ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিনি ক্যাসিনোটিতে এক রাতে ১০-১৫ লাখ টাকার জুয়া খেলা হতো

প্রকাশিত: ২০:২৪, ২৫ অক্টোবর ২০২০

মিনি ক্যাসিনোটিতে এক রাতে ১০-১৫ লাখ টাকার জুয়া খেলা হতো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মধ্যেই ঢাকার আশুলিয়ায় একটি মিনি ক্যাসিনোর সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। সেখান থেকে হাতে-নাতে ২১জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। র‌্যাব জানায়, এই মিনি ক্যাসিনোটিতে এক রাতে ১০-১৫ লাখ টাকার জুয়া খেলা হতো। পাশাপাশি মাদক সেবনও করতেন খেলতে আসা জুয়াড়িরা। প্রায় দেড় বছর ধরে এই জুয়ার আসরে খেলতেন অধিকাংশ নিম্নআয়ের মানুষ। অনেকেই জুয়ায় আসক্ত হয়ে নিত্যদিনের আয় হারিয়ে সর্বশান্ত হয়েছে। তাদের সংসারে স্ত্রী-সন্তানেরা অনাহারে দিন কাটাতো। রবিবার দুপুরে মিরপুর পাইকপাড়ায় র‌্যাব-৪ এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক এসব তথ্য জানান। অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত আশুলিয়া কাইচাবাড়ি এলাকায় মিনি ক্যাসিনো জুয়ার আসর থেকে মাদকসহ তাদের গ্রেফতার করে র‌্যাব-৪ এর ভ্রাম্যমান আদালত। তবে এই মিনি ক্যাসিনোর মালিক প্লাবন হোসাইন ও ওমর ফারুক পালিয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আনিছুর রহমানের উপস্থিতিতে এবং সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ সাজেদুল ইসলাম সজলের নেতৃত্বে র‌্যাব-৪ এর একটি দল অভিযানকালে মিনি ক্যাসিনো জুয়ার আসর হতে প্লেয়িং কার্ডসহ একটি ক্যাসিনো বোর্ড, ১০০ পিস ইয়াবা, ১২ ক্যান বিদেশি বিয়ার, ২২টি মোবাইল এবং নগদ ৩৮ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, মোঃ বিল্লাল (৩৮), মোঃ জুয়েল (২৮), মইদুল ইসলাম (৩২), সবুজ মিয়া (২৮), মোঃ শরিফ (২৮), মোঃ লিটন (৪৫), রবিউল মোল্ল্যা (২৪), আবু তালেব (২০), দিয়াজুল ইসলাম (২০), মোঃ শিপন (২০), আব্দুল আলিম (৩৫), আজাদুল ইসলাম (৫০), সোহেল মোল্ল্যা (৩২), আসাদুল ইসলাম (৩০), মোঃ এখলাছ (৩৫), মঈন মিয়া (২৮), মাসুদ রানা (২০), হাবিবুর রহমান (৪৭), রুবেল মিয়া (৩৩), ফজলে রাব্বি (২২) ও রনি ভূঁইয়া (২৫)। মোজাম্মেল হক জানান, গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, এই মিনি ক্যাসিনো চলছিল গত দেড় বছর ধরে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, এই মিনি ক্যাসিনো চলছিল প্রতিরাতে ৩০০ জনের অধিক মানুষ ১০-১৫ লাখ টাকার জুয়া খেলা হতো। এ ক্যাসিনোতে জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত খেলতেন। রাত যত গভীর হতো ক্যাসিনো তত জমে উঠত। তিনি জানান, এই ক্যাসিনো ব্যবসার মালিকানায় রয়েছেন প্লাবন হোসাইন ও ওমর ফারুক নামে দু’জন। যদিও তাদেরকে আমরা গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তাদের গ্রেফতার করতে পারলে এই মিনি ক্যাসিনো সম্পর্কে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমরা জানতে পারব। দেড় বছর ধরে চলা এই মিনি ক্যাসিনো কাদের ছত্রছায়ায় চলত- এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক জানান, এটা বলা খুব মুশকিল, কারণ বাইরে প্রদর্শন করা হয় ক্যারাম বোর্ড আর এর আড়ালে চলে এরকম জুয়ার আসর অথবা মিনি ক্যাসিনো। আমরা যখনই গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে জানতে পেরেছি তখনই অভিযান করে মিনি ক্যাসিনো থেকে ২১ জনকে গ্রেফতার করেছি। এই মিনি ক্যাসিনোর বোর্ড কীভাবে আমদানি করা হয়েছে- আরেক প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল হক জানান, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, এই বোর্ড আমদানি করা হয়েছে মালয়েশিয়া থেকে। তবে দেখে মনে হচ্ছে- সম্প্রতি আমদানি করা হয়নি। আপনারা জানেন, অনেক বড় বড় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছে র‌্যাব। সমাজের খুব বড় বড় তথাকথিত গ্যাংস্টারকে আটক করা হয়েছে। তারা কে কীভাবে এই ক্যাসিনো বোর্ড আমদানি করেছে সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। অবৈধভাবে যারাই এই বোর্ড আমদানি করুক না কেন, খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। র‌্যাব-৪ জানায়, গ্রেফতাররা প্রাথমিকভাবে এই মিনি ক্যাসিনোয় খেলায় জড়িত থাকার সত্যতা স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
×