ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ সড়ক গড়ে তোলা সরকারের অগ্রাধিকার

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ২৫ অক্টোবর ২০২০

নিরাপদ সড়ক গড়ে তোলা সরকারের অগ্রাধিকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নিরাপদ ও ভ্রমণবান্ধব সড়ক গড়ে তোলা সরকারের অগ্রাধিকার। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সড়ক নেটওয়ার্কে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে চালু করা হয়েছে রোড সেফটি অডিট। শনিবার ব্র্যাক ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। ওবায়দুল কাদের তার সরকারী বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। পুরুষদের তুলনায় নারী গাড়িচালকরা অধিক সাবধানী ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকার নারী গাড়িচালক তৈরির সুযোগ বাড়াচ্ছে। সরকার আরও বেশি বেশি নারী চালকের সংখ্যা বাড়াতে চায়। এ লক্ষ্যে ব্র্যাককেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানান তিনি। সেতুমন্ত্রী বলেন, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী উদ্যোগ যুক্ত হলে এসব সেক্টরে যে কোন লক্ষ্য অর্জন সহজতর হবে। এসডিজি অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনা ৫০ ভাগ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এবং জাতিসংঘ ঘোষিত দ্বিতীয়বারের মতো ডিকেড অব এ্যাকশন ফর রোড সেফটির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আইনগত কাঠামো শক্তিশালী করা হয়েছে। তিনি বলেন, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণে প্রয়োজন ‘দক্ষ ও প্রশিক্ষিত চালক’ এ বাস্তবতা উপলব্ধি করে সরকার পেশাজীবী গাড়ি চালকের প্রশিক্ষণ সুবিধা বাড়ানোর কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান একটি উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে। সে লক্ষ্যে তিনি সব সেক্টরকে উপযোগী করে গড়ে তুলছেন। তার ভাবনায় পরবর্তী নির্বাচন নয়, পরবর্তী প্রজন্ম। এ সময় ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের এ্যাক্টিং কান্ট্রি ডিরেক্টর মিজ দান্দান চেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, ব্র্যাক রোড সেফটি প্রোগ্রাম পরিচালক আহমেদ নাজমুল হোসাইন, বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ট্রান্সপোর্ট বিশেষজ্ঞ দীপন বোস প্রমুখ। এদিকে অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশের সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক-ব্র্যাক একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে। সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়নে সহযোগিতা করার জন্য বিশ্বব্যাংক ও ব্র্যাক ইতোমধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে। ইভেন্টের শিরোনাম ছিল ‘সড়ক নিরাপত্তা সহযোগিতা : ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা মৃত্যু ৫০ শতাংশ হ্রাস’। অনুষ্ঠানে বলা হয়, ২০৩০ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫০ শতাংশ মৃত্যু কমানোর জন্য কাজ করবে বিশ্বব্যাংক। পাশাপাশি সহযোগিতার অংশ হিসেবে যশোর-ঝিনাইদহ করিডর বরাবর ৪৮ কিলোমিটার একটি সড়ক নিরাপত্তা সচেতনতা অভিযানও পরিচালিত হবে। অনুষ্ঠানে বলা হয়, অভিযানটি গত জুন মাসে অনুমোদিত বিশ্বব্যাংকের সমর্থিত উইকেয়ার প্রকল্পের পরিপূরক। ওই প্রকল্পের লক্ষ্য ভোমরা-সাতক্ষীরা-নাভারন এবং যশোর-ঝিনাইদহে বিদ্যমান দুই লেনের মহাসড়ককে নিরাপদ চার লেনে উন্নীত করা। গণপরিবহনে নারীদের সুরক্ষার উন্নয়নে এবং নারী চালকসহ চালকদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে ব্র্যাক এবং বিশ্বব্যাংক অংশীদার হবে। উল্লেখ্য, ব্র্যাক ড্রাইভিং স্কুলের উদ্যোগে ‘উইমেন বিহাইন্ড দ্যা হুইলস’ এর মাধ্যমে এ পর্যন্ত ২১৪ নারী পেশাদার চালক হিসেবে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। বিশ্বে প্রতিবছর সাড়ে ১৩ লাখ মানুষ সড়ক দুর্ঘটনা মারা যান। বাংলাদেশে ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুর মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা। এখানে দুর্ঘটনায় আক্রান্তের ৬৭ শতাংশই ১৫ থেকে ৪৯ বছরের। এই উদ্যোগের প্রশংসা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আগামী এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুহার অর্ধেকে নামিয়ে আনতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের পদক্ষেপ নিয়েছে। সড়ক সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পথচারীকে অধিকতর সচেতন করা, চালককে প্রশিক্ষণ দেয়া এবং উন্নত রাস্তা তৈরি, সব মিলিয়ে একটি বিশাল উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নারী গাড়ি চালককে প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যাপারে তার মন্ত্রণালয় সার্বিক সহায়তা করবে বলেও আশ্বস্ত করেন মন্ত্রী। বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, সড়ক নিরাপত্তা যে কোন দেশের জন্য অর্থনৈতিক ও উন্নয়নের অগ্রাধিকারে পরিণত হয়েছে। একটি জাতীয় সড়ক সুরক্ষা কর্মসূচীর মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকারকে সহায়তা করতে পেরে আমরা গর্বিত। ব্র্যাকের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহর অঞ্চলে সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়নের জন্য এই কর্মসূচীতে সহায়তা জোরদার করবে। ২০১১ সাল থেকে ব্র্যাকের কমিউনিটি রোড সেফটি এ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রামের আওতায় ১২ লাখের বেশি মানুষ সড়কের নিরাপদ ব্যবহার বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এছাড়া ৫ হাজার ৪৫১ স্কুল শিক্ষক এবং ৪ লাখ ৯৮ হাজার শিশু শিক্ষার্থী সড়ক সুরক্ষায় বিশেষ সচেতনতার প্রশিক্ষণ পেয়েছে।
×