ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রামবাসীর অর্থায়নে পাখিমারা খালে ভাসমান সেতু নির্মাণ

প্রকাশিত: ১২:৪৯, ২৭ অক্টোবর ২০২০

গ্রামবাসীর অর্থায়নে পাখিমারা খালে ভাসমান সেতু নির্মাণ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী ॥ উপজেলা পরিষদ কিংবা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরসহ কারও সহায়তা না পেয়ে অবশেষে নিজেদের অর্থায়নেই পাখিমারা খালে ভাসমান সেতু নির্মাণ করছেন কুমিরমার গ্রামের সবজি চাষিরা। সবজির গ্রাম খ্যাত কুমিরমারা মজিদপুর, এলেমপুরের সবজি চাষীদের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করার একমাত্র যোগাযোগের পাখিমারা খালের ওপর এলজিইডির নির্মিত আয়রণ ব্রিজটি সম্প্রতি ভেঙ্গে খালেই ডুবে যায়। এরপরে সবজি চাষীরা বিপদে পড়েন। তাঁদের উৎপাদিত শাক-সবজি বাজারে বিক্রি করা নিয়ে চরম বিপদে পড়েন। অনেক দূর্ভোগ করে খেঁয়া নৌকায় পারাপার হতেন চাষীরা। ধর্ণা দিয়েছেন উপজেলা পরিষদে। ঘুরেছেন কৃষি অফিসে, ইউনিয়ন পরিষদে। কিন্তু কেউ বিধ্বস্ত ব্রিজটি মেরামতে এগিয়ে আসেনি। উপায় না জীবীকার অবলম্বন সবজি বিক্রির জন্য নিজেরা চাঁদা তুলে প্লাস্টিকের ড্রামের ওপর পাটাতন দিয়ে পাখিমারা খালের ওপর ভাসমান এই সেতুটি নির্মাণ করেন সবজি চাষীরা।প্রতিদিন এ সেতু দেখতে ভিড় জমে মানুষের। নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কুমিরমারা, মজিদপুর ও এলেমপুর গ্রামের শতকরা ৯০ ভাগ চাষি ১২ মাস সবজির আবাদ করে আসছেন। কলাপাড়া উপজেলার সবজির চাহিদা বলতে গেলে নীলগঞ্জ ইউনিয়ন থেকে পুষিয়ে দেন চাষিরা। অথচ করোনা এবং আমফানসহ অতিরিক্ত বৃষ্টিকালে ক্ষতির শিকার এসব চাষিরা সরকারি সকল সুবিধার বাইরে রয়েছেন। কুমিরমারা গ্রামের সফল এবং উদ্যমী চাষি জাকির হোসেন জানান, আমরা সবজি চাষিরা ১২০ জনের নাম ফেয়ার প্রাইস কার্ডের অন্তর্ভুক্তির জন্য বহুবার উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। কিন্তু কোন ধরনের সাহয়তা তাদের কাছে পৌছেনি। উৎপাদক শ্রেণির এসব মানুষ কোন সুবিধা না পেয়ে ক্ষুব্ধ মনোভাব প্রকাশ করলেন। বর্তমানে এসব চাষিদের শীতকালীন সবজির ক্ষেত ভারি বর্ষণে নষ্ট হয়ে গেছে। কোটি কোটি টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছেন চাষিরা। নিঃস্ব মানুষগুলো দিশাহারা হয়ে গেছেন। কৃষক জাকির হোসেন জানান, কোন উপায় না পেয়ে সবজি নিয়ে বাজারে যাওয়ার একমাত্র পথ খাল পার হওয়ার জন্য নিজেদের সংগঠন ‘আদর্শ কৃষক সমবায় সমিতি’র’ সদস্যরা জোট বেধে নিজেদের অর্থায়নে নিজেরাই সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। কুমিরমারা, মজিদপুর গ্রামের অধিকাংশ মানুষ সহায়তা করেন। প্রায় ৩৫০ ফুট লম্বা, চার ফুট পাশে এই সেতুটি নির্মাণে পৌণে তিন লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। ২৯ সেপ্টেম্বর সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ১০ অক্টোবর সেতুটি চলাচলের জন্য চালু করা হয়েছে। জানান চাষিরা, ৭২টি প্লাস্টিকের ড্রামের ওপর পাটাতন করতে ২৫০ ঘনফুট (কেভি) কাঠ লেগেছে। আর প্লাস্টিকের রশি লাগে তিন মণ। তারকাটা লেগেছে তিন মণ। এ সেতুতে একই সঙ্গে ১০ জন মানুষ পারাপার হলেও কোন ঝুঁকি নেই বলে দাবি কৃষক জাকির হোসেনের। সকলে সহায়তা করলেও মূল উদ্যোক্তা ছিলেন জাকির হোসেন ছাড়াও সুলতান গাজী, জাকির গাজী, নুরুল আমিন গাজী, আজিজ হাওলাদার, কামরুল ইসলাম, আলতাফ হোসেন গাজী, সাইফুল্লাহ গাজী, আলম জোমাদ্দার মূল উদ্যোক্তা এই সেতুটি নির্মাণে প্রধান ভূমিকা রেখেছেন। গ্রামের সকল শ্রেণির মানুষও এগিয়ে এসেছেন। এসব চাষীরা এখন কলাপাড়ার জন্য মডেল হয়ে রইল। তবে এসব উৎপাদক শ্রেণির মানুষকে দেশের স্বার্থে, এলাকার উন্নয়নের তথা নিজেদের কৃষি উন্নয়নের মডেল হিসেবে সরকারি উদ্যোগে বিশেষ সহায়তা দেয়া প্রয়োজন রয়েছে বলে সচেতন মানুষ মনে করছেন। তবে যে সেতুটি সবজি বহনের জন্য বানানো হয়েছে সেই সব সবজি পচে যাওয়ায় চাষিরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তারা ফের ক্ষেতে নামতে বীজ কেনার মতো আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন।
×