ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নবেম্বরেই দুই ভ্যাকসিনের তৃতীয় ট্রায়ালের ফল

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ২৪ অক্টোবর ২০২০

নবেম্বরেই দুই ভ্যাকসিনের তৃতীয় ট্রায়ালের ফল

রশিদ মামুন ॥ কোভিড-১৯ এর দুই ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের ফলাফল মিলতে পারে আগামী নবেম্বরে। মার্কিন দুই ভ্যাকসিন আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠান মডার্না এবং ফাইজারের থার্ড ট্রায়ালের ফলাফলের অগ্রগতি জানাতে গিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস এ খবর জানিয়েছে। তৃতীয় ধাপের ফলাফল শেষ করার বিষয়ে এটিই প্রথম আশার খবর। ভ্যাকসিনের গণব্যবহারের জন্য থার্ড ট্রায়ালের ফলাফলকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সারাবিশ্বের ১১টি ভ্যাকসিন থার্ড ট্রায়ালে রয়েছে। এরমধ্যে চীন এবং রাশিয়া তাদের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনগুলোকে সীমিত পরিসরে ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। তবে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়াতে বিশ্বজুড়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। শুরুতে মনে করা হচ্ছিল ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিনটি সবার আগে বাজারে আসবে। তবে একজন স্বেচ্ছাসেবকের অসুস্থতা এবং একজনের মৃত্যুর পর এটি কিছুটা থমকে যায়। তবে ব্রাজিলে অক্সফোর্ডের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন গ্রহণ করে যার মৃত্যু হয়েছে তাকে আসলে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়নি বলে জানিয়েছে ব্রাজিল। বিবিসি বলছে ট্রায়ালে অংশ নেয়া স্বেচ্ছাসেবীদের অর্ধেককে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে, বাকি অর্ধেককে দেয়া হয়েছে মেনিনজাইটিসের অনুমোদিত একটি ভ্যাকসিন। যে স্বেচ্ছাসেবকের মৃত্যু হয়েছে তাকে আসলে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন দেয়া হয়নি। সঙ্গত কারণে ওই স্বেচ্ছাসেবকের মৃত্যুর কারণে ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল বন্ধ করা হয়নি। তবে এ বিষয়ে এখনও কোন মন্তব্য করেনি অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এ্যাস্ট্রাজেনেকা। এসব কারণে মনে করা হচ্ছে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের অনেক আগেই তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল শেষ করবে মার্কিন দুই প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে একজন স্বেচ্ছাসেবক অসুস্থ হওয়ার পর মার্কিন সরকার তাদের দেশে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বন্ধ রেখেছে। মার্কিন সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে অন্যকোন দেশের ট্রায়ালের ফলাফলের ভিত্তিতে তাদের দেশের নাগরিকদের ভ্যাকসিন দেবে না। মডার্না এবং ফাইজার থার্ড ট্রায়ালে মোট ৫৫ হাজার মানুষের ওপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে পর্যবেক্ষণ করছে। এরমধ্যে মডার্না ৩০ হাজার আর ফাইজার ২৫ হাজার মানুষের ওপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেছে। শেষ ধাপের ইতিবাচক ফলাফলে পর মার্কিন খাদ্য এবং ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন চাইবে দুই কোম্পানি। মডার্নার ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত ধাপের পরীক্ষার পরিকল্পনা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে এই ভ্যাকসিনটির নিরাপত্তা নির্ধারণ করা যায় আর একই সঙ্গে কোভিড-১৯ লক্ষণ দেখা যাওয়া রোগীদের ওপর ভ্যাকসিনটির দুই ডোজ প্রয়োগের মাধ্যমে তা প্রতিরোধ করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. এ্যান্থনি ফাউচি আগেই জানিয়েছিলেন এই পরীক্ষার ফলাফল চলতি বছর শেষনাগাদ মিলবে। চূড়ান্ত ধাপের পরীক্ষায় অংশ নেয়া স্বেচ্ছাসেবীদের ওপর ২৮ দিনের ব্যবধানে দুই ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। মডার্না বলছে, ২০২১ সালের শুরু থেকে বছরে একশ’ কোটি ডোজ উৎপাদনে সক্ষম হবে বলে আশা করছে তারা। মডার্না ভ্যাকসিন আবিষ্কার গবেষণা তহবিলে মার্কিন সরকার ১০০ কোটি ডলার অনুদান দিয়েছে। ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের (এনআইএইচ) সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে মডার্না। অন্যদিকে ২৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের ওপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেছে ফাইজার। এখন যাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ফাইজারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আলবার্ট বোরলা এর আগে এনবিসি’কে দেয়া এক সাক্ষাতকারেও বছরের শেষনাগাদ তৃতীয় ধাপের ফলাফল পাওয়ার আশা করেছিলেন। জার্মানির বায়োএনটেকের সঙ্গে মিলে ফাইজার যে টিকা প্রস্তুত করছে, এতে ট্রাম্প প্রশাসন অর্থ সহায়তা করেছে। গত ১ জুলাই ফাইজার তাদের টিকার ইতিবাচক ফল জানিয়ে দাবি করে, এটি স্বাস্থ্যবান মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। তবে তৃতীয় ধাপের ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেলেই এটি ব্যবহারের উপযোগী বলে ঘোষণা করা হবে বলেও জানায় তারা। প্রসঙ্গত ফাইজার এই ভ্যাকসিন প্রকল্পে ১০০ কোডি ডলার বিনিয়োগ করেছে।
×