ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লাভজনক মৌসুমি ফল মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে কৃষক

প্রকাশিত: ২২:০০, ২৬ অক্টোবর ২০২০

লাভজনক মৌসুমি ফল মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে কৃষক

আবু জাফর সাবু, গাইবান্ধা ॥ গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের পুটিমারী গ্রামে আদর্শ কৃষক আমির হোসেন বাড়ি সংলগ্ন ২ বিঘা ১৮ শতাংশ জমিতে ২শ’ ৭০টি মালটা গাছের চারা লাগিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। তদুপরি মালটা চাষে এই সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে তিনি অন্য কৃষকদের কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, যা থেকে স্থানীয় কৃষকরা অর্থকরী ফসল হিসেবে মালটা চাষে আগ্রহী হচ্ছে। কৃষক আমির হোসেন জানান, তিনি পিরোজপুর জেলা থেকে ৩শ’ মালটার চারা ক্রয় করে নিয়ে আসেন। প্রতিটি চারার মূল্য পড়ে ২শ’ ৭০ টাকা। বৈশাখ মাসে এই চারা ওই জমিতে রোপণ করেন। এই চারা লাগানোর পর ২৭০টি মালটা গাছ এতদাঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ সহনীয় হিসেবে তার যত্নে বেড়ে ওঠে। ফলন ভাল হলে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার পর্যন্ত মালটা ধরে এবং বছরে দু’বার করে ফল ধরে। প্রথমবার উৎপাদন বেশি হলেও পরের বছর কিছুটা কমে। আরও জানা গেছে, মালটা গাছে পৌষ মাসে ফুল হয় এবং মাঘ ও ফাল্গুন মাসে মালটা ধরে। সেগুলো পেকে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আবার ওই গাছেই ফুল ফুটে এবং আশ্বিন মাস থেকেই গাছে আবার নতুন করে মালটা ধরে। আশ্বিনের শেষ ভাগ থেকে কার্তিক মাসের মধ্যেই তা পাকতে শুরু করে। এই মালটাগুলোর গায়ের ছাল সবুজ থাকতেই সেগুলো খাওয়া যায়। এ সময় ভেতরটা হালকা হলুদ রঙের হয় এবং খুব মিষ্টি হয়। পরে মালটাগুলোর গায়ের রং হালকা হলুদ হয়ে যায় এবং সেগুলো আরও বেশি মিষ্টি হয়। বাজারে যেসব বিদেশী মালটা পাওয়া যায় সেগুলোর চেয়ে কৃষক আমির হোসেনের উদ্ভাবিত মালটার মিষ্টি ও গুণাগুণ অনেক বেশি। কৃষক আমির হোসেন জানান, এ বছর বাগান থেকে প্রতিকেজি মালটা ১শ’ ২০ থেকে ১শ’ ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। যা বাজারে প্রতিকেজি ২২০ থেকে ২৪০ টাকা মূল্যে বিক্রি হয়ে থাকে। এই মালটা চাষ করেই কৃষক আমির হোসেন শুধু অর্থনৈতিকভাবেই স্বাবলম্বী হননি অন্য কৃষকদের পতিত জমিতে বিকল্প অর্থকরী ফসল হিসেবে মালটা চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন। নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে জৈব সার, কেঁচো থেকে তৈরি ভার্মি কম্পোস্ট জমিতে প্রয়োগ করে তিনি মালটা গাছগুলোকে সজীব করে তোলেন। এছাড়া পোকা মাকড় রোগ ও বালাই নিধনে নিজস্ব পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তার নিজস্ব রোগবালাই দমন পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন গাছের রস মিশিয়ে নিজের উদ্ভাবিত কীটনাশক। কৃষক আমির হোসেন তার উদ্ভাবিত কীটনাশকে ১৫ লিটার পানিতে ১৫ ফোঁটা কেরোসিন তেল ও বিষকাঁটালি নামের এক প্রকার গাছের রস মিশান এবং তা মালটা গাছে স্প্রে করে পোকা দমন করেন। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি রোগবালাই ও পোকা দমনে সফল হয়েছেন। এছাড়া রাসায়নিক সারের পরিবর্তে তিনি ব্যবহার করেন কেঁচো, গরুর গোবর, কচুরিপানার সঙ্গে পরিত্যক্ত জমিতে ধনচে চাষ করে বিশেষ কায়দায় ওই ধনচে গাছের চারা জমিতে মিশিয়ে তা থেকে তৈরি করা হয় কম্পোস্ট ও জৈব সার। মাগুরায় বারি মাল্টার নতুন নতুন বাগান ॥ সঞ্চয় রায় চৌধুরী, মাগুরা থেকে জানান, জেলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বারি মাল্টা-১ ও ২ চাষ। গড়ে উঠছে নতুন নতুন বাগান। মাগুরা সদর উপজেলার রূপাটি গ্রামের কৃষক ওলিয়ার রহমান ৫ বিঘা জমিতে দুইটা বাগানে মাল্টা চাষ করেছেন। এ বছর মাল্টার ভাল ফলন হয়েছে। বাগান থেকে মাল্টা বিক্রি শুরু হয়েছে। এ বছর ৪ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করছেন। আগামী বছর থেকে যা দ্বিগুণ ৩ গুণ হারে বাড়বে।
×