ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এ এক ইচ্ছাপত্র

প্রকাশিত: ২২:৩১, ২৬ অক্টোবর ২০২০

এ এক ইচ্ছাপত্র

তৌফিক অপু ॥ কবির সুমন সম্প্রতি তার ইচ্ছাপত্র (উইল) নিজে হাতে লিখে পোস্ট করেছেন ফেসবুকে। তিনি সেই পত্রে ইচ্ছে করেছেন যে তাঁর মৃত্যুর পর তার সকল সৃষ্টিকর্ম যেন ধ্বংস করে ফেলা হয়। না করলে নাকি তাকে অপমান করা হবে। সুমনের ইচ্ছাপত্র বা উইল মনে করিয়ে দিয়েছে বিখ্যাত কিছু মানুষের আশ্চর্য উইলের কথা। এর আগে এমন ইচ্ছা আরও অনেকেই করে গেছেন। তাদের মধ্যে কাফকা, এমিলি ডিকিনসন ইত্যাদির নাম বলা যায়। যেমন যুগান্তকারী টেলিভিশন সিরিজ ‘স্টার ট্রেক’-এর স্রষ্টা জিন রডেনবেরি। মহাকাশপ্রেমী এই মানুষটি শুধুমাত্র সাড়াজাগানো স্পেস এ্যাডভেঞ্চারের জন্ম দিয়েই ক্ষান্ত হননি। তাঁর শেষ ইচ্ছা ছিল, তাঁকে মহাকাশেই সমাধি দেয়া হোক। ১৯৯১-এ রডেনবেরি মারা যান। আর ১৯৯২-এ তাঁর দেহাবশেষ ‘কলম্বিয়া’ নামের এক মহাকাশযান মরফত পাঠানো হয় মহাকাশে। কার্যত তিনিই প্রথম মানব, যাঁকে মহাকাশে ‘সমাধি’ দেয়া হয়েছিল। প্রেমের কবিতার অনন্য দিশারী, চিরজীবী নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়র তাঁর উইলে যাবতীয় সম্পত্তি দান করে যান কন্যাকে। খালি একটি খাট, যেটিকে তিনি তাঁর ‘দ্বিতীয় প্রিয় শয্যা’ বলে মনে করতেন, সেটি দিয়ে যান তাঁর স্ত্রী কে। ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো তাঁর উইলে উল্লেখ করেন, তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর অপ্রকাশিত রচনার একটি অক্ষরও যেন প্রকাশ করা না হয়। কঠোরভাবে মানা হয়েছিল সেই উইল। ‘হিস্ট্রি অব সেক্সুয়ালিটি’ নামের মহাগ্রন্থের তিনটি খণ্ড তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়। তিনি নাকি পরবর্তী খণ্ডগুলোও লিখেছিলেন। কিন্তু উইলমাফিক সেগুলো অপ্রকাশিতই থেকে যায়। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই তাদের ইচ্ছা পালন করা হয় নাই, তাদের কর্ম আরও বেশি যত্নে সংরক্ষিত হয়েছে। আমি মনে করি, এসব ইচ্ছে মূলতই সৃজনশীল মানুষের আত্মাভিমান, কিছুটা ভান, আর কিছুটা অমরত্বের লোভ। তারা যেহেতু জানে যে তারা একটা মার্গীয় অবস্থানে উঠে গেছেন সেহেতু তারা এমন বাসনা প্রকাশ করলে তাদেরটা আরও যত্ন নিয়েই রক্ষা করা হবে। তাই এমন করেন। না হয় তারা সত্যিকার অর্থেই যদি চাইতেন তাদের সকল সৃষ্টিকর্ম ধ্বংস হোক তবে তা জীবদ্দশাতেই করে যেতেন। এমনই হয়। যেমন কামিল ক্লদেল উন্মত্ত হয়ে তার কাছে থাকা তার স্টুডিওর সকল ভাস্কর্য নিজ হাতে ধ্বংস করেছিলেন। এখন তার যা কাজ পাওয়া যায়, খুব কমই পাওয়া যায়, তা হয়তো ওইসব কেউ কিনে ব্যক্তিগত সংগ্রহে রেখেছিল, না হয় কোন মিউজিয়ামের সংগ্রহে ছিল।
×