ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রত্যয় জসীম

উন্নত জীবনের জন্য চাই

প্রকাশিত: ২২:২২, ২৬ অক্টোবর ২০২০

উন্নত জীবনের জন্য চাই

সকলের জন্য আবাসন নিশ্চিতকরণসহ বাসযোগ্য ও নিরাপদ আবাসস্থলের বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘ বিশ্ব বসতি দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশ্বে অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব বসতি দিবস উদযাপিত হয়।। দ্রুত নগরায়ণের ফলে বাংলাদেশের মতো উন্নয়ন অভিমুখী দেশের নগরীসমূহের বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও বড় বড় শহরের পাবলিক স্পেসগুলো ক্রমশ কমে আসছে। কোথাও কোথাও বেদখল হয়ে যাচ্ছে। উন্নত নগর উন্নত জীবন গড়তে হলে একটি উন্নত আধুনিক নগরায়ণ নীতিমাল নিশ্চিত করতে হবে। ১৯৫০ সালে বিশ্ব জনসংখ্যার শতকরা মাত্র ৩০ ভাগ ছিল নগরবাসী। ১৯৯৫ তে এ হার হয়েছে শতকরা ৪৫ ভাগ। ধারণা করা হচ্ছে বর্তমান শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের দু’ভাগ (প্রায় ৬শ’ কোটি মানুষ) নগরসমূহে বসবাস করে। উন্নয়নশীল বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যেমন বেশি তেমনি নগরবাসী মানুষের সংখ্যাও ক্রমবর্ধমান। ফলে আগামী তিন দশকে বিশ্বের নগরবাসী মানুষের হিসেবের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল বিশ্ব এগিয়ে থাকবে। বাংলাদেশের সর্বমোট ৫২২টি শহর ও নগরে জনসংখ্যার প্রায় ২৩.৩৯ ভাগ বসবাস করে। দেশের মোট নগর জনসংখ্যা প্রায় ২৯ মিলিয়ন। নগর জনসংখ্যার দেশব্যাপী বিভাজন অত্যন্ত অসম। বাংলাদেশের নগর জনসংখ্যার এক বিশাল অংশ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী এই চারটি প্রধান নগরে বসবাস করে। বাকি ৪০ ভাগের বসবাস মাঝারি ও ছোট ছোট শহরগুলোতে। ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা প্রায় ১৫ মিলিয়ন। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ৪ মিলিয়নের বেশি। তৃতীয় বৃহত্তম শহর খুলনার জনসংখ্যা প্রায় এক মিলিয়নের মতো। চতুর্থ জনবহুর শহর রাজশাহীর জনসংখ্যা প্রায় সাত লাখ। দেশে লক্ষাধিক জনসংখ্যার শহর আছে ১৭টি। ৫০ হাজার থেকে এক লাখ জনসংখ্যার শহর প্রায় ৩০টির মতো। ১৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার জনসংখ্যার শহর আছে প্রায় ৮০টি এবং ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার জনসংখ্যার শহর আছে ৩৯০টির মতো। নগর জনসংখ্যার এই অসামঞ্জস্য বিস্তার ভারসাম্যহীন নগরায়ণের পরিচয় বহন করে। অপরদিকে নগর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সব শহরে সমান নয়। যেখানে নগর জনসংখ্যার জাতীয় বৃদ্ধির হার ৩.৫ শতাংশ, সেখানে শুধুমাত্র ঢাকার জনসংখ্যা বাড়ছে ৫ শতাংশেরও অধিক হারে। একাধিক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় জনসংখ্যা বিস্ফোরণের ফলে ২০২০ সাল নাগাদ ঢাকা হবে পৃথিবীর ১০টি জনবহুল নগরীর একটি। তখন জনসংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ। ১৯৯৬ সালে হ্যাবিটাট-২ মহাসম্মেলন থেকে জাতিসংঘ ‘একবিংশ শতাব্দীর জন্য বাসযোগ্য নগর’ গড়ার বিশ্বব্যাপী আহ্বান ও দিকনির্দেশনা প্রদান করলেও উন্নয়নশীল দেশেসমূহ তা অর্জনে অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশের শহর ও নগরসমূহে কর্মসংস্থান ও আবাসন কার্যক্রমসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই নগর উন্নয়ন কর্মসূচীসমূহ জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠেছে। উদাহরণ হিসেবে আবাসন, বিদ্যুত ও পানি সরবরাহ, পয়নিষ্কাশন, শিল্প উন্নয়ন, ব্যবসা বাণিজ্য, কমিউনিটি অর্থাৎ গণসুবিধাদি পরিবহন এবং পরিবেশ ইত্যাদি বিভিন্ন পৌর উপাদানসমূহের কথা উল্লেখ করা যায়। এ সকল পৌর-উপাদানসমূহের সঠিক সমন্বয় ও বাস্তবায়নের মধ্যেই নিহত রয়েছে নগর উন্নয়ন কর্মসূচীর সার্থকতা আর এ সার্থকতাই নিশ্চিত করতে পারে একটি নন্দিত ও নিরাপদ নগর, তাতেই নিহত রয়েছে উন্নত ও সুন্দর জীবনযাপনের হাতছানি। বাংলাদেশের নগরাঞ্চলে ভূমি ব্যবহার ও বসতি স্থাপনের নীতিমালার অভাবে নগরগুলো অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে এবং অপরিকল্পিতভাবে নগর সম্প্রসারণ হচ্ছে। এক্ষেত্রে ঢাকা মহানগরী এগিয়ে আছে। অপরিকল্পিত নগর কখনই নিরাপদ নয়। এই প্রেক্ষাপটে ‘উন্নত নগর উন্নত জীবন’ বিষয়টি তাৎপর্য অত্যন্ত ব্যাপক। উন্নত নগর উন্নত জীবন বাস্তবায়নে নিম্নলিখিত পাঁচটি কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। *জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন *মানব সম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ *স্থিতিশীল অর্থনৈতিক সুযোগসমূহকে উৎসাহিত করা * রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি করা *সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত করা উন্নত নগরীর অনুষঙ্গসমূহ একটি নগর গড়ে উঠার পেছনে যেমন অনেকগুলো কারণ বিরাজমান তেমনি সেই নগরীর সম্প্রসারণ, কর্মকাণ্ডের পরিব্যাপ্তি ও আকর্ষণ ক্ষমতা তথা উন্নত নগরায়ণ আনেকগুলো অনুষঙ্গের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত; অন্যতম কিছু ধারণা হলো- * নগরের ভৌগোলিক অবস্থান * প্রাকৃতিক পরিবেশ * জনসংখ্যার আকার ও সামাজিক পরিবেশ * অর্থনৈতিক অবস্থা * কর্ম সংস্থানের সুযোগ * ভৌত ও সেবা সুবিধাদি এবং নগর পরিকল্পনা * বসতি বিন্যাস ও গৃহায়ণ পরিস্থিতি * যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থা * আইনশৃঙ্খরা পরিস্থিতি * নগর ব্যবস্থাপনা ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নীতিমালার প্রয়োগ ইত্যাদি।
×