ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রম ও শান্তির নোবেল-২০২০

প্রকাশিত: ২২:১৪, ২৬ অক্টোবর ২০২০

বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রম ও শান্তির নোবেল-২০২০

২০২০ সালে অর্থাৎ, এই বছরে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রম। আল জাজিরায় দেখলাম এই সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বেসলী এই প্রাপ্তিতে বিস্মিত আনন্দ নিয়ে বলেছেন ৩ বার- ওয়াও, ওয়াও, ওয়াও। তার অনুভূতি আমার অনুভূতিতে মিশিয়ে আমিও বলেছি- ওয়াও। ডেভিড বেসলী ২০১৭ এর এপ্রিল থেকে বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রমের নির্বাহী পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এই পদে যোগ দেয়ার আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলিনা রাজ্যের নির্বাচিত গবর্নর ছিলেন। গত বছর ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বিশ্ব সংসদীয় নেটওয়ার্কের বার্ষিক সভায় এই নেটওয়ার্কের পরিচালক পর্ষদের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলাম আমি। এই সভায় অন্যান্য আমন্ত্রিত বক্তার মধ্যে ছিলেন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর নির্বাহী পরিচালক বিসলী। মনোযোগ দিয়ে ১৭০টি দেশ থেকে আগত আমরা সাংসদরা শুনেছিলাম তার কথা। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর কাজের রূপরেখার পটভূমিকায় বেসলী বলেছেন যে, পৃথিবীব্যাপী খাদ্যের সুসম বিতরণের ভিত্তি হিসেবে খাদ্য উৎপাদনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে অধিকতর উৎপাদনশীল এবং ভূমির মালিকানা, ব্যবহার ও উৎপাদিত খাদ্যের সুষম বিতরণ নিশ্চিত না করা গেলে বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রম জাতিসংঘের অন্যতম সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দীর্ঘ মেয়াদে সফল হবে না। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর পরিচালনায় এ ছিল বস্তুনিষ্ঠ নতুনতর উপলব্ধি। তার এই অবস্থান নিয়ে আমরা বেশকজন সাংসদ- কানাডার পার্সি ডাউনে, মরক্কোর লাসেন হাদ্দাদ, পর্তুগালের রিকার্ডো বাতিস্তা, মালয়েশিয়ার মোহাম্মদ আকিন, কসভোর ভোজসা ওসমানী ও উগান্ডার নান্দালা মাফাফি অনেকক্ষণ আলোচনা করি। এই আলোচনায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জিয়োরগিয়েভাও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। বিশ্বখাদ্য কার্যক্রম জাতিসংঘের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৯৬১ সালে বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা দূরীকরণ ও খাদ্য নিরাপত্তা বিধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন শান্তির কার্যক্রমে খাদ্য কর্মসূচীর পরিচালক জর্জ ম্যাকগোভার্ন এই কার্যক্রমটিকে সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠাকরণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তখন থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে এর কর্মকাণ্ড বিস্তৃত ও ফলপ্রসূ করে সমকালে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সহায়তা দেয়ার প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি কার্যত স্বীকৃতি পেয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফ এ ও) ও কৃষি উন্নয়নের আন্তর্জাতিক তহবিল (ইফাড) এর সহযোগে কাজ করে থাকে। এর কেন্দ্রীয় অফিস রোমে এবং ৮০টি দেশে এর প্রতিনিধি অফিস বিদ্যমান। গত বছর এই প্রতিষ্ঠান পৃথিবীর ৮৮ দেশে প্রায় ১০ কোটি দুঃস্থ জনগণকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রম আফ্রিকার সুদানে নুবিয়ান জনগণকে ১৯৬০ এর দশকের প্রথম দিকে মহাবিপদের মধ্যেও দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষা করেছে। সমকালে এর সার্বিক তৎপরতার ২/৩ অংশ সংঘাত সংকুল দেশ ও এলাকায় প্রযুক্ত হচ্ছে। এর সঙ্গে সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিভিন্ন দেশের সাহায্য সহায়তা প্রতিষ্ঠান যথা- ডি এফ আই ডি, ইউরোএইড, ইউ এস এইড কাজ করে আসছে। এদের বাইরে অসরকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছে সেভ দি চিলড্রেন, ক্যাথলিক রিলিফ সার্ভিসেস ও নরওয়েজিয়ান রিফুয়েজী কাউন্সিল। বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রম মূলত বিভিন্ন সরকার থেকে প্রাপ্ত অনুদান নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে এই প্রতিষ্ঠানের বাজেট ছিল ৭.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ২.৫ বিলিয়ন ডলার দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে এসেছিল ১.১ বিলিয়ন ডলার। এর বাইরে উল্লিখিত অসরকারী প্রতিষ্ঠান, বহুজাতিক কর্পোরেশন ও ব্যক্তিগত উৎস থেকে এই প্রতিষ্ঠান অবশিষ্ট সহায়তা পেয়েছে। অর্থায়নের এরূপ আনুপাতিক প্রকৃতি এখনও সেরকমই আছে। এই সহায়তার সিংহভাগ নগদে সংগৃহীত হয়ে খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশসমূহ থেকে খাদ্য কেনা ও খাদ্য ঘাটতির দেশ ও এলাকায় বিতরণে প্রযুক্ত করা হয়। অবশ্য দৃষ্ট বা অনুভূত প্রয়োজনের তুলনায় এরূপ সহায়তা অপ্রতুল। সাম্প্রতিককালে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া ও ইয়েমেনে যুদ্ধ না থামাতে পারলেও বিশ্ব খাদ্য সংস্থা প্রশংসনীয়ভাবে গৃহযুদ্ধ উৎসারিত বুভুক্ষা অনেকাংশ প্রশমিত করতে সমর্থ হয়েছে বলা চলে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার সমকালীন কার্যাবলীর বিষয়ে নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলীর সঙ্গে, বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ-নির্বাহী সহ আমাদের আলোচনা ক্রমে অনুযোগ উঠেছিল যে, জাতিসংঘের এই প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত মূলত খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশসমূহের উদ্বৃতাংশের একটি অংশ সেসব দেশের চাষীদের কল্যাণার্থে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উৎপাদনকারীদের জন্য লাভজনক মূল্যে সংগ্রহ করে দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশসমূহে বিতরণ করছে। কিন্তু খাদ্য-ঘাটতির, দেশসমূহের উৎপাদন বাড়ানোর পথে যেসব প্রাতিষ্ঠানিক বিঘ্ন ও অবকাঠামোমূলক অসম্পূর্ণতা বিদ্যমান, সেসব দূর করার লক্ষ্যে কোন সমন্বিত পদক্ষেপ শনাক্ত করতে বা নিতে পারেনি। আলোচনায় আমরা বলেছি যে, পৃথিবীব্যাপী খাদ্যের অভাব দূর করার জন্য প্রথম প্রয়োজন হবে লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশাল পরিমাণ অনাবাদী চাষযোগ্য জমি চাষের আওতায় আনা। এসব এলাকায় কৃষি সম্প্রসারিত করতে হলে প্রয়োজন হবে চাষযোগ্য ভূমির উন্নয়ন, প্রকৃত চাষীদের মাঝে এসব ভূমির মালিকানার বিন্যাশ সাধন এবং বন্যানিয়ন্ত্রণ ও সেচ প্রসারণের অবকাঠামো নির্মাণ। এই লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহকে এই সংস্থা থেকেও পরামর্শ, সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সহযোগিতা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেয়া বিধেয় হবে। আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে যে, পৃথিবীর বিদ্যমান আবাদ যোগ্য ভূমি পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট এবং এই সত্যটি স্বীকার না করে ইতিমধ্যে কয়েকটি দেশে উৎপাদিত উদ্ধৃত খাদ্যের খাদ্য ঘাটতি দেশ বা এলাকায় বিতরণ সময়ের ব্যাপ্ত পরিসরে সকল দেশের জন্য খাদ্যের অভাব দূর করতে পারে না। দ্বিতীয়ত, যেসব এলাকায় ভূমি মালিকানা ও ব্যবহারবিধি উৎপাদন বাড়ানোর প্রতিকূল সে সব এলাকায় যথাপ্রয়োজন আইনী ও অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার সাধন করা জরুরী। সামন্তবাদী অগণতান্ত্রিক দেশসমূহে এখন পর্যন্ত প্রকৃত চাষীর অনুকূলে ভূমি মালিকানা প্রসারিত বা নিশ্চিত করা হয়নি। তেমনি সামন্তবাদী ভূমি মালিকানার সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে প্রকৃত চাষীর বা কৃষি শ্রমিকের অনুকূলে মালিকানা কিংবা স্বত্ব নিশ্চিতকরণ। তা না হলে ব্যক্তি চাষের আওতায় উৎপাদন বাড়ানো কঠিন হবে। এদিক দিয়ে আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার সব দেশ সঠিক পথ অনুসরণ করছে বলা চলে না। এই ক্ষেত্রে ও লক্ষ্যে বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রম এফ.এ.ও এবং ইফাডের কার্যাবলী সাহায্য প্রত্যাশী দেশসমূহের অভ্যন্তরীণ নীতির সঙ্গে সুসমন্বিত করে এগিয়ে যাওয়া উন্নয়ন অনুগামী হবে। একই সঙ্গে যেসব দেশ প্রত্যক্ষভাবে শস্য বা খাদ্য সহায়তা প্রত্যাশী, তাদের ভূমি মালিকানা সম্পর্কিত আইনাবলী উৎপাদনমুখী করা সাহায্য প্রাপ্তির শর্ত হিসেবে আরোপ করা লক্ষ্যানুগ হবে। এসব শর্ত পূরণ না করে খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশ থেকে বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রমের আওতায় বুভুক্ষু দেশে খাদ্যের সরবরাহ ঈপ্সিত উন্নয়ন ও পরবির্তন পরিপন্থী হবে। তৃতীয়ত, উন্নততর প্রযুক্তি ও প্রসারণশীল কৃষিঋণ ও অন্যান্য উৎপাদনের উপকরণাদি সরবরাহ করার ব্যবস্থা করে দীর্ঘ মেয়াদে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। সমকালে যেসব দেশ খাদ্যে উদ্বৃত্ত, সেসব দেশ কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ এবং কৃষি ঋণসহ সার ও বীজের প্রতুল ও সময়ানুগ সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। এদের আদলে খাদ্য ঘাটতি সাহায্যপ্রত্যাশী দেশসমূহে প্রযুক্তির প্রবর্তন ও বিচ্ছুরণ এবং কৃষিঋণ ও উপকরণ সরবরাহকরণের কাঠামো নির্মাণ ও প্রসারণ প্রয়োজন। বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রমের আওতায় সহায়তা প্রত্যাশী দেশসমূহকে লাগসই প্রযুক্তি আহরণ ও প্রবর্তন এবং উপকরণ সরবরাহের কাঠামো নির্মাণ বা সংস্কারের উৎসাহী কিংবা বাধ্যকরণে অন্যান্য আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা ও সমর্থনের কাঠামোয় বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রম ফলপ্রসূভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। প্রযুক্তির লভ্যতা মেয়াদীভাবে বাড়ানো এবং অন্যান্য কৃষি উপকরণের প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণ, খাদ্য-উদ্বৃত্ত ধনী দেশের উন্নয়ন ও খাদ্য ঘাটতি দেশের প্রগতির সঙ্গে বাড়বে। চতুর্থ বিষয় হিসেবে আমরা বলেছি যে, বিশ্বায়নের কাঠামোয় ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক কার্যক্রমের আপেক্ষিকতায় অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র কৃষি উৎপাদকের স্বার্থ সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বিশেষজ্ঞগণ এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর নির্বাহী পরিচালক এসব বিষয়ে নীতিগতভাবে আমাদের সঙ্গে একমত হন। অবশ্য তারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন গবেষণা ও প্রযুক্তির ফল দ্রুততার সঙ্গে প্রয়োগ এবং কৃষি বিপণনে দেশজ ও আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ও পদ্ধতি সংস্কারের বিষয়ে। আলোচনায় আমি গুরুত্ব দিয়েছি এই ৪টি লক্ষ্য সামনে রেখে খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, (এফএও), কৃষি উন্নয়নের আন্তর্জাতিক তহবিল, (ইফাড) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর কর্মে ও তৎপরতায় অধিকতর সমন্বয় সাধনের ওপর। এক্ষেত্রে এসব আন্তর্জাতিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে সংশ্লিষ্ট করা উত্তম হবে বলে মত প্রকাশ করেছি। জোর দিয়ে বলেছি যে, যেখানে ও যখন খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব এবং বিশ্বব্যাপী এই লক্ষ্যে সঠিক কার্যক্রম গ্রহণ ঈপ্সিত, সেখানে বিশ্ব খাদ্য সংস্থাকে অধিকতর সফলতা অর্জনের জন্য বিতরণের অবকাঠামো উৎপাদনমুখী করার ওপর অধিকতর দৃষ্টি দিতে হবে। যে ক্ষেত্রে প্রয়োজন সেক্ষেত্রে সাহায্যপ্রত্যাশী দেশকে সাহায্য প্রাপ্তির শর্ত হিসেবে প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রমের সমকালীন ব্যবস্থাপনাকে প্রশংসা করার সঙ্গে আমরা এ কথাটিও বলেছি যে, এর ব্যবস্থাপনায় ক্রমাগত ভাবে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশসমূহের প্রতিনিধিত্ব প্রসারিত করা প্রয়োজন। আমরা আন্তর্জাতিক তহবিল ও বিশ্বব্যাংক সমষ্টির সকল প্রতিনিধির সামনে এও বলেছি যে, বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রমের নির্বাহী পরিচালক পদে ১৯৮২ থেকে এই সময় পর্যন্ত ছেদহীনভাবে কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকগণ নিযুক্তি পেয়েছেন, নিম্ন বা মধ্য আয়ের দেশের কেউ পাননি। আলোচনায় নির্বাহী পরিচালক বিসলিকে আমাদের এসব সুপারিশ অনুযায়ী কাজ করার জন্য একমত ও ইচ্ছুক দেখে আমরা আশান্বিত হয়েছি। উল্লেখ্য, বেসলী শান্তি গবেষণা তহবিল (পিস রিসার্চ এর এনডোমেন্টে) পরিচালক পর্ষদের সদস্য হিসেবে ২০১১ থেকে কাজ করে আসছেন। তিনি ২০০৩ সালে সিনেটর এ্যাডওয়ার্ড কেনেডির হাত থেকে জন এফ কেনেডি প্রফাইল ইন-কারেজ পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি প্রখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুল অব গবর্নমেন্টের (কেনেডি সরকারের বিদ্যালয়) ফেলো হিসেবে গণতন্ত্রের উন্নততর ও সমতাধর্মী বিকাশের ওপরও কাজ করেছিলেন। তাদের সঙ্গে আলোচনার শেষ পর্যায়ে আমি বাংলাদেশকে খাদ্য ঘাটতি দেশ থেকে খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশে উঠিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সাফল্য তুলে ধরেছি। বলেছি, প্রগতিশীল ভূমি মালিকানার সঙ্গে বাংলাদেশ উৎপাদন অনুকূল ভূমি ব্যবস্থাপনাকে মিলিয়ে দিয়েছে, অধিকতর উৎপাদনের জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ সম্প্রসারণ, প্রযুক্তির প্রয়োগ, কৃষি উপকরণের লভ্যতা বাড়ানো ও কৃষি পণ্যের সুষম বিপণন প্রযুক্ত ও উন্নয়ন করে ঈপ্সিত ফল পেয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সফলতা অনুসরণ করে আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার অনেকাংশে সামন্ত প্রথাকেন্দ্রিক কৃষির ব্যবস্থাপনা সুসংহত হতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছি। এই প্রেক্ষিত জেনে ও উপলব্ধি করে অন্যান্য আলোচকবৃন্দ আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকে সাধুবাদ জানান। এই প্রসঙ্গে বেসলী বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রমের আওতায় ২০০৮ সাল থেকে আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার কতিপয় দেশে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী কর্তৃক প্রবর্তিত ও অনুসৃত ‘প্রগতির জন্য ক্রয়’ শিরোনামের ৫ বছর মেয়াদী কর্মসূচীর বিবরণ দেন। এই কর্মসূচীর আওতায় ক্ষুদ্র কৃষকগণকে কৃষি বাজারে প্রবেশের সুযোগ বাড়িয়ে কৃষি বাজারে প্রতিযোগীর ভূমিকা অর্জনের সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন যে, এই কার্যক্রমের আওতায় এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় প্রায় ৮ লাখ ক্ষুদ্র কৃষক উন্নততর কৃষি উৎপাদন, উত্তোলিত ফসলের ব্যবস্থাপনা, শস্যের গুণগত উৎকর্ষ রক্ষাকরণ, সামষ্টিক বিপণন ও কৃষির জন্য অর্থায়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রমের প্রাক্কলন অনুযায়ী এর ফলে প্রায় ৩৬৬০০০ টন অতিরিক্ত কৃষি উৎপাদন হয়েছে, যা ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য ১৫৮ মিলিয়ন মার্কন ডলার পরিমাণ আয় বৃদ্ধি করেছে। আমি ও কসভোর প্রতিনিধি এই কার্যক্রম সম্পর্কে আরও বিস্তৃতভাবে জানা ও বোঝার আগ্রহ জানিয়েছি। সাম্প্রতিককালে ১২ মিলিয়ন ইয়েমেনীকে প্রধানত হাউতি গোত্র নিয়ন্ত্রিত এলাকায় খাদ্য সরবরাহ করে মানবেতর বুভুক্ষা থেকে বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রম কর্তৃক রক্ষা করার বিষয়েও আমরা অবগত হয়েছি। বেসলী বর্ণিত ২০১৭ সালে হাইতির ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকায় নারীদের মাধ্যমে খাদ্য বিতরণের ব্যতিক্রমী প্রক্রিয়া আমাদের সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ২০২০ সালে বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রমকে শান্তি পুরস্কার দেয়ার ৩টি কারণ নোবেল কমিটি বিবেচনা করেছে বলে বলা হয়েছে। প্রথমত, কমিটির বিবেচনায় পৃথিবীব্যাপী বুভুক্ষার বিরুদ্ধে এই প্রতিষ্ঠান সংগ্রাম করেছে। দ্বিতীয়ত, খাদ্য সহায়তার মাধ্যমে সংঘাত জর্জরিত এলাকায় এই প্রতিষ্ঠান শান্তি স্থাপনে অবদান রেখেছে এবং তৃতীয়ত, কমিটির বিবেচনায়, বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রম বুভুক্ষাকে যুদ্ধ ও সংঘাতের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধকরণে অগ্রবর্তী শক্তির ভূমিকায় কার্যশীল হয়েছে। সন্দেহ নেই, এই তিন ক্ষেত্রে বিশেষত বুভুক্ষাকে যুদ্ধ ও সংঘাতের হাতিয়ার হিসেবে প্রযুক্ত না করার ক্ষেত্রে বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে এখনও সফল হয়নি। হয়নি বলেই এ সকল ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের পথে বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রম সকল দেশের সমর্থনের দাবিদার হয়ে এগিয়ে চলেছে। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সফলতার পটে বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রমের সঙ্গে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টতা ও আলোচনায় এ ৩টি বিষয়েও অধিকতর ও স্থায়ী সফলতা অর্জনের জন্য আমরা আমাদের মত ও সমর্থন দিয়ে যেতে পারব। লেখক : সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী
×