ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ শাহজাদা সেলিম

করোনা মহামারীকাল ডায়াবেটিস ও ভাবাবেগ

প্রকাশিত: ২৩:৪০, ২৭ অক্টোবর ২০২০

করোনা মহামারীকাল ডায়াবেটিস ও ভাবাবেগ

ডায়াবেটিস শুধু শারীরিক রোগ নয়, এটি মনকেও গভীরভাবে আক্রান্ত করে। শুরুতেই যখন কাউকে জানানো হয় যে আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে যা আজীবনই থাকবে এবং আপনাকে জীবন যাপন পরিবর্তন করাসহ ক্রমশ বেশি সংখ্যক ওষুধ সেবন করার দরকার হতে পারে; এ তথ্যগুলোই ডায়াবেটিসের রোগীকে মানসিক চাপে বা মানসিক অবসাদে ফেলতে পারে। করোনা ভাইরাসঘটিত মহামারী, কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিক সারা বিশ্বকে গ্রাস করেছে। অন্য বেশ কটি রোগে আক্রান্তদের কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হলে রোগের তীব্রতা ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়, তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হলে মৃত্যু হার অন্তত ৪ গুণ বেড়ে যায়। যাদের আগে থেকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ছিল না তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও বেশি। এসব নির্মম তথ্যগুলো ডায়াবেটিস রোগীর মানসিক চাপ বৃদ্ধির অমোঘ কারণ হিসেবে কাজ করছে। এ সব ব্যাপার মনে রেখে, ডায়াবেটিস রোগীর চিকিৎসা সেবা বিন্যস্ত করতে হবে। রোগটি যেহেতু ডায়াবেটিস, তাই রক্তের গ্লুকোজ কাক্সিক্ষত মাত্রায় রাখাটাই সবচেয়ে জরুরী কাজ। যাদের রক্তের গ্লুকোজ লক্ষ্যমাত্রায় ছিল, তারা ভাল অবস্থায় আছে, কিন্তু বাংলাদেশের প্রায় ৭৫% রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে না; সে সব রোগীর রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের আশু পদক্ষেপ নিতে হবে। এর জন্যে হরমোন/ ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। করোনাভাইরাস (কোভডি ১৯) মহামারীতে ডায়াবেটিস রোগীর আশু করণীয়: ক্স করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সামান্যতম লক্ষণ দেখা দিলেও সরকার নির্দেশিত কেন্দ্রগুলোতে রোগ শনাক্তকরণ ও পরর্বতী সবোর জন্যে দ্রুত চলে যাওয়া। ক্স কাল ক্ষেপণ না করে অতি সত্তর রক্তের গ্লুকোজ লক্ষ্য মাত্রায় নিয়ে (এইচবিএওয়ানসি <৭%) যাবার উদ্যোগ নেয়া। ক্স যদি সিম্পটম দেখা দিয়ে থাকে (জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট)- তাহলে নিজেকে নিজে আলাদা করে থাকাই শ্রেয়। শরীর বেশি খারাপ না হলে হাসপাতালে না যাওয়াই ভাল। ৮০% মানুষ কোন হাসপাতাল ভর্তি ছাড়াই ভাল হয়ে যাব। এ ১৪ দিন নিজেকে আইসোলটে করে থাকবেন। ক্স বয়স্ক লোকজন এর মধ্যে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি বয়স্ক কেউ অসুস্থ হলে হাস্পাতালে ভর্তি করার কারণ আছে কারণ তাদরে অনেকরেই আই-সি-ইউ সাপোর্ট লাগবে। ক্স এবারের সবচেয়ে সমস্যা হলো লক্ষণহীন রোগীরা। জার্মানেিত অনেকে আছে যাদের পাওয়া গেছে কোন কাঁশি নেই, কোন জ্বর নেই, কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা যায় তাদের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে। ইতালীতেও এমন অনেক পাওয়া গিয়েছে এমনকি যুক্তরাজ্যেও। এ নিয়ে সবচেয়ে বড় ভয় এটাই যে একদম নর্মাল, ফটি মানুষজন করোনাভাইরাস নিয়েই ঘুরাফেরা করছে। এখন বলা যাচ্ছে না তাদের থেকে অন্যদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু। ক্স স্যানটিাইজার ভাল হলেও, মার্কেটের অধিকাংশ স্যানিটাইজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ এল্কোহল নেই (যেটা পান করে ওটা এল্কোহল না)। সাবান দিয়ে হাত ধোন, বেশি বেশি ধোন। অতিরিক্ত করতে চাইলে বরং হক্সোসল টাইপের কিছু ব্যবহার করুন। ঘররে বাইরে স্যানটিাইজার ব্যবহার করলওে মুখে হাত দিবেন না যতক্ষণ না কথাও গিয়ে হাত ধুতে পারবেন। ক্স বড় সমাবেশ/ লোক সমাগম থেকে দূরে থাকাই ভাল। কোন কনফারন্সে বা পার্টিতে যাবেন না। ভাবাবেগের অনেক কিছুই আপনি নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। চারপাশের অনেক কিছুই আগের মতো নেই ভেবে মনোকষ্ট পাবেন না। পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে চেষ্টা করুন। ডায়াবেটিস আছে বলে নিজেকে অতি দুর্বল অবস্থায় আছেন না ভেবে বরং হরমোন/ ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মোতাবেক চলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসুন এবং তা বজায় রাখুন। সঠিক খদ্যাভ্যাস ও ঘর-ছাদ-বারান্দা-গ্যারেজে হাঁটুন। এগুলো শরীর ও মন দুটুকেই সতেজ-চাঙ্গা রাখবে। নিজেকের দয়াশীল হোন, যত্নশীল হোন। যদি কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েই যান, নিজেকে নিঃসঙ্গ না ভেবে পরিবার ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ এবং এ রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থার সাহায্য নিন। আশপাশের অনেকেই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ভাল হয়ে গিয়েছেন, মনে রাখবেন সেটা। ডায়াবেটিসের রোগী কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হলে রক্তের গ্লুকোজ চটজলদি বেড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। তাই, এ সময় ঘন ঘন গ্লুকোজ মেপে ওষুধ সমন্বয় করার দরকার হবে। অনেকের ক্ষেত্রে নতুন করে ইনসুলিন শুরু করতে হতে পারে। আবার কারও কারও রক্তের গ্লুকোজ কমেও যেতে পারে। সকল ক্ষেত্রেই ঘন ঘন গ্লুকোজ মেপে ওষুধ ঠিক নিতে হবে। লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ইমেইল: [email protected]
×