ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঠিকাদারির বিরোধে ফোনে ডেকে নিয়ে সিরুকে হত্যা করা হয়

প্রকাশিত: ২২:৪৬, ২৭ অক্টোবর ২০২০

ঠিকাদারির বিরোধে ফোনে ডেকে নিয়ে সিরুকে হত্যা করা হয়

আজাদ সুলায়মান ॥ হঠাৎ ফোন পেয়ে গাজীপুর থেকে ঢাকায় নিজের বাসায় ফেরেন তিনি। কিন্তু বাসা থেকে ফের বের হওয়াটাই তারজন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। ঢাকা উদ্যানের একতা হাউসিং এলাকায় তাকে ৬/৭ জন দুর্বৃত্ত নৃশংস কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করে। সিরাজুল ইসলাম সিরুকে গত ৩ অক্টেবর হত্যার পর খুনীরা উল্লাসে মেতে ওঠে। অবশ্য খুনীরা বেশিদিন পালিয়ে থাকতে পারেনি। পুলিশ ও র‌্যাব যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে তাদের ৫ জনকে গ্রেফতার করে ফেলে। তারাই স্বীকার করে, ঠিকাদারি ও টাকা-পয়সার বিরোধে পূর্বশত্রুতার জের হিসেবে তাকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। খুনীরাই সেদিন সন্ধ্যায় তাকে ফোন করে। সেই ফোনের ডাকেই গাজীপুর থেকে ঢাকায় শেখেরটেকে নিজের বাসায় ফিরেন। ফোনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে ঘরে না ঢুকেই স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে যান। এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিরু হত্যার খবর পান স্ত্রী জোছনা বেগম। পরিবার বলছে- স্থানীয় প্রভাবশালী ও মাদক কারবারিদের যোগসাজশে সিরুকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। পুলিশের মতে- বিভিন্ন বিষয়ে দ্বন্দ্বের জেরে হত্যা করা হয়েছে সিরুকে। মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানের একতা হাউসিং এলাকায় গত ৩ অক্টোবর রাতে ৬-৭ জনের অংশগ্রহণে ঠিকাদার সিরাজুল ইসলাম সিরুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে রাত ৯টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সিরু হত্যার পর অজ্ঞাতদের আসামি করে তার স্ত্রী জোছনা বেগম মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। বাদীর ভাষ্য- আমার স্বামীর সঙ্গে কারও শত্রুতা বা দ্বন্দ্বের তথ্য এর আগে কখনও পাইনি। সেদিন বাসায় এসেও ঘরে ঢোকেননি তিনি। তার ঢাকায় ফেরার খবরে রাতের খাবারের ব্যবস্থাও করেছিলাম। কিন্তু লোকটাকে রাতে আর খেতে দিতে পারিনি। ফিরেছেন লাশ হয়ে। তাকে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই। এ হত্যায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে ওই মামলায় র‌্যাব দু’জন ও পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে সুজন মিয়া, সজীব হোসেন রুবেল, অহিদ ও তানভীর নামে চারজন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। সুমন শেখ নামে আরেকজন দুদিনের রিমান্ডে রয়েছেন আর্থিক, প্রভাব বিস্তার ও ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে হত্যা করা হয়েছে সিরুকে। পারিবারিক সূত্রমতে- সিরু ছিলেন সমাজহিতৈষী। যেখানে অন্যায় অনিয়ম দেখতেন সেখানেই রুখে দাঁড়াতেন। এছাড়া মাদকবিরোধী কার্যক্রমেও সক্রিয় ছিলেন। এ নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী ও মাদক কারবারিদের সঙ্গে তার শত্রুতা বাড়ে। যার পরিণতি ঘটে তার প্রাণনাশে। নিহতের এক বোন জানান, গাজীপুরের এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে যান সিরু। কিন্তু হঠাৎ একটি ফোন পেয়ে তিনি ঢাকায় রওনা হন এবং সন্ধ্যা ৭টার দিকেই বাসায় চলে আসেন। বাসায় না ঢুকেই আবার বেরিয়ে যায়। আর ফিরে আসেনি। সেটাই ছিল শেষ যাওয়া। র‌্যাবের মতে- এ হত্যাকা-ে মাদক কারবারিদের ইন্ধন থাকতে পারে। যদিও তার বড় পুত্র মোঃ মামুন বলেছেন, আব্বার শত্রুতা থাকার অনেক কারণ থাকতে পারে। তিনি বাড়ি নির্মাণে ইট, বালু, পাথর সরবরাহের কাজ করতেন। কয়েক বছর ধরে স্থানীয় কয়েকজনের কারণে কাজ করতে পারছিলেন না। বাধ্য হয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র কাজ করতেন। শেখেরটেক, ঢাকা উদ্যানসহ আশপাশের এলাকায় ঠিকাদারির কাজ করছিলেন তিনি। তারপরও তার পেছনে শত্রুরা ছিল সক্রিয়। আমরা বিশ্বাস করি, র‌্যাব বা পুলিশ যাদের গ্রেফতার করেছে তারা হয়তো বাবাকে খুন করেছে। কিন্তু তারা মূলহোতা নয়। তাদের সঙ্গে বাবার কোন স্বার্থের দ্বন্দ্বও ছিল না। গ্রেফতার সবাই আমার বয়সী। তাদের অন্য কেউ ব্যবহার করেছে। যারা তাদের দিয়ে আমার বাবাকে হত্যা করিয়েছে, তারা এখনও এলাকায় আছে। বুক ফুলিয়ে ঘুরছে। বাবার মৃত্যুর পরও হুমকি আসছে। তাদের গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সব বেরিয়ে আসবে।
×