ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ নেগেটিভ ও পজিটিভ বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:৪৫, ২৭ অক্টোবর ২০২০

সিডনির মেলব্যাগ ॥ নেগেটিভ ও পজিটিভ বাংলাদেশ

লেখা শুরু করার আগে একটা ছোট খবরে চোখ বোলাতে অনুরোধ করব আপনাদের। ভাল করে পড়ে দেখুন খবরটি। মির্জা ফখরুল বলেন, আইএমএফের রিপোর্টে দেখছি ভারতের জিডিপি ১০ শতাংশ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের জিডিপি বেশি করে দেখানো, বাংলাদেশের অর্থনীতি এত চমৎকার দেখানো হচ্ছে। এর পেছনে আরও অনেক উদ্দেশ্য আছে। কোন্ শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে বোকা বানানো হচ্ছে। একমাত্র আমাদের দেশের রাজনীতিতেই নেগেটিভিটি সবসময় বড় খবর। এটি একটি চালু দৈনিকের শীর্ষ কলামে বক্তার ছবিসহ ছাপা হয়েছে। সমালোচনা, বিতর্ক, বাদানুবাদ থাকার নামই গণতন্ত্র। দেশে মুখে যে যাই বলুক আসলে গণতন্ত্র কি তার কোন স্পষ্ট ধারণা নেই। কোন একটি সভ্য সমাজের সঙ্গে তুলনা করলেই শুনতে হয়- আমরা কি আর ব্রিটিশ, আমেরিকা না ভারত, অস্ট্রেলিয়া? তা বুঝলাম না। কিন্তু তুলনা তো এদের সঙ্গেই হবে। আর সে জায়গায় পৌঁছানোর কাজও জরুরী। বিষয়টা এমন- আমি ডাক্তারী মানি কিন্তু প্রেসক্রিপশন মানি না। গণতন্ত্রহীনতার কথা বলে মুখে ফেনা তোলা বিএনপি মহাসচিবও কিন্তু গণতন্ত্রের চর্চা করলেন নেগেটিভিটি দিয়ে। বাজারে ইস্যুর অভাব? দেশে ফোন করলেই শুনি আলু নেই, পেঁয়াজ নেই, চাল নেই। বাজারে আছে কিন্তু ঘরে নেই আর নেই। সাধারণ মানুষ কি উন্নয়ন ধুয়ে পানি খাবে? তার চাই বাঁচার রসদ। মির্জা ফখরুল তা নিয়ে বলেননি। বলেননি ধর্ষণ পরবর্তী বাস্তবতা আর সামাজিক প্রতিরোধহীনতা নিয়েও। তার হাতে তুরুপের যত তাস তার একটিও ব্যবহার করেননি তিনি। উল্টো প্রবৃদ্ধির মতো জটিল একটা বিষয় নিয়ে বললেন, যা মানুষের মাথার ওপর দিয়ে যাবে। সে কারণেই বিরোধী দল বা বিরোধিতার রাজনীতি মানুষের মনে কোন ভরসা দিতে পারছে না। পারবেও না। নেগেটিভ বাংলাদেশ আমরা কেন চাইব? কেন আমরা চাইব আমাদের জিডিপি বা প্রবৃদ্ধি নিচের দিকে যাক? বাংলাদেশের সব কৃষক, মজুর, শ্রমিক কি আওয়ামী লীগ করেন? তাঁদের ভেতরে কি বিএনপি, কমিউনিস্ট পার্টি, জাসদ দলের লোক নেই? সবাই মিলে ভালো থাকার জন্য যদি দেশ হয়, তাহলে এই শকুনী মন্তব্য কেন? সবাই জানেন বাংলাদেশের যে কোন সরকার এমনকি দুনিয়ার যে কোন দেশের সরকারই মূলত তাদের সাফল্যের কথা বলে। প্রচার করে। বিরোধীদের কাজ তার অসামঞ্জস্য বের করে ভুল ধরিয়ে দেয়া। এহেন মন্তব্যে তার কোন ছায়া দেখলাম না। সরকার বিরোধী দল সহ্য করতে পারছে না বা মানছে না এমন অভিযোগ আছে। সে অভিযোগগুলোর সমাধান কি? বিএনপি তো মধ্যবর্তী না ফ্রেশ নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে ব্যস্ত। ধরুন, যদি ফ্রেশ নির্বাচন হয়ও; আপনাদের কথামতো যেসব অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা তার কি হবে? আপনারা কোন্ জাদুবলে সেসব ঠেকাবেন জনাব? সবাই জানি নির্বাচন ও ভোট এ দুটি বিষয় এখন একাকার না। নির্বাচন হলেই ভোট হচ্ছে বা ভোট দিতে পারছে এটাও মানা কঠিন। রাতের ভোট নামেও একটা বিষয় বেশ চালু আছে। সেসব জায়গায় কি করবেন তার কোন ব্যাখ্যা ছাড়া এমন প্রতিবাদ বা কথা মূলত নেগেটিভ রাজনীতির বহির্প্রকাশ। সবসময় দেখি বাংলাদেশে পজিটিভ কাজের কদর কম। সেগুলো নিউজ হলেও বুঁদবুঁদের মতো। ধর্ষণের পর যেসব প্রতিবাদী ছাত্রছাত্রী মিছিল, সমাবেশ করে নোয়াখালী অভিমুখে রওনা হয়ে গেল যখন, তারা তখন পর্যন্ত শিরোনাম হয়নি। যে মুহূর্তে তারা ফেনীতে আক্রান্ত হলো সে সময় থেকেই মিডিয়া ঘটনাটা লুফে নিল। মিডিয়া পাশে না দাঁড়ালে তারা যে আরও আক্রমণ ও নাজেহালের শিকার হতো-এ কথা যেমন সত্য তেমনি সত্য তাদের ভূমিকা আগাগোড়া একরকম থাকলে হয়ত এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে মারতে দু’বার চিন্তা করত আক্রমণকারীরা। নেগেটিভ বাংলাদেশের আরও একটি বৈশিষ্ট্য ভাল সুসংবাদকে যেনতেন প্রকারে পরিবেশন। আপনি, আমি, সবাই জানি এবার ঈদে মানুষ কতটা গৃহবন্দী আর সুবোধ সময় কাটিয়েছিল। সে খবর যতটা না মিডিয়া ফোকাস করেছে, তার বেশি ছিল কখন, কোথায়, কিভাবে নিয়ম লঙ্ঘন হচ্ছিল। সতেরো কোটির দেশে আক্রান্ত করোনা রোগীর সংখ্যা কত সঠিকভাবে না জানলেও এটা বলতে দ্বিধা নেই গরিব ও নিম্নবিত্ত মানুষকে তেমনভাবে আক্রমণ করতে পারেনি বলেই মৃতের হার কম। আর তারা মরলে, বস্তি উজার হলে কেউ ধামাচাপা দিয়ে তা গোপন করতে পারত না। আপনি রোহিঙ্গাদের কথাই ধরুন। সে সব শরণার্থী শিবিরে মড়ক লাগলে কক্সবাজার বা টেকনাফ, উখিয়া কি ভাল থাকতে পারত? সে গল্পগুলো কিন্তু কেউ বলে না। লেখেও না। আমি যখন এ লেখা লিখছি তখন খবরে দেখলাম বিশ্বের ৭৬ শতাংশ ইলিশ মাছ আহরণের দেশ বাংলাদেশ। আমরা যারা সিডনিতে বসবাস করি আগ্রহ নিয়ে বসে থাকি, কখন পাব দেশী ইলিশ। এই আশা বিশ্ববাঙালীর। আমরা এই মাছ নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারি। আমাদের আনাজ, আমাদের পোশাণ্ড আমাদের বহু কিছু নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারি। কিন্তু আমাদের পছন্দ নূর। কোন্ নূর, যে কিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি। যার কথা শুনলে আপনার মনে হবে- কোন লেখাপড়া না জানা কোন মূর্খ ছেলে কথা বলছে। সম্প্রতি সেও ভাইরাল হয়েছে। কি বলে জানেন? তার অবস্থা নাকি খালেদা জিয়ার মতো হবে? এ কথায় যারা উল্লসিত তারা একবারও ভাবেনি খালেদা জিয়া কয়েক দফার প্রধানমন্ত্রী। তিনি মন্দে-ভালয় এদেশ শাসন করে গেছেন। এই পুঁচকে তাকে নিয়ে এমন কথা বলে যেন তাদের স্ট্যাটাস এক। আর আমরা নেগেটিভিটি গিলতে গিলতে মনে করি এটাই নিউজ। সববিষয়ে নেগেটিভ হতে হতে আমরা পজিটিভিটি হারিয়ে ফেলছি। নায়ক গায়ক লেখক শিল্পী নেতা অভিনেতা সবাই নেগেটিভ। পজিটিভ একমাত্র আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তাঁকে কখনও পারিনি, পারব না এমন কথা বলতে শুনেছেন? আর পজিটিভ আমাদের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। যারা পজিটিভ বলেই এত অসঙ্গতিতেও ভাল থাকে দেশ ও জাতি। আনন্দে থাকে। তাদের আশ্রয় যে মাটি, যে দেশ, সে বাংলাদেশও পজিটিভ। আমি সে দেশের সন্তান। তাই হতাশ হই না। ধৈর্য ধরি অপেক্ষা করি। [email protected]
×