ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বনানীতে স্ত্রীর কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত

চলে গেলেন প্রথিতযশা আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ২৫ অক্টোবর ২০২০

চলে গেলেন প্রথিতযশা আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সুপ্রীমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী, সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল, দানবীর ব্যারিস্টার রফিক-উল হক আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ...রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর আদ্-দ্বীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তিনি এক মাত্র ছেলে ব্যারিস্টার ফাহিমুল হককে রেখে গেছেন। ছেলে দেশের বাইরে আছেন। দুপুর দুইটার দিকে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে তার তৃতীয় ও শেষ জানাজা হয়। বেলা তিনটার দিকে বনানী কবরস্থানে স্ত্রী ফরিদা হকের কবরের পাশে সমাহিত হলেন প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। সাবেক এই এ্যাটর্নি জেনারেল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে দুই প্রধান রাজনৈতিক নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে আলোচিত ছিলেন। ২০০৭ সালে ব্যারিস্টার রফিক উল হক বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া উভয় পক্ষের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় দুই নেত্রীর পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কোন রাজনৈতিক দলের পরিচয় না থাকায় দুই নেত্রীর পক্ষে আইনজীবী হতে পেরেছিলেন। সে সময় দুই নেত্রীকেই আইনী সহায়তা প্রদান করে আইন অঙ্গনে নজির স্থাপন করেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিযার পক্ষে আইনী লড়াই বিপুল পরিচিতি এনে দেয় তাকে। ওয়ান ইলেভেনের সময় রাজনীতিবিদদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। সেসময় রাজনৈতিক পরিচয় থাকা অনেক আইনজীবীই বিভিন্ন কারণে ওই দুইজনকে আইনী সহায়তা দেয়া থেকে বিরত ছিলেন। সুপ্রীমকোর্ট বার সমিতির রাজনীতির সঙ্গেও তিনি কখনও জড়িত হননি, ইচ্ছাকৃতভাবে দূরে থেকেছেন। ফলে যে কোন রাজনৈতিক দলের লোকই আইনী সমস্যা নিয়ে তার দ্বারস্থ হতে পারতেন। তিনি যেহেতু কোন দল করেননি, তাই সব রাজনৈতিক দলের লোকই তার কাছে যেতেন এবং তার ওপর ভরসা করতে পারতেন। শনিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে রাজধানীর মগবাজারের আদ্-দ্বীন হাসপাতালের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর বিষয় সাংবাদিকদের জানান আদ্-দ্বীন হাসপাতালের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ নাহিদ ইয়াসমিন। বুধবার ২১ অক্টোবর ব্যারিস্টার রফিক-উল হককে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। তিনি হাসপাতালের ডাঃ রিচমন্ড রোল্যান্ড গোমেজের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। তাকে বার্ধক্যজনিত ইউরিন ইনফেকশন ও রক্ত শূন্যতার কারণে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায় হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের জানাজা সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার বেলা তিনটার দিকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে দুপুর দুইটার দিকে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে তার তৃতীয় ও শেষ জানাজা হয়। এরপর দাফনের জন্য তাকে বনানী কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা পৌনে ১১টার দিকে আদ্-দ্বীন হাসপাতাল প্রাঙ্গণে তার প্রথম জানাজা হয়। পরে তাকে পল্টনের নিজ বাড়িতে নেয়া হয়। জোহরের নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে সুপ্রীমকোর্টে আনা হয়। সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে জানাজায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মাহবুব আলী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, এ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীনসহ অন্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। জানাজার পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার রফিকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন তার প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। আইন পেশায় ৬০ বছর পার করা এই আইনজীবী এ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। দেশের আলোচিত অনেক মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। নিজের প্রজ্ঞা ও মেধা দিয়ে দেশের উচ্চ আদালতকে সহযোগিতা করতে অনেকবার হয়েছেন (এ্যামিকাস কিউরি) আদালতের বন্ধু। দেশের জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবীর সান্নিধ্যে এসে আইন পেশায় সফল হয়েছেন অনেকেই। জীবনের দীর্ঘ পথচলায় শুধু বাংলাদেশই নয়, ভারত, পাকিস্তান ও ব্রিটেনের নাগরিক হওয়ার বিরল অভিজ্ঞতা অর্জন করেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত থাকার প্রেক্ষাপটে ইন্দিরা গান্ধী, নেহেরু ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্য পেয়েছেন এই আইনজীবী। হিন্দু আইন নিয়ে বার-এ্যাট-ল করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দু আইনের ক্লাস নিয়েছেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। এছাড়া বিভিন্ন সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দেশের প্রথিতযশা এই আইনজীবী নিজের উপার্জিত অর্থের একটা বড় অংশই ব্যয় করেছেন সমাজ সেবামূলক কর্মকা-ে। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি ১০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ করছেন। এছাড়া ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেছেন সুবর্ণ ক্লিনিক; ঢাকা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা রাখেন তিনি। বারডেম হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ ও নূরজাহান ওয়ার্ড, আহছানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালের চেয়ারম্যান, আদ-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান রফিক-উল হক। আদ-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ ২৫টিরও বেশি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি সরাসরি জড়িত। দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন প্রয়াত স্বনামধন্য আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। তিনি একাধারে যেমন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আইনী লড়াই করেছেন। তেমনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পক্ষেও আইনজীবী হিসেবে লড়েছেন। দেশের ইতিহাসে ও আইন পেশায় এমনটি বিরল। বাংলাদেশের আর কোন আইনজীবীর ক্ষেত্রেও এমন নজির নেই। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ১৯৩৫ সালে কলকাতার সুবর্ণপুর গ্রাম জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মুমিন-উল হক পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। আর মা নূরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিণী। কলকাতার সুবর্ণপুরেই রফিক-উল হকের শৈশব ও কৈশোর কাটে। ১৯৫১ সালে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর ১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও ১৯৫৭ সালে দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। এই সময়ে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে পর পর দুবার সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালে এলএলবি পাস করে পরবর্তীকালে আইনজীবী হিসেবে কলকাতা হাইকোর্টে পেশাজীবন শুরু করেন। ১৯৬২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে বার-এ্যাট-ল করে চলে আসেন ঢাকায়। ১৯৬৫ সালে সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী এবং ১৯৭৩ সালে আপীল বিভাগে সিনিয়র আইনজীবী হন রফিক-উল হক। তার একমাত্র ছেলে ফাহিমুল হক একজন ব্যারিস্টার। এর আগে ২০১১ সালে রফিক-উল হকের চিকিৎসক স্ত্রী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ২০০৭-২০০৮ ইং সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পক্ষে মামলা পরিচালনা করে বিশেষ প্রশংসিত হন তিনি। ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও এ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুল রহমান এমপি, বসুন্ধরা গ্রুপ চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন, গণতন্ত্রী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ। ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মৃত্যুতে আইন অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এছাড়া সিনিয়র আইনজীবীরাও গভীর শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। তারা বলেন, আইন ও বিচারাঙ্গনে তার শূন্যতা পূরণ হবার নয়। রাষ্ট্রপতির শোক ॥ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ দেশের বিশিষ্ট আইনজীবী ও সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মৃত্যুতে গভীর শোকও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বর্তমানে দুবাইতে অবস্থানরত রাষ্ট্রপতি এক শোকবার্তায় বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বিপুল অবদান রেখেছেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন অভিজ্ঞ আইনবিদকে হারালো। রাষ্ট্রপ্রধান মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রীর শোক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যারিস্টার রফিক-উল হক সংবিধান সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ দিতেন। প্রধানমন্ত্রী একটি মিথ্যা মামলায় তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে তাকে গ্রেফতার করার পর জেল থেকে মুক্তির জন্য আইনী লড়াইয়ে এগিয়ে আসায় ব্যারিস্টার রফিকের ভূমিকার কথা গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। শোকবার্তায় শেখ হাসিনা মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধান বিচারপতির শোক ॥ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সিনিয়র আইনজীবী এবং প্রাক্তন এ্যাটর্নি-জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছেন। এক শোক বার্তায় তিনি বলেছেন, এই প্রথিতযশা আইনজীবী অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ও আইনী বিষয় নিয়ে তিনি আদালতকে সবসময় সহযোগিতা করেছেন। সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যারিস্টার রফিক-উল হক একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। আইনের শাসন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। প্রধান বিচারপতি মরহুম এর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। আইনমন্ত্রীর শোক ॥ প্রবীণ আইনজীবী ও সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল হক এর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এমপি। মন্ত্রী এক শোকাবার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শোকাবার্তায় আইনমন্ত্রী বলেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ছিলেন বাংলাদেশের আইন অঙ্গনের এক নক্ষত্র। তিনি দেশের অত্যন্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ আইনজীবী ছিলেন। নিজ কর্মগুণেই বিজ্ঞ এই আইনজীবী দেশের মানুষের কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশের আইন অঙ্গনে এক বিশাল শূন্যতা তৈরি হলো। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ॥ আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ছিলেন একজন বিশাল মহীরুহ। তিনি গত ৬০ বছর ধরে আইন ও বিচারাঙ্গনে যে ছায়া দিয়ে রেখেছিলেন তার চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হলো। আমি গর্ববোধ করি তার ছাত্র ছিলাম। দোয়া করি আল্লাহতায়ালা উনাকে জান্নাত দান করুন। রফিক-উল হক ছিলেন নিজেই একজন ইতিহাস। বাংলাদেশের আইনের ইতিহাসে উনি একজন আইকন। আমি উনার সরাসরি ছাত্র ছিলাম। আমাকে অনেক স্নেহ করতেন। শিক্ষক হিসেবে যতœ করে পরাতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ-ি পেরিয়ে যখন কোর্টে আসলাম তখন দেখলাম উনি যে মামলার শুনানি করতেন সর্বোচ্চটা দিয়ে শুনানি করতেন। মামলার পেছনে তার পরিশ্রম তুলনাহীন। তিনি ছিলেন দিলদরিয়া মানুষ। কোর্টে মামলা নিয়ে অনেক উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে, কিন্তু মামলা শেষে তিনি মনে রাখেননি কখনও। ছাত্র, আইনজীবী ও বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার স্নেহের পরশ পেয়েছি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ॥ ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি। এক শোক বার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক এদেশের আইন অঙ্গনের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাসহ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ভাবমূর্তি রক্ষায় তার অনবদ্য অবদান জাতি দীর্ঘকাল স্মরণে রাখবে। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা ॥ প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এমপি এক শোক বার্তায় বলেছেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মৃতুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। তিনি বাংলাদেশের ৬ষ্ঠ এ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। সামরিক বাহিনী সমর্থিত তথাকথিত ১/১১ সরকার এর সময় রফিক-উল হক অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে গণতান্ত্রিক শক্তির পক্ষে লড়াই করেছিলেন। যা ছিল এ দেশের গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি তাঁর অঙ্গীকারের প্রতিফলন। ঐ কঠিন রাজনৈতিক সংকটের সময় দেশের দুটি বৃহত্তম লাজনৈতিক দলের প্রধান, দুই কারাবন্দী নেত্রীর আইনী পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি একজন পেশাদার ও নির্দলীয় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ছিলেন।
×