দুর্নীতিবাজ কিংবা স্বেচ্ছাচারি হতে পারবে না। নজরুল বলেন, সরকারের ভিত্তি যেখানে অনৈতিকতার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে, যেখানে সরকারের মন্ত্রী বলেন, কর্মকর্তা বলেন আর তার দলের নেতাকর্মী বলেন কারোই নৈতিক মূল্যবোধ কাজ করে না। সবাই স্বেচ্ছাচারি হয়, সবাই দুর্নীতিবাজ হয়ে যায় সেখানে ভাল কিছু আশা করা যায় না। আর এ কারণেই জনমুখী নিরপেক্ষ সরকার প্রয়োজন। তিনি বলেন, দেশে এখন রোগ হলো অনির্বাচিত সরকার। এই রোগ দূর করার চেষ্টা করতে হবে, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। এ সময় নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুব দলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সংগঠনের নেতা মোরতাজুল করীম বাদরু, মামুন হাসান প্রমুখ।
×