ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মসংস্থানের হাতছানি

হাঁস পালনে ঝুঁকছেন যুবকরা

প্রকাশিত: ২১:৪২, ২৫ অক্টোবর ২০২০

হাঁস পালনে ঝুঁকছেন যুবকরা

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ চাষাবাদের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলায় এখন হাঁস পালনে ঝুঁকছেন বেকার যুবকরা। অল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় হাঁসচাষে ঝুঁকে পড়ছেন অনেকেই। হাঁস পালন করেই ভাগ্য বদলানোর চেষ্টা করছেন অনেকে। এরই মধ্যে হাঁস পালনে ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে অনেকের। এ অঞ্চলে তাই ক্রমেই হাঁস পালন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জেলার তানোর ও গোদাগাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় এখন হাঁস পালনের চিত্র দেখা যায়। আগে বাসাবাড়িতে দুই একটা করে হাঁস পালন হলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে পালন করছেন অনেকে। গোদাগাড়ীর বাসুদেবপুর, স্লুইসগট, কাপাশিয়াপাড়া, উনুপনগর, মাধবপুর, সুলতানগঞ্জ, জলাহার, সাহাব্দীপুরসহ ও তানোর উপজেলার গোল্লাপাড়া আমশো এলাকায় হাঁস পালনে ব্রত এখন অনেক যুবক। তাদের বসতবাড়ির আঙ্গিনা এবং পতিত জমিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য হাঁসের খামার। শ্রমিক মুজরি, বাসস্থান তৈরি ও খাদ্যের স্বল্পতা না থাকায় এসব এলাকায় দিন দিন হাঁস চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাঁস চাষ করে বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অনেকে। তাই সহজে বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে হাঁস চাষের ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে এই অঞ্চলে। গোদাগাড়ীর বাসুদেবপুর এলাকার খামারি রাকিবুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন কৃষিকাজ করেছি। কিন্তু সার-কীটনাশক, ক্ষেতমজুর ও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় তেমন লাভ হতো না। তাই কৃষিকাজ বাদ দিয়ে হাঁস পালন শুরু করেছি। ২৫০টি হাঁস দিয়ে খামার শুরু করে এখন তার খামারে ৬৫০ হাঁস রয়েছে। এর মধ্যে গড়ে প্রতিদিন ৩২০ থেকে ৩৬০টি করে ডিম পাচ্ছেন। ডিম বিক্রি করে লাভবান এখন তিনি। হাঁস পালনকারী একই এলাকার জসিম উদ্দিন বলেন, তার খামারে ৬০০ হাঁসের মধ্যে প্রতিদিন দুই হাজার টাকার ডিম বিক্রি হয়। এতে সংসারের চাকা ভালভাবে চলছে। আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছেন। এদিকে উন্মুক্তভাবে হাঁস চাষ করা খামারি রকিবুল ইসলাম জানান, ছোট থেকেই পাতিহাঁস পালনের প্রতি একটা আগ্রহ থেকেই তিনি ১৯৯৮ সালে ১০০ পাতিহাঁস নিয়ে পালন শুরু করেন। তবে সে সময় পরিবার থেকে নিরুৎসাহিত করায় তার আর সামনে এগিয়ে যাওয়া হয়নি। তিনি কর্মজীবনে কৃষি পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। কিন্তু তার আগ্রহ ও প্রবল ইচ্ছাশক্তিকে পরিবার দমিয়ে রাখতে পারেনি। বিশ বছর পর আবার ২৫০ পাতিহাঁস নিয়ে (ডিম উৎপাদনের লক্ষ্য) বিলের ধারে উন্মুক্তভাবে হাঁস পালন শুরু করে তিনি সফলতা অর্জন করেন। এখন তার খামারে ৬৫০টি পাতিহাঁস রয়েছে যা গড়ে প্রতিদিন ৩০০’র বেশি ডিম উৎপাদন হচ্ছে। তার এই সফলতা দেখে অনেক স্থানীয় বেকার যুবক হাঁস পালনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। জেলার তানোর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়ও হাঁসচাষের প্রসার লাভ করেছেন। উপজেলার গোল্লাপাড়া বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে চলা শিবনদের পাড়ে দেখা মিলল এক হাঁস চাষীর। তার হাঁসগুলো বাচ্চা। তিনি বলেন, বিভিন্ন জাতের হাঁসের বাচ্চা পালন করে বড় করে তিনি বিক্রি করেন। ক্যাম্বেলসহ নানা জাতের হাঁস রয়েছে তার। খামারিরা বলেন, স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরামর্শ বা সহায়তা নিয়ে তারা হাঁস পালন করছেন। একটু রিস্কি হলেও এতে লাভ অনেক। গোদাগাড়ী উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সুব্রত কুমার সরকার বলেন, সরকার থেকে যে সকল ওষুধ সরবরাহ করা হয়ে থাকে তা সঠিকভাবে খামারিদের মাঝে বিতরণ করা হয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, পাতিহাঁস পালনে এলাকার অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। খামার তৈরির পূর্বে সঠিক পরামর্শ না নেয়ার কারণে স্থানীয়ভাবে বাচ্চা সংগ্রহে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলেও জানান তিনি। খামার তৈরিতে একজন উদ্যোক্তাকে সঠিক পরামর্শের পাশাপাশি নিয়মিত খামার পরিদর্শন করে হাঁসচাষ প্রসারে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
×