ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

টিকার জন্য তহবিল

প্রকাশিত: ২০:২৩, ২৭ অক্টোবর ২০২০

টিকার জন্য তহবিল

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাত হানার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশেও আসন্ন শীতে এর প্রকোপ বাড়তে পারে। এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সর্বস্তরের জনসাধারণকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের সময়োচিত আহ্বান জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে সবাইকে ঘরের বাইরে যেতে, পথেঘাটে-যানবাহনে চলতে-ফিরতে, হাটবাজারে ও জনসভাস্থলে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিষয়টি দেখভাল করতে পরিচালিত হবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। যিনি মাস্ক পরবেন না, তার জন্য রয়েছে শাস্তিমূলক জরিমানার ব্যবস্থা। এর জন্য প্রয়োজনে আইন প্রণয়নও হতে পারে। মসজিদ-মন্দির-জনসমাগমের স্থানে সামাজিক দূরত্ব রক্ষাসহ স্বাস্থ্যবিধি পালনের কথা বলা হয়েছে। সরকারী সেবা পেতে এখন থেকে মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশনাটিও ইতিবাচক। প্রায় ৮০টি সরকারী হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে সর্বক্ষণ অক্সিজেন সরবরাহসহ হাই-ফ্লো ন্যাজাল অক্সিজেন দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সর্বোপরি নেয়া হয়েছে কোভিড-১৯ প্রতিরোধকারী টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ। বিশ্বের যে দেশই করোনার টিকার সফল প্রয়োগ করে সাফল্য পাক না কেন, জরুরীভিত্তিতে সেই দেশ থেকেই টিকা কিনে তা বাংলাদেশের জনগণের জন্য আমদানি ও প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে শুধু টিকা কেনার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। উপরন্তু বিশ্বব্যাংকের কাছে চাওয়া হয়েছে আরও ৫০ কোটি ডলার, বাংলাদেশী টাকায় এর পরিমাণ চার হাজার ২০০ কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংক আইএমএফের ভার্চুয়াল বার্ষিক সভা ২০২০-এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংককে জনসংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের জন্য ন্যায্যতার সঙ্গে দ্রুত এই ঋণ মঞ্জুরের আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, করোনার শুরুতে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে দিয়েছে ১০ কোটি ডলার। এর বাইরেও দেশের অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নেও ঋণ দিচ্ছে সংস্থাটি। করোনার টিকা সংগ্রহ তথা আমদানি, কেনা, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিতরণের কাজে বিশ্বব্যাংকের এই সহায়তার প্রয়োজন পড়বে। সরকার চায় দেশের সব মানুষের করোনার টিকা প্রাপ্তি যেন নিশ্চিত হয়। করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে কার্যকর একটি ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরির তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে বিশ্বব্যাপী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টিকার উদ্ভাবন ও অগ্রগতির হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে নিয়মিত। তাদের মতে, এ পর্যন্ত ৪২টি টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলমান। এই তালিকায় সর্বশেষ সংযুক্ত হলো বাংলাদেশের নামও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় যে ১১৫টি টিকা পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পূর্বাবস্থায় রয়েছে সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেকের তিনটি টিকার নামও আছে। এটি অবশ্যই একটা গর্ব করার বিষয়। তবে বাংলাদেশের টিকার প্রয়োগে অনুমোদনের প্রয়োজন পড়বে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এবং যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএরও। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে চীনের সিনোভেকের টিকার পরীক্ষামূলক ট্রায়াল অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কেননা, চীনের প্রতিষ্ঠানটি এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ অর্থায়নের প্রস্তাব করেছে, প্রথমে সমঝোতা স্মারকে যা ছিল না। অন্যদিকে স্বাস্থ্য সচিব জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাপী অনুমোদন পেলে দেশে আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত তিন কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। এর জন্য সরকার অর্থও বরাদ্দ রেখেছে আলাদাভাবে। বিশ্বব্যাংকও এগিয়ে আসবে অর্থায়নে। অক্সফোর্ডের টিকা তৈরি হবে ভারতেও। সুতরাং যে টিকাই শেষ পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও এফডিএর অনুমোদন পাক না কেন, করোনার টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে বাংলাদেশ। তবে সর্ববৃহৎ বৈশ্বিক আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিসংঘের ৭৫তম সাধারণ অধিবেশনে ভার্চুয়াল ভাষণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনা মহামারীর ভ্যাকসিন যে দেশই প্রথম আবিষ্কার করুক না কেন, সেটিকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে সব দেশের জন্য এর প্রাপ্তি সহজসাধ্য সুলভ ও নিশ্চিত করা আবশ্যক। করোনা ভ্যাকসিনের মেধাস্বত্ব হতে হবে বৈশ্বিক, যাতে সহজে ও সুলভে সব দেশ ও জাতির জন্য এর প্রাপ্তি নিশ্চিত করা যায়। জাতিসংঘসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে অবশ্যই।
×