ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আলু পেঁয়াজের দাম আরও কমেছে

প্রকাশিত: ২১:৫০, ২৬ অক্টোবর ২০২০

আলু পেঁয়াজের দাম আরও কমেছে

এম শাহজাহান ॥ দেশের নিত্যপণ্যের বাজারে আরও কমেছে আলোচিত আলু-পেঁয়াজের দাম। দাম কমে আসায় আতঙ্ক দূর হয়ে বিশেষ এই দুই পণ্যে স্বস্তি ফিরে আসছে ভোক্তাদের। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন নিত্যপণ্যের বাজারে জাত ও মানভেদে প্রতিকেজি আলু ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একসপ্তাহ আগে আগেও এই আলু কিনতে ৫৫-৬০ টাকা গুনতে হয়েছে ক্রেতাদের। তবে এখনও সরকার নির্ধারিত দাম পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহের মধ্যে নির্ধারিত ৩৫ টাকায় নেমে আসবে আলুর দাম। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। তবে সুখবর হলো, আমদানিকৃত কয়েক লাখ টন পেঁয়াজ এখন দেশে এসে পৌঁছেছে। এছাড়া চলতি মাসের শেষ নাগাদ আরও কয়েক লাখ টন পেঁয়াজ ঢুকবে দেশে। আমদানিকৃত পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়। দাম আরও কমার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, আলুর কোন সঙ্কট নেই দেশে। আগামী তিন মাস পর্যন্ত চলার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণে আলু দেশে মজুত রয়েছে। আর ভারত থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় স্বল্প সময়ের জন্য পেঁয়াজের ওপর চাপ বাড়লেও দেশী পেঁয়াজ বাজারে ছেড়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়া হয়েছে। তবে এ দুটি পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীর কারসাজির প্রমাণ পেয়েছে সরকারী গোয়েন্দা সংস্থা। শুধু আলু থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি আরও জানিয়েছেন, পেঁয়াজ ও আলুসহ ১৭টি নিত্যপণ্যের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। এ কারণে আলু পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি করা হলেও সরকারী বিভিন্ন তৎপরতায় দ্রুত বাজার পরিস্থিতি সামাল দেয়া গেছে। তিনি বলেন, টিসিবির মাধ্যমে স্বল্প আয়ের মানুষ কম দামে আলু ও পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। এছাড়া অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও কমে আসছে। এ কারণে আশা করছি, দ্রুত বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এদিকে এবার রেকর্ড পরিমাণ আলু আলু উৎপাদন হয়েছে। সারাবছর দেশে প্রায় ১ কোটি লাখ টন আলুর চাহিদা রয়েছে। বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টন। অর্র্থাৎ চাহিদার তুলনায় দেশে বেশি আলু উৎপাদন ও মজুদ রয়েছে। তবে এবার করোনাকালে ত্রাণ হিসেবে চালের সঙ্গে আলু বিতরণ করা হয়। এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও আলু ত্রাণ হিসেবে যাচ্ছে। তবে এ বছর করোনার কারণে আলু রফতানি করা যায়নি। দেশেই ব্যবহার বেড়েছে। তবে সঙ্কট হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন আলুর দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে। আর এ কারণেই বেড়েছে আলুর দাম। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, আলুর দাম বাড়ার পেছনে কারসাজি ছিল। কোল্ডস্টোরেজ মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের যৌথ সিন্ডিকেটে আলুর দাম বেড়ে যায়। এ কারণে দেশের প্রতিটি কোল্ডস্টোরেজে অভিযান পরিচালনা করে দ্রুত আলু বাজারে নিয়ে আসা হয়েছে। খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি আলু পুনঃনির্ধারিত দাম ৩৫ টাকায় বিক্রি করতে হবে। অন্যথায় দেশের প্রচলিত আইন-অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে সরকার। জানা গেছে, বন্যা ও সবজিখেত নষ্ট হওয়ার কারণে এবার কৃষকরা আগে-ভাগে শীতের সবজির চাষাবাদ শুরু করেছেন। জানুয়ারি মাসের প্রথমদিকে বাজারে নতুন আলু আসবে। এ কারণে এখন কোস্টস্টোরেজের আলু ছাড়া না হলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে, সারা দেশে ৩৬৯টি হিমাগার চালু আছে, যেখানে সাড়ে ৩২ লাখ টন আলু মজুদ আছে। সারা মাসে আলুর চাহিদা রয়েছে ৮ লাখ টনের মতো। ওই হিসেবে এখনও চাহিদার তুলনায় বেশি আলু মজুদ আছে। হিমাগার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর করতে হিমাগার মালিকদের চিঠি দিয়ে আলু ছাড়ার জন্য বলা হয়েছে। শীঘ্রই ভোক্তা পর্যায়ে সবজিটির দাম কমে আসবে। দাম কমছে পেঁয়াজের ॥ অবশেষে সরকারী বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে পেঁয়াজের দাম কমে আসছে। মিসর, তুরস্ক, চীন ও নেদারল্যান্ডের পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। ইতোমধ্যে আমদানিকৃত কয়েক লাখ টন পেঁয়াজে দেশে আনা হয়েছে। এছাড়া সাড়ে ৮ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য অনুমতি নিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে এলসি (ঋণপত্র) সেটেল হয়েছে ১ লাখ টন পেঁয়াজের। এছাড়া প্রতিদিনই আমদানিকারকরা পেঁয়াজের জন্য নতুন নতুন এলসি চালু করছেন। ফলে আগামী মার্চ পর্যন্ত দেশে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আনা আসবে। এছাড়া দেশী উৎপাদিত পেঁয়াজ ভাল দাম হওয়ার কারণে কৃষকরা ছেড়ে দিচ্ছেন। ফলে বাজারে দেশী পেঁয়াজেরও ঘাটতি নেই। প্রতিকেজি আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ এবং দেশী পেঁয়াজ ৮০-৮৫ টাকায়। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম আরও কমবে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়ার আর কোন সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে কয়েক লাখ টন পেঁয়াজ দেশে আনা হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েক লাখ টন পেঁয়াজ জাহাজীকরণ হয়ে গেছে। দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে বাজারে। আর এ কারণে পেঁয়াজ নিয়ে আর কোন চিন্তা নেই। শীঘ্রই দাম আরও সহনীয় হয়ে আসবে।
×