ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভূমি জটিলতায় আটকে আছে রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পের কাজ

প্রকাশিত: ১৬:০৯, ২৬ অক্টোবর ২০২০

ভূমি জটিলতায় আটকে আছে রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পের কাজ

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর ॥ ভূমি অধিগ্রহণের টাকা ছাড় না পাওয়ায় জামালপুর শহরের রেলওভারপাস নির্মাণ কাজের গতি মন্থর হয়ে পড়েছে। এর ফলে একদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে যেমন লোকসান গুণতে হচ্ছে, অন্যদিকে শহরের প্রধান সড়কে যানবাহন চলাচলে ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। করোনা পরিস্থিতিতে প্রকল্পটিকে তালিকায় নি¤œ অগ্রাধিকার ভুক্ত হওয়ায় ভূমি অধিগ্রহণের টাকা ছাড় পেতে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপত বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ। শহরের প্রধান সড়কের স্টেশন রোড ও মধুপুর রোডে রেলক্রসিং রয়েছে ফুলবাড়িয়া এলাকায়। রেলক্রসিং এলাকাটিকে স্থানীয়দের কাছে গেইটপাড় এলাকা নামে পরিচিত। জামালপুর স্টেশন থেকে দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন এবং সরিষাবাড়ী রুটে ট্রেন চলাচলের কারণে দিনের বেশির ভাগ সময় রেলক্রসিং এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এর ফলে যানবাহন চলাচল বিঘিœত হয় এবং পথচারীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা যানবাহনের জটলার মধ্যে আটকে থাকা লাগে। সময়ের অপচয় ছাড়াও মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটে। গেটবেরিয়ার থাকা সত্ত্বেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথচারীদের তাড়াহুড়ো করে রেলক্রসিং পারাপর হতে দেখা যায়। ‘যানজটমুক্ত শহর চাই’ শহরবাসীর এই দাবির প্রেক্ষিতে বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের প্রচেষ্টায় গেইটপাড় এলাকায় ৭৮০ মিটার রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। রেলওভারপাসের দুই পাশে পাকা সড়ক নির্মাণ করা হবে। ভূমি অধিগ্রহণ ও রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৩৪৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুধু মাত্র ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ২৯১ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে বাকী ৫৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারিতে তমা কনস্ট্রাকশন, মেসার্স জামিল ইসলাম ও মেসার্স মইন উদ্দিন বাঁশি যৌথভাবে কাজটি শুরু করে। ২০২০ সালের জুনে কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। সরজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, রেলক্রসিংয়ের দক্ষিণে মধুপুর রোডে জাহিদা সফির মহিলা কলেজের সম্মুখ পর্যন্ত রেলওভারপাসের চারটি পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে চলছে গার্ডার নির্মাণের কাজ। তবে রেলক্রসিংয়ের উত্তরে স্টেশন রোডে এখনও পর্যন্ত একটিও পিলার ও গার্ডার নির্মাণ করা হয়নি। রেলওভারপাস প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলাতে শহরের লম্বাগাছা থেকে জাহিদা সফির মহিলা কলেজ গেইট পর্যন্ত সড়কের বেহাল অবস্থা দেখা যায়। যত্রতত্র নির্মাণ সামগ্রী পড়ে থাকায় যানবাহন চলাচল এবং পথচারীদের ভোগান্তির মাত্র চরমে পৌঁছেছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় তত্ত্বাবধায়ক মো. রবিউল আলম বলেন, ‘কাজে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। সড়ক ও জনপদ বিভাগ এখনো কাজের জায়গা বুজিয়ে দিতে পারেনি। এরপরও যেখানে জায়গা ছিল, সেখানে কাজ করা হচ্ছে। ফলে পুরোদমে কাজ করা যাচ্ছে না। এর ফলে এই কাজে লোকসান গুণতে হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত কাজ শেষ করে চলে যেতে।’ সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের জায়গার জন্য তিনটি এলএ কেসের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম শুরু করা হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় এলএ কেসের টাকা ভূমির মালিকদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় এলএ কেসের ২৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ছাড় দেওয়া হয়নি। বাকি সব টাকা ইতোমধ্যে ছাড় দেওয়া হয়েছে। রেলক্রসিংয়ের উত্তর পাশে স্টেশন রোডের পূর্ব পাশের দোকানপাট রয়েছে। তাদেরকে অধিগ্রহণের টাকা দিতে না পারায় জায়গা খালি করা সম্ভব হচ্ছে না। করোনার কারণে প্রকল্পটি নি¤œ অগ্রাধিকার ভুক্ত হওয়ায় টাকা ছাড় দেওয়া হয় নি। ভূমি অধিগ্রহণের টাকা ছাড় দেওয়ার জন্য একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। শীঘ্রই টাকা ছাড় পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী। সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণের টাকা ছাড় ছিল না নি¤œ অগ্রাধিকার প্রকল্পের ক্যাটাগরিতে থাকার কারণে। সেই সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। আমরা আশা করছি শীঘ্রই টাকা ছাড় দিতে পারবো।’ তিনি বলেন, ‘জায়গা পেলে আরেকটা ডাইভারশন রোড করে দিয়ে আমরা মাঝখানে কাজ করতে পাবো। জায়গার জন্য আমরা সময় মতো কাজ করতে পারছি না। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হচ্ছে, এই কাজে তাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। তারা উল্টো চাপ দিচ্ছে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করতে। অন্যথায় তারা ক্ষতিপূরণ দাবি করে বসবে।’ জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হক বলেন, ‘সওজ কর্তৃপক্ষ টাকা ছাড় না দেওয়ায় ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। সওজকে টাকা ছাড় দেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।’ বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি জামালপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মতিয়র রহমান বলেন, ‘লম্বাগাছ থেকে গেইটপাড় পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ব্যবসায়ী রয়েছেন। রেলওভারপাস নির্মাণ কাজের জন্য আমাদের ব্যবসা প্রায় বন্ধ হওয়া উপক্রম হয়েছে।’ পৌরসভার পাঁচ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাংবাদিক মোস্তফা বাবুল বলেন, ‘শহরের রেলগেইট এলাকায় একটি রেলওভারপাস নির্মাণের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলাম। আমাদের সেই দাবি পূরণ হতে চলেছে। কিন্তু নির্মাণ কাজ সময় মতো শেষ না হওয়ায় শহরবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
×