ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্প আগাম ভোট দিলেন ফ্লোরিডায়, ড্রাইভ-ইন র্যালিতে বাইডেন

প্রকাশিত: ২১:৫০, ২৬ অক্টোবর ২০২০

ট্রাম্প আগাম ভোট দিলেন ফ্লোরিডায়, ড্রাইভ-ইন র্যালিতে বাইডেন

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এক সপ্তাহেরও বেশি সময় আগে ফ্লোরিডায় আগাম ভোট দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় শনিবার ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে তার মার এ লাগো স্টেইটের কাছে একটি পাঠাগারে আগাম ভোট দেন ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারে নিউ হ্যাম্পশায়ারে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেখানেও তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেনের বিরুদ্ধে আক্রমণ অব্যাহত রাখবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া পেনসিলভানিয়ায় ‘ড্রাইভ ইন র্যালি’ করেছেন জো বাইডেন। খবর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, রয়টার্স ও এএফপি’র গত বছরের সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প তার স্থায়ী ঠিকানা ও ভোটার নিবন্ধন পরিবর্তন করে নিউইয়র্ক থেকে ফ্লোরিডায় নিয়ে গিয়েছিলেন। হোয়াইট হাউসে ফেরার টিকেট পেতে হলে ট্রাম্পকে কথিত ‘ব্যাটল গ্রাউন্ড’ বা ‘দোদুল্যমান’ অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডায় অবশ্যই জয় পেতে হবে। নিজের ভোট দেয়ার পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, আমি ট্রাম্প নামের এক ব্যক্তিকে ভোট দিয়েছি। এর মাধ্যমে ট্রাম্প ৩ নবেম্বরের নির্বাচনের আগে আগাম ভোট দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের ৫ কোটি ৬৫ লাখ নাগরিকের সঙ্গে যোগ দিলেন। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে যুক্তরাষ্ট্রে এবার আগাম ভোট পড়ার হার রেকর্ড গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ফ্লোরিডায় ভোট দেয়ার পর ট্রাম্প দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের তালিকায় থাকা নর্থ ক্যারোলাইনা, ওহাইও ও উইসকনসিনে প্রচারে অংশ নিতে সেখানে যাচ্ছেন। এসব অঙ্গরাজ্যে তিনটি জনসভায় যোগ দেবেন তিনি। অন্যদিকে জো বাইডেন ও তার স্ত্রী জিল বাইডেনও এদিন আরেক দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়ায় দুটি প্রচার অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও বাইডেনের পক্ষে ফ্লোরিডায় প্রচার চালাবেন। নির্বাচনের ১০ দিন আগেই আগাম ভোট পড়ার গতি অব্যাহত থাকলে এক শতাব্দিরও বেশি সময় পর এবার সর্বোচ্চ ভোট পড়তে পারে বলে জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকশন প্রোজেক্টের দেয়া তথ্য। ভোট পড়ার এই হার ট্রাম্প ও বাইডেনের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার চিত্র মেলে ধরার পাশাপাশি নির্বাচনের দিন জনাকীর্ণ ভোট কেন্দ্র নিয়ে লোকজনের মধ্যে বিদ্যমান উদ্বেগও প্রকাশ করেছে। স্পষ্টই করোনা মহামারীর এই সময় ভোট কেন্দ্রের ভিড় এড়াতে চাইছেন তারা। জাতীয় পর্যায়ের জরিপগুলোতে দেখা গেছে বাইডেন সুস্পষ্ট ব্যবধানে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন, কিন্তু যেসব অঙ্গরাজ্যের ফলের ওপর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জয়-পরাজয় নির্ভর করছে সেই ব্যাটল গ্রাউন্ডগুলোতে দুই প্রার্থীর ব্যবধান সামান্য। নিউ হ্যাম্পশায়ারে যাচ্ছেন ট্রাম্প ॥ নির্বাচনী প্রচার চালাতে নিউ হ্যাম্পশায়ারে যাচ্ছেন ট্রাম্প। সেখানেও তিনি বাইডেনের বিরুদ্ধে আক্রমণ অব্যাহত রাখবেন। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ওই অঙ্গরাজ্যে তিনি অল্প ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন। ৩ নবেম্বরের নির্বাচনের আর মাত্র ৯ দিন বাকি। এই শেষ পর্যায়ের প্রচারের মাধ্যমে বাইডেনের বিরুদ্ধে কিছুটা জায়গা করে নেয়ার জন্য প্রধান ব্যাটেল গ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যগুলো চষে বেড়াচ্ছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলো যেগুলো নির্বাচনের জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে দিতে পারে, জনমত জরিপে সেগুলোতে দুই প্রার্থীর মধ্যে তীব্র পতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে নিউ হ্যাম্পশায়ারকে শীর্ষ পর্যায়ের ব্যাটেল গ্রাউন্ড হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না। ২০১৬ সালে সেখানে হিলারি ক্লিনটনের কাছে প্রায় ৩০০০ ভোটে হেরেছিলেন ট্রাম্প আর এবার অধিকাংশ জনমত জরিপে এখানে বাইডেন অনেক ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। যদিও জনগণের মনোভাব পরিবর্তন করে পরিস্থিতি নিজের পক্ষে আনার জন্য ট্রাম্পের হাতে সময় বেশি নেই। ট্রাম্প ও বাইডেনের প্রচার ॥ নিজ অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডায় আগাম ভোট দেয়ার পর ট্রাম্প নর্থ ক্যারোলাইনা, ওহাইও ও উইসকনসিনে প্রচার চালিয়েছেন। এসব রাজ্যে তিনটি জনসভায় দেয়া ভাষণে তিনি করোনাভাইরাস মহামারীর সমাপ্তি দৃশ্যমান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং বাইডেন আরও কোভিড-১৯ জনিত বিধিনিষেধের পক্ষ নিয়ে চাকরির বাজারকে হুমকির মুখে ফেলতে পারেন বলে হুঁশিয়ার করেছেন। ওহাইওতে ট্রাম্প বলেছেন, তার প্রচার শিবির ভাল করছে এবং তিনি জনমত জরিপের ফল নিয়ে উদ্বিগ্ন নন। আমাদের হাতে ১০ দিন সময় আছে আর কিছুই আমাকে উদ্বিগ্ন করে না। রবিবার নিউ হ্যাম্পশায়ারে গিয়ে ম্যানচেস্টার শহরে জনসভা করবেন ট্রাম্প। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রচারণায় তিনি একদিনে পাঁচটি জনসভা করতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। আর বাইডেন পেনসিলভানিয়ায় দুটি জায়গায় প্রচার চালিয়েছেন। রবিবার কোন প্রচার সূচী রাখেননি তিনি। এ দিনটিতে বাইডেন সাধারণত গির্জায় যান। পেনসিলভানিয়ায় প্রচারকালে ফের দেশের স্বাস্থ্য সঙ্কটকে গুরুত্ব না দেয়ার জন্য ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন বাইডেন এবং শীতের মাসগুলোতে মহামারীর তীব্রতা আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন। করোনাকে নিয়ন্ত্রণে ট্রাম্পের নেয়া উদ্যোগের উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আমাদের পথ পরিবর্তন না করলে অন্ধকার শীতকালের দিকে এগিয়ে যাব। বাইডেন ও ওবামার প্রচার ॥ নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি আছে। এ অবস্থায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং জো বাইডেন করোনা মোকাবেলা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করেছেন। আর আশাবাদী ট্রাম্প জোর নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাইডেনের সঙ্গে ব্যবধান কমিয়ে আনতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তার তৎপরতা হোঁচট খাচ্ছে নির্দয় বাস্তবতার কাছে। অধিকাংশ ভোটার মনে করছেন, ট্রাম্প দক্ষতার সঙ্গে করোনা মোকাবেলা করতে পারেননি। পেনসিলভানিয়ায় ‘ড্রাইভ ইন র্যালি’ করেছেন জো বাইডেন। সেখানে এক সমাবেশে তিনি বলেন, ট্রাম্প বলে যাচ্ছেন করোনা চলে যাচ্ছে। করোনার সঙ্গে কিভাবে বসবাস করতে হয় তা আমরা শিখছি। এর সঙ্গে কিভাবে বসবাস করতে হয় তা আমরা শিখছি না। আপনি আমাদের বলছেন কিভাবে এর সঙ্গে মরতে হয় তা শিখতে। আর এটি ভুল। সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা ফ্লোরিডার মিয়ামিতে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্যকালে ট্রাম্প প্রশাসনের করোনা মোকাবেলার সমালোচনা করেন। তিনি করোনায় আক্রান্ত ট্রাম্পের হাসপাতালে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ট্রাম্প হঠাৎ করেই আমাদের সবাইকে রক্ষা করতে যাচ্ছেন না। এমনকি তিনি নিজেকে রক্ষায়ও প্রাথমিক কোন পদক্ষেপ নিতে পারেননি। ওবামা শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের নিন্দা জানাতে ট্রাম্পের ব্যর্থতা, প্রকাশ্যে মিথ্যে বলাসহ নানা বিষয়ে প্রেসিডেন্টের ব্যর্থতাকে তুলে ধরে বাইডেনকে ভোট দিতে সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান। নর্থ ক্যারোলাইনায় তপ্ত রোদে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, তারা চাচ্ছেন আপনাদের হতাশ করে দিতে। চার বছর আগের চেয়ে এবারের জনমত জরিপের ফল অনেক ভাল। এবারের নির্বাচন হলো ট্রাম্পের ‘সুপার রিকভারি’ বনাম ‘বাইডেন ডিপ্রেশনের’। এর মধ্যে কোন একটি বেছে নিতে হবে আপনাদের। তারা বলছেন, আমি খুবই আশাবাদী। এটি সত্য। কারণ আমি দেশকে ভালবাসি। তাই আমরা আশাবাদী। আগামীতে আমাদের দেশ আগের যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল থাকবে। দায় নিতে চান না ট্রাম্প ॥ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে প্রায় সব জাতীয় জনমত জরিপে বাইডেনের চেয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পিছিয়ে আছেন। নির্বাচনে হারের শঙ্কা তার মাথায়। এ অবস্থায় নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে নানা বিষয়ে অভিযোগ তুলছেন। চেষ্টা করছেন চারপাশের সবকিছুকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে। এমনকি শেষ বিতর্কের আগে সঞ্চালককেও বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছেন তিনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সবই তিনি করছেন পরিকল্পিতভাবে। ট্রাম্প নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে বেশ আগে থেকেই সংশয় জোরালো করার চেষ্টা করছেন। ভোট জালিয়াতি, ডাকযোগে আগাম ভোট নিয়ে ইতোমধ্যে নানা বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক কমিশন, সাংবাদিক এমনকি তার প্রশাসনের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন।
×