ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় বাড়ছে

প্রকাশিত: ২৩:৪১, ২৫ অক্টোবর ২০২০

যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় বাড়ছে

রেমিটেন্স এখন আমাদের অর্থনীতির নায়ক। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। যদিও মধ্যপ্রাচ্যের সেই স্বর্ণালি দিন এখন আর নেই। চাকরির সুযোগ ও বেতন-ভাতা আগের চেয়ে অনেকটাই কমে গেছে। পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে চলমান করোনাভাইরাস। তারপরও রেমিটেন্স আহরণের ক্ষেত্র হিসেবে মধ্যপ্রাচ্য এখনও শীর্ষস্থানটি ধরে রেখেছে। তবে এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আসছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে। চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইতে সৌদি আরব প্রবাসীরা ৬৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৩৪ কোটি ৩৫ লাভ ডলার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা রেমিটেন্সের পরিমাণ এবারই প্রথম বছরে ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে এবং ধারাণা করা হচ্ছে এর পরিমাণ ক্রমান্বয়ে আরও বৃদ্ধি পাবে। এই কাঁচা সোনা রেমিটেন্স আহরণে আমাদের কোন বাড়তি খরচ করতে হয় না, সুদ দিতে হয় না এবং এ অর্থ কোনদিন ফেরতও দিতে হবে না। তাই প্রবাসী বাংলাদেশীরা আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। এই সম্পদের যতœ নেয়া একান্ত প্রয়োজন। প্রবাসীদের জীবন বড়ই নির্মম ও কঠিন। আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে যারা নিম্নমানের কাজ করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছেন তাদের পোহাতে হয় নানা অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট। এক দেশে জন্ম নিয়ে ভাগ্যান্বেষণে আরেক দেশে যাওয়ার মতো দুঃখ আর নেই। কোন সুনির্দিষ্ট স্ট্যাটিসটিকস্ না থাকলেও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যগুলোতে দশ লাখেরও বেশি বাংলাদেশী প্রবাসী জীবনযাপন করছেন। তার মধ্যে নিউইয়র্কেই সবচেয়ে বেশি। আবার এদের বেশিরভাগই নিম্নমানের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পরিবার পরিজন ছেড়ে বছরের পর বছর ওদেশে আছেন। কোন বৈধ কাগজপত্র নেই অর্থাৎ কোন লিগাল স্ট্যাটাস হয়নি। কাগজ পত্রের আশায় কষ্টার্জিত উপার্জনের অনেকাংশই লয়ারকে মাসের পর মাস দিয়ে যাচ্ছেন, যদি কোন দিন সোনার হরিণ ধরা দেয়। যাদের কাগজপত্র বা ওয়ার্ক পারমিট নেই তাদেরকে যত কম বেতনে খাটানো যায় মালিকপক্ষের যেন ততোই লাভ। মালিকের সব লাঞ্ছনা-গঞ্জনা মুখ বুঝে সহ্য করতে হয় নতুবা পুলিশকে জানিয়ে দেবে। আমেরিকায় পঞ্চাশটি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে আলাস্কা একটি অঙ্গরাজ্য যা সারা বছরই বরফে ঢাকা থাকে। উপার্জন বেশি বিধায় বাংলাদেশী অভিবাসীরা এ বরফ ঢাকা কন কনে ঠা-া দেশেও বসবাস শুরু করেছেন। তাদের কথা হচ্ছে, ভাগ্যান্বেষণে দেশান্তরি হয়েছি, ঠান্ডা, গরম, ঝড়, বৃষ্টি বলে কথা নেই, যেখানে উপার্জন বেশি হবে সেখানেই যাব। একটানা সারাদিন দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয় বলে প্রায়ই কোমরে ব্যাকপেইন হয়। অনেকেই এজন্য এক প্রকার বেল্ট বেঁধে নেয়। পেইন বেশি হলে ‘সিক কল’ করে অর্থাৎ ছুটি কাটায়। অসুখ হয়ে বিছানায় পড়লে তখন কষ্টের সীমা থাকে না। এক গ্লাস পানি ভরে দেয়ার মতো লোক পাওয়া যায় না। সবাই ব্যস্ত। তার উপর হেল্থ ইনসুরেন্স কভারেজ না থাকলে প্রাইভেট ডাক্তারের বিল দিতে দিতে দফারফা। তখন অবস্থাটা দাঁড়ায়, নো ওয়ার্ক, নো পে, নো ফুড। দিনরাত হাড়ভাঙ্গা শ্রম ও মাথার ঘাম পায়ে ফেলার বিনিময়ে অর্জিত অর্থের সিংহভাগই অভিবাসীরা দেশে পাঠাচ্ছেন। অর্থনৈতিক দুঃসময়ে তাদের পাঠানো রেমিটেন্স (বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে চল্লিশ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে) যা উন্নয়নের প্রধান নিয়ামকের ভূমিকা পালন করছে। বিদেশী সাহায্যের পরিমাণ যেখানে শূন্যের কোঠায়, বহুমুখী কারন ছাড়া রফতানি আয়েও তেমন কোন নাটকীয় উন্নতির সম্ভবনা নেই, সেখানে অভিবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্স একের পর এক রেকর্ড গড়ে চলছে। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রবাসী শ্রমিকদের আরও আন্তরিকতার সঙ্গে পরিচর্যা করা হোক- এটাই কাম্য।
×