ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গাইবান্ধায় বিল জলাশয়ে চলছে দলবদ্ধ মাছ শিকার

প্রকাশিত: ২১:১৪, ২৭ অক্টোবর ২০২০

গাইবান্ধায় বিল জলাশয়ে চলছে দলবদ্ধ মাছ শিকার

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ২৬ অক্টোবর ॥ বিল জলাশয় পানি স্বল্পতায় গাইবান্ধার গ্রামাঞ্চলে এখন চলছে মাছ ধরার মৌসুম। সেইসঙ্গে বিল জলাশয়গুলোতেও শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী আর আনন্দময় ‘বৈদ’ নামের দলবদ্ধ মাছ শিকার হারিয়ে যাচ্ছে। সোমবার সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের ঝিনিয়ার বিল ও কুপতলা ইউনিয়নের নলিগলির বিলে মাছ শিকারের মধ্য দিয়েই এবার শুরু হয়েছে বৈদ নামে দলবদ্ধ মাছ শিকারের পর্ব। উল্লেখ্য, প্রাচীনকাল থেকেই এতদাঞ্চলে বৈদ নামের এই মাছ ধরা চলে আসছে। বৈদ নামে প্রকৃত অর্থ কি জানা না গেলেও এর বিশেষ শিঙ্গার ফুৎকার আর দলবদ্ধ মাছ ধরার আঞ্চলিক ভাষার সঙ্গে এই নামের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সাধারণত কার্তিক মাসের প্রথমদিক থেকে শুরু করে মাঘ মাস অবধি যখন বড় বড় বিল, নদী ও খালে পানি কম থাকে তখনি এই দলবদ্ধ বৈদ নামের মাছ ধরার প্রকৃত মৌসুম। জেলার ৬ উপজেলাতেই রয়েছে পৃথক পৃথক সৌখিন এই মাছ শিকারীর দল। বৈদ দলের আলোচনার ভিত্তিতে মাছ শিকারের নির্দিষ্ট জলাশয়, তারিখ, সময়, যাত্রার স্থান নির্ধারণ করে গ্রামের হাট-বাজারে ঢোল বাজিয়ে তা জানিয়ে দেয়া হয়। এই বৈদের দলের একজন দলনেতা থাকে। যার কাছে থাকে মহিষের শিং দিয়ে তৈরি বড় একটি বাঁশি। যাকে বলা হয় বৈদের শিঙ্গা। যা দিয়ে বিউগলের মতো উচ্চৈঃস্বরে শব্দ বের হয় এবং অনেক দূর থেকে তা শোনা যায়। নির্ধারিত স্থানে যথাসময়ে শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হয় বার বার। আর শিঙ্গার আহ্বানে নিজ নিজ পছন্দমতো মাছ ধরার নানা সরঞ্জাম নিয়ে সমবেত হতে থাকে মৎস্য শিকারীরা। সাধারণত পূর্ব নির্ধারিত বিল জলাশয়ে দলবদ্ধ হয়ে মাছ শিকার চলে দিনভর। এতে কোন বাধ্যবাধকতা নেই, যে কেউ এতে শামিল হতে পারে। সে কারণে একটি বৈদের দল যখন কোন বিল বা নদীতে একযোগে সারিবদ্ধভাবে মাছ শিকারে নামে তখন একটি বৈদের দলে মাছ শিকারীর সংখ্যা কমপক্ষে ৫শ’ থেকে দাঁড়ায় এক হাজার বা তারও বেশি হয়ে যায়। বৈদে সাধারণত মাছ ধরার সরঞ্জামের মধ্যে পলো, হ্যাংগার জালি, পলো জালি, হ্যাগা, মুঠ জাল, কোঁচা, ক্যাটা, তৌরা জাল, ঝাঁকি জাল ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বৈদে মাছ মারা চলে সকাল থেকে বিকেল ৫টা অবধি এক জলাশয় থেকে অন্য জলাশয়ে। এতে অনেক মাছ পায় আবার অনেকে একটি মাছও পায় না। কিন্তু তাতে বৈদ শিকারীদের কোন দুঃখবোধ নেই। কেননা এখানে দলবদ্ধভাবে মাছ ধরতে যাওয়ার আনন্দটাই মুখ্য, মাছ প্রাপ্তিটাই মূল বিষয় নয়।
×