ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টেক্সাসের দখল নিতে যাচ্ছে ডেমোক্র্যাট শিবির ॥ জরিপ

প্রকাশিত: ২২:৪০, ২৭ অক্টোবর ২০২০

টেক্সাসের দখল নিতে যাচ্ছে ডেমোক্র্যাট শিবির ॥ জরিপ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ আসন্ন মার্কিন নির্বাচন নিয়ে করা প্রায় সব জরিপে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন তার ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন। এবার নতুন এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্পের দল রিপাবলিকানদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত টেক্সাস অঙ্গরাজ্যেও ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন জো বাইডেন। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিবিএস নিউজের ‘সিক্সটি মিনিটস’ অনুষ্ঠানে ১৬টি মিথ্যা বা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়েছেন। ২৫ অক্টোবর প্রচারিত ৬০ মিনিটের সাক্ষাতকারটি বিশ্লেষণ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী টেলিভিশন সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে করোনার দৈনিক সংক্রমণের নতুন রেকর্ড হলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন আর ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সহযোগীর মধ্যে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়া সত্ত্বেও তিনি কোয়ারেন্টাইনে না গিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বাইডেন বলেছেন, ট্রাম্প মহামারীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। আর ট্রাম্পের জ্যেষ্ঠ সহযোগী ও হোয়াইট হাউসের চীফ অব স্টাফ মার্ক মিডোস স্বীকার করেছেন, ভ্যাকসিন বা থেরাপি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। খবর বিবিসি, সিএনএন ও রয়টার্সের। ধারণা করা হচ্ছে, এবার হয়তো দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ভেঙ্গে টেক্সাসের দখল নিতে চলেছে ডেমোক্র্যাটরা। অথচ সেই ১৯৭৬ সালের পর এখন পর্যন্ত কোন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেই ওই অঙ্গরাজ্যে জয় পায়নি ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা। এছাড়া ইলেকটোরাল কলেজের সংখ্যা বেশি হওয়ায় টেক্সাসের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। টেক্সাসের এক হাজার ১২ জন নিবন্ধিত ভোটারের মতামতের ভিত্তিতে ডালাস মর্নিং নিউজ ও ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের করা এক জরিপের ফল প্রকাশিত হয়েছে স্থানীয় সময় রবিবার। তাতে দেখা যাচ্ছে, ৪৮ শতাংশ মানুষ জো বাইডেনের পক্ষে এবং ৪৫ শতাংশ ট্রাম্পের পক্ষে তাদের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে ডালাস মর্নিং নিউজের করা আরেক নির্বাচনী জরিপে অংশ নেয়া টেক্সাসের ৩২ শতাংশ ভোটার বলেছিলেন, মহামারী কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষিত করার ব্যাপারে ট্রাম্পের ওপর তাদের আস্থা নেই। সবশেষ রবিবার প্রকাশিত জরিপে দেখা যাচ্ছে, সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ শতাংশে। তবে অনেকে অবশ্য অর্থনীতির দিক বিবেচনায় আস্থা রাখছেন ট্রাম্পের ওপরই। জরিপটি করা হয়েছে ট্রাম্প ও বাইডেনের শেষ বিতর্কের আগে; ১৩ থেকে ২২ অক্টোবর। যদি বাইডেন টেক্সাসে জয় পান তাহলে ১৯৭৬ এর পর কোন ডেমোক্র্যাট সেখানে জয়ের কৃতিত্ব দেখাবেন। টেক্সাসে মোট ইলেকটোরাল কলেজ সংখ্যা ৩৮। যদিও আগাম ভোটের জোয়ার শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। টেক্সাস রয়েছে শীর্ষে। নির্বাচন ৩ নবেম্বর। ইতোমধ্যে টেক্সাসের ৭০ লাখ মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। ২০১৬ সালে টেক্সাসে পড়া আগাম ভোটের চেয়ে এবারের সংখ্যাটা ৮০ শতাংশ বেশি। নির্বাচনের আরও এক সপ্তাহ বাকি রয়েছে। সংখ্যাটা আরও বাড়বে। ১৬টি মিথ্যা বলেছেন ট্রাম্প ॥ মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় ‘সিক্সটি মিনিটস’ অনুষ্ঠানটি। এতে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আনা হয়। তাদের নানা বিষয়ে সরাসরি প্রশ্ন করা হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে সম্প্রতি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সসহ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন ও তার রানিংমেট কমলা হ্যারিসের সাক্ষাতকারও প্রচার করে সিবিএস নিউজ। ২০ অক্টোবর সাক্ষাতকারটি ধারণ করার সময় সিবিএস নিউজ ও তাদের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান সিক্সটি মিনিটসকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট এবং অভদ্র’ বলে উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। পরে সাক্ষাতকার শেষ না করেই তিনি উঠে পড়েন। সিক্সটি মিনিটস অনুষ্ঠানের জনপ্রিয় উপস্থাপক সাংবাদিক লেসলে স্টাহল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাক্ষাতকার নিয়েছিলেন। সাক্ষাতকারে দেখা যায়, লেসলে স্টাহল প্রশ্ন করেন এক বিষয়ে, ট্রাম্প সেটি ঘুরিয়ে অন্য প্রসঙ্গে নিয়ে যান। ট্রাম্প বাইডেনের বিরুদ্ধে প্রশ্নের বাইরে গিয়ে জনসভায় ভাষণ দেয়ার মতো করে কথা বলতে থাকেন। ট্রাম্প বারবার কোভিড-১৯ পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সাংবাদিক লেসলে স্টাহল বারবার ট্রাম্পকে তার প্রশ্নে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলে তর্কটি ভিন্ন পর্যায়ে চলে যায়। ট্রাম্প ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বসেন। পরে সাক্ষাতকার শেষ না করেই উঠে পড়েন। ট্রাম্প বারবার অভিযোগ করেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনকে কখনই কঠিন প্রশ্ন করা হয় না। সব কঠিন প্রশ্ন রাখা হয় তার জন্য। বাইডেনকে জিজ্ঞেস করা হয়, কোন আইসক্রিম পছন্দ আপনার? অথচ আমাকে কঠিন কঠিন বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। নীল নদের বাঁধ নিয়ে ট্রাম্পের দাবি ॥ নীল নদের ওপর এক বিশাল জলবিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণ করছে ইথিওপিয়া। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, মিসর হয়তো একদিন ওই বাঁধ উড়িয়ে দেবে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এক জনসভায় ট্রাম্প এ দাবি করেন। তিনি বলেন, মিসর নীল নদের ওপর ওই বাঁধ মেনে নেবে না এবং হয়তো তারা সেই বাঁধ গুঁড়িয়ে দেবে। ট্রাম্পের সহযোগীর স্বীকারোক্তি ॥ এক সাক্ষাতকারে মিডোস দাবি করেছেন, একমাত্র ভ্যাকসিন ও থেরাপির মাধ্যমেই করোনাকে পরাজিত করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ৯ দিন আগেও যখন করোনার প্রকোপ বেড়ে চলেছে, তখনই এমন স্বীকারোক্তি দিলেন ট্রাম্পের এ সহযোগী। তিনি বলেন, আমরা মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব না। আমাদের এ সত্যটুকু নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যে আমরা ভ্যাকসিন, থেরাপি কিংবা অন্য কোন প্রতিষেধক পাব। চীফ অব স্টাফ আরও বলেন, আমাদের যথাযথ প্রতিষেধক নিশ্চিত করতে হবে। সেটা থেরাপি হতে পারে, ভ্যাকসিন হতে পারে কিংবা চিকিৎসা হতে পারে। নিশ্চিত করতে হবে যে এ ভাইরাসের কারণে মানুষ যেন না মারা যায়।
×