ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্যিক ভবনের ছাদে সৌর প্যানেলে ৭০ ভাগ বিল সাশ্রয় হতে পারে

প্রকাশিত: ২৩:০২, ২৫ অক্টোবর ২০২০

বাণিজ্যিক ভবনের ছাদে সৌর প্যানেলে ৭০ ভাগ বিল সাশ্রয় হতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাণিজ্যিক ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপন বদলে দিতে পারে বিদ্যুত বিলের হিসাব। সাশ্রয় হতে পারে ৭০ ভাগ বিদ্যুত বিল। দেশের বাণিজ্যিক বিদ্যুত বিলের সঙ্গে সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ হিসাব করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। শনিবার বিকেলে পাক্ষিক এনার্জি এ্যান্ড পাওয়ার আয়োজিত এক অনলাইন সেমিনারে টেকসই নবায়নযোগ্য জ¦ালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, কোন বাণিজ্যিক ভবনের ছাদে ৫০ কিলোওয়াটের একটি সোলার প্যানেল স্থাপন করলে ৩৪ লাখ টাকা খরচ পড়ে। সাড়ে পাঁচ বছরে বিনিয়োগ উঠে আসে। আর এখান থেকে ২০ বছর বিদ্যুত পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে এই প্রকল্পে লাভ হয় ৬০ লাখ টাকা। আর এখান থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুত পাওয়া যায় মাত্র তিন টাকায়। অর্থাৎ ছাদে স্থাপিত সৌর বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ মাত্র তিন টাকা। অন্যদিকে এখন বাণিজ্যিক বিদ্যুতের ফ্ল্যাট দর প্রতি ইউনিটে ১০ টাকা ৩০ পয়সা। সঙ্গত কারণে কেউ যদি ছাদে স্থাপিত সৌর বিদ্যুত ব্যবহার করেন তাহলে প্রতি ইউনিটে সাত টাকা ৩০ পয়সা সাশ্রয় করা সম্ভব। অর্থাৎ এতে উদ্যোক্তা ৭০ দশমিক ৮৭ ভাগ বিদ্যুত বিল সাশ্রয় করতে পারেন। নেট মিটারিং সিস্টেমে দিনেরবেলায় সৌর প্যানেলের উৎপাদিত বিদ্যুতের ব্যবহার অতিরিক্ত অংশ গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। একটি নির্দিষ্ট মিটার এনার্জি ব্যাংক হিসেবে কাজ করে। দিনেরবেলা কত ইউনিট বিদ্যুত গ্রিডে সরবরাহ করা হলো তা ওই মিটারে উল্লেখ থাকে। মাস শেষে ওই ব্যক্তি কত ইউনিট বিদ্যুত গ্রিডে সরবরাহ করল আর কত ইউনিট বিদ্যুত গ্রিড থেকে নিলো তা যোগ- বিয়োগ করেই বিদ্যুত বিল নির্ধারণ করা হয়। এই প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এজন্য ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপন করে বিদ্যুত উৎপাদনকে সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীর জ¦ালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম বলেছেন, আমাদের নতুন কিছু নিয়ে এখন ভাবতে হবে। তিনি বলেন, এখন নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং চিন্তার বিকাশ ঘটছে সেগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। তিনি একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, সেল শেয়ারিং বলে একটি কোম্পানি আমাদের কাছে এসেছিল। কোম্পানিটি গ্রামে একটি ছোট গ্রিড তৈরি করেছে। সেখানে সৌর বিদ্যুত উৎপাদন করে ব্যাটারিতে সঞ্চয় করে রাখা হচ্ছে। আবার প্রতিবেশীদের কারো বিদ্যুত প্রয়োজন হলে সেখান থেকেই বিদ্যুত দেয়া হচ্ছে। আগামী ২০ বা ৩০ বছর পর হয়ত এভাবে কেন্দ্রীয় গ্রিড লাইন থাকবে না। তখন আমাদের এ ধরনের চিন্তা করতে হবে। এজন্য কিভাবে সৌর বিদ্যুতকে সংরক্ষণ করা যায় এবং যখন সূর্য থাকবে না তখন ব্যবহার করা যায় সেটি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। এতে মূল প্রবন্ধে ইকরামুল করিম পাভেল বলেন, ছাদের সোলার থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যেতে পারে। দেশের শিল্প কারখানা এবং সরকারী ভবনের ছাদ ব্যবহার করে এই বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব। তিনি বলেন, ইডকল থেকে ২০২৫ সাল নাগাদ চার হাজার মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ছাদের সৌর বিদ্যুত উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ৫ টাকা ২২ পয়সা প্রতি ইউনিট। সোলার বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমে আসাতে ভবিষ্যতে এর দাম আরও কমে আসবে। তিনি বলেন, ২০২৫ সাল নাগাদ সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ দাঁড়াবে প্রতি ইউনিট ৪ টাকা। আর ২০৩০ সাল নাগাদ এই বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ দাঁড়াবে তিন টাকায়। সোলারিক এর দিদার ইসলাম আমেরিকা থেকে যুক্ত হয়ে বলেন, পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশে সব থেকে বড় রুফটপ সোলার হচ্ছে। এখন আমেরিকার ক্যালিফর্নিয়াতে সব থেকে বড় রুফটপ সোলার হয়েছে। সেটি ২৭ মেগাওয়াটের। অন্যদিকে বাংলাদেশে চট্টগ্রামের কোরিয়ান ইপিজেডে ৪০ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার উৎপাদন হবে। ইতোমধ্যে পাঁচ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুত সেখান থেকে পাওয়া যাচ্ছে। এখন ১২ মেগাওয়াটের কাজ চলছে। তিনি বলেন, অনেক গুলো ছাদ জোড়া দিয়ে সেখান থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা করা হবে। এনার্জি এ্যান্ড পাওয়ারের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে সেমিনারে অস্ট্রেলিয়া থেকে জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ খন্দকার সালেক সুফি, ইডকলের এসএম মনিরুল ইসলাম, জিআইজেডের প্রকৌশলী আল মোদাব্বির বিন আনাম, ইস্টকোস্ট গ্রুপের তানজিল চৌধুরী, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের এনার্জি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সাইফুল হক ও রহিম আফরোজ পাওয়ারের মনোয়ার মেজবাহ উদ্দিন বক্তব্য রাখেন।
×