ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভাগ্যবান মাহমুদুল্লাহর হাতেই শিরোপা

প্রকাশিত: ২২:৩৪, ২৬ অক্টোবর ২০২০

ভাগ্যবান মাহমুদুল্লাহর হাতেই শিরোপা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ভাগ্যদেবীর সহায়তায় ফাইনালে ওঠা এবং বড় ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতার প্রতিফলন দেখা গেছে রবিবার বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের ফাইনালে। তরুণ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে হতাশ করে শিরোপা জয়ের হাসি হেসেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। রবিবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে মাহমুদুল্লাহ একাদশ ৭ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে বিধ্বস্ত করে নাজমুল একাদশকে। সুমন খানের বোলিং তোপে বিপর্যস্ত নাজমুল একাদশ প্রথম ব্যাট করে ৪৭.১ ওভারে গুটিয়ে যায় ১৭৩ রানে। সুমন নেন ৩৮ রানে ৫ উইকেট। জবাবে লিটন দাস ও ইমরুল কায়েসের দ্রুততম জোড়া অর্ধশতকে মাত্র ২৯.৪ ওভারে ৩ উইকেটে ১৭৭ রান তুলে শিরোপা নিশ্চিত করে মাহমুদুল্লাহ একাদশ। বিধ্বংসী ইমরুল নাঈম হাসানকে ছক্কা হাঁকিয়ে বিজয় নিশ্চিত করে অপরাজিত থাকেন ৫৫ বলে ১ চার, ৬ ছক্কায় ৫২ রানে। শীর্ষস্থান নিয়ে ফাইনালে আসা ফেবারিট নাজমুল একাদশের তীরে এসে তরী ডুবল। মাহমুদুল্লাহ হাতে তুললেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সঙ্গে ১৫ লাখ টাকা, নাজমুলরা পেয়েছেন রানার্সআপ ট্রফি ও সাড়ে ৭ লাখ টাকা পুরস্কার। লীগপর্বে দুইবার হারের মোক্ষম প্রতিশোধ নিয়ে শেষ হাসিটা হাসলেন মাহমুদুল্লাহ। ফাইনাল বলেই হয়তো পুরো আসরে দুর্দান্ত বোলিং করা দুই পেসার রুবেল হোসেন ও এবাদত হোসেন চৌধুরীকে বেশ সতর্কভাবে মোকাবেলা করেছেন টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা নাজমুল একাদশের ব্যাটসম্যানরা। তবু রুবেল প্রথম ওভারেই আঘাত হানেন, বোল্ড করে দেন ওপেনার সাইফ হাসানকে (৪)। শান্ত ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন চলতি সিরিজে প্রথমবারের মতো অধিনায়কোচিত ইনিংস উপহার দেয়ার। কিন্তু অপরপ্রান্তে দুর্ভাগ্য যেন সঙ্গী হতে থাকে। ওপেনার সৌম্য সরকার চোখের সমস্যার কারণে ওপেনিংয়ে নেমেও মাঠের বাইরে আসেন। এরপর শান্ত ও অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম জুটি বাঁধেন। তবে অন্যতম ভরসা মুশফিক হতাশ করেন এদিন। ডানহাতি পেসার সুমনের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে মাত্র ১২ রানেই সাজঘরে ফেরেন তিনি। পরে আবার সৌম্য ক্রিজে এসে শান্তর সঙ্গে যোগ দেন। কিন্তু সুমন আরেকটি আঘাত হানেন, এবার ৫ রানেই সাজঘরে চলে যান সৌম্যও। একই ওভারের (১৫তম ওভার) চতুর্থ বলে ফর্মে থাকা তরুণ আফিফ হোসেন ধ্রুবকে (০) উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরতে বাধ্য করেন সুমন। তার এই বড় ৩টি আঘাতে দলীয় ৪৫ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বিপর্যস্ত হয় নাজমুল একাদশ। ধীরস্থির শান্ত ৫৭ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলে ফিরে গেছেন মেহেদী হাসান মিরাজের অফস্পিনে। এরপর তৌহিদ হৃদয় ও ইরফান শুক্কুর প্রতিরোধ গড়ে ষষ্ঠ উইকেটে ৭০ রান যোগ করেন মাত্র ৮২ বল থেকে। হৃদয় ৫৩ বলে ২ চারে ২৬ রান করে রিয়াদের শিকার হওয়ার পর ফিরতি স্পেলে এসে আবার ঝলসে ওঠেন সুমন। নাঈম হাসান (৭) ও নাসুম আহমেদকে (৩) শিকার করে আর বেশিদূর এগোতে দেননি নাজমুলদের। ১০ ওভারে মাত্র ৩৮ রান দিয়ে সুমন তুলে নেন ৫ উইকেট। মাত্র ১৯ ম্যাচের লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে ৩ বার ইনিংসে ৪ উইকেট নিতে পারলেও ৫ উইকেটের দেখা এই প্রথম পেলেন তিনি। বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ স্বীকৃত কোন আসর হলে তার লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং হিসেবে এটি লিপিবদ্ধ হতে পারত। কিন্তু ক্যারিয়ারসেরা বোলিংটার কোন রেকর্ড থাকবে না। বিপর্যয়ের মুখে শুক্কুর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন দ্রুত রান বাড়িয়ে নেয়ার। তিনি চলতি আসরের দ্বিতীয় অর্ধশতক পেয়ে যান মাত্র ৪৬ বল থেকেই। তবে সুমন আবার বিধ্বংসী হয়ে ওঠার কারণে তিনিও কিছুটা ধীর হয়ে যান। শুক্কুর চলতি আসরে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি হাঁকালেও শেষ পর্যন্ত ৭৭ বলে ৮ চার, ২ ছক্কায় সাজঘরে ফিরেছেন ৭৫ রানে। রুবেল ৮ ওভারে ২ মেডেনে ২৭ রানে ২ ও এবাদত ৮.১ ওভারে ১ মেডেনে ১৮ রানে ১ উইকেট নেন। মাত্র ১৭৩ রানে গুটিয়ে যায় নাজমুল একাদশ। ভাগ্যদেবী রাউন্ড রবিন লীগপর্বের শেষ ম্যাচ থেকেই সহায় হতে শুরু করেছিল রিয়াদদের জন্য। তামিম একাদশ জিতলেই ফাইনাল খেলা হতো না। কিন্তু তাদের হারে ভাগ্যবান রিয়াদ তার দল নিয়ে ফাইনালে অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ পান দুরন্ত নাজমুল একাদশের। লীগপর্বে দুইবারের মোকাবেলাতেই মাহমুদুল্লাহদের হারিয়েছিলেন নাজমুলরা। এবার ফাইনালে বোলারদের দারুণ নৈপুণ্যে সহজ লক্ষ্য পায় তারা। সেই লক্ষ্য ছোঁয়ার ম্যাচে জ্বলে ওঠেন লিটন ও ইমরুল। পুরো আসরে ব্যর্থ লিটন খেলেন ৬৯ বলে ১০ চারে ৬৮ রানের একটি কার্যকর ইনিংস। যদিও দলীয় ৬৬ রানেই ২ উইকেট হারিয়েছিল তারা। মুমিনুল হক (৪) ও মাহমুদুল হাসান জয় (১৮) ফিরে গিয়েছিলেন সাজঘরে। কিন্তু লিটনের মারকুটে ব্যাটিংয়ে রানের গতিটা ঠিক ছিল মাহমুদুল্লাহদের। তৃতীয় উইকেটে লিটন-ইমরুল ৬৩ রানের জুটি গড়েন মাত্র ৭১ বল থেকে। এতেই জয়ের কাছে পৌঁছে যায় তারা। লিটন সাজঘরে ফিরে গেলেও ইমরুল তাণ্ডব শুরু করেন। ৩০তম ওভারের চতুর্থ বলে নাঈমকে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে টুর্নামেন্টে নিজের প্রথম অর্ধশতক পাওয়ার পাশাপাশি দলকেও জয় পাইয়ে দেন। ১২২ বল বাকি থাকতেই মাত্র ৩ উইকেটে লক্ষ্য পেরিয়ে যায় মাহমুদুল্লাহরা, জিতে নেয় শিরোপা। ইমরুল ৫৫ বলে ৫৩ আর রিয়াদ ১১ বলে ৩ চার, ১ ছক্কায় ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন। ম্যাচের সেরা ব্যাটসম্যান শুক্কুর, সেরা বোলার ও ম্যাচসেরা সুমন, সেরা ফিল্ডার নুরুল হাসান সোহান, টুর্নামেন্টের সেরা এক সেঞ্চুরি ও ২ অর্ধশতকে ২১৯ রান করা মুশফিক, টুর্নামেন্টের সেরা ব্যাটসম্যান ৭১.৩৩ গড়ে ২১৪ রান করা শুক্কুর, আসরের সেরা বোলার ৫ ম্যাচে ১২ উইকেট নেয়া রুবেল, আসরের সেরা ফিল্ডার সোহান, প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটার রিশাদ হোসেন এবং সবচেয়ে সেরা কামব্যাকের পুরস্কার পেয়েছেন পেসার তাসকিন আহমেদ। সংক্ষিপ্ত স্কোর ॥ নাজমুল একাদশ ইনিংস- ১৭৩/১০; ৪৭.১ ওভার (শুক্কুর ৭৫, শান্ত ৩২, হৃদয় ২৬; সুমন ৫/৩৮, রুবেল ২/২৭)। মাহমুদুল্লাহ একাদশ ইনিংস- ১৭৭/৩; ২৯.৪ ওভার (লিটন ৬৮, ইমরুল ৫৩*, রিয়াদ ২৩*; নাসুম ২/৪৮)। ফল ॥ মাহমুদুল্লাহ একাদশ ৭ উইকেটে জয়ী। ফাইনালের ম্যাচসেরা ॥ সুমন খান (মাহমুুদুল্লাহ একাদশ)। টুর্নামেন্ট সেরা ॥ মুশফিকুর রহিম (৫ ম্যাচে ২১৯ রান; নাজমুল একাদশ)।
×