ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী নগরজুড়ে এখন দৃশ্যমান বহুমুখী উন্নয়ন

ড্রেনের পাশেও দৃষ্টিনন্দন সড়ক

প্রকাশিত: ২১:৪৪, ২৪ অক্টোবর ২০২০

ড্রেনের পাশেও দৃষ্টিনন্দন সড়ক

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি রাজশাহী নগরের ড্রেনেজ ব্যবস্থারও আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। নগরীজুড়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে বহুমুখী কাজ করছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক)। একাধিক নতুন ফোরলেন সড়কের পাশে প্রশস্ত ড্রেন ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ড্রেন নির্মাণ কাজ চলছে। সহজে ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার ও কাদামাটি উত্তোলন করতে ইতোমধ্যে নগরের ১০টি বড় ড্রেনের পাশে ১০টি সড়কও নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ১০৫ দিনব্যাপী ড্রেনের কাদামাটি উত্তোলন করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই রাসিক নির্বাচনে দ্বিতীয় টার্মে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ওই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর শপথ গ্রহণের পর ৫ অক্টোবর ১০৩ কোটি টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে রাসিকের দায়িত্ব বুঝে নেন লিটন। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ও রাজশাহী মহানগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আধুনিক, উন্নত ও বাসযোগ্য শহর গড়তে কাজ শুরু করেন তিনি। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে দুই বছর। গত দুই বছরে নগরীতে দৃশ্যমান উন্নয়নের সুফল পাচ্ছেন এখন রাজশাহীবাসী। নানা অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি নগরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেন মেয়র লিটন। গত দুই বছরে ড্রেনেজ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। মহানগরীর আলিফ লাম মীম ভাটার মোড় থেকে ছোট বনগ্রাম, মেহেরচন্ডী, বুধপাড়া, মোহনপুর হয়ে বিহাস পর্যন্ত ৬ দশমিক ৭৯৩ কিলোমিটার ফোরলেন সড়কের দুপাশে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। মহানগরীর বিলসিমলা রেলক্রসিং হতে কাশিয়াডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত ফোরলেন সড়কের পাশে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। উপশহর থেকে রানী বাজার পর্যন্ত সড়কের পাশে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। কল্পনা সিনেমা হলের মোড় থেকে তালাইমারি পর্যন্ত সড়কের পাশে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। মনিচত্বর থেকে সদর হাসপাতাল পর্যন্ত সড়কের পাশে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পভুক্ত অন্যান্য সড়কের পাশে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথম মেয়াদের শেষের দিকে ২০১৩ সালে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ‘রাজশাহী মহানগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণার্থে নর্দমা নির্মাণ প্রকল্প’ গ্রহণ করেন সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন। দীর্ঘদিন প্রকল্পটির কাজে ধীরগতি ছিল। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্বগ্রহণের পর ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে জোর দেন তিনি। ১৯৩ কোটি ২৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রকল্পের আওতায় ৬ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার প্রাইমারি, ১৯ দশমিক ২৯ কিলোমিটার সেকেন্ডারি এবং ৬৭ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার টারশিয়ারি নর্দমা নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে নর্দমার কাঁদামাটি অপসারণের জন্য প্রকল্পভুক্ত ১০টি প্রাইমারি নর্দমার পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। যা যথাক্রমে ‘চালনা সুইস গেট হতে গোলজারবাগ গুড়িপাড়া উত্তরপাড়া মসজিদ’ পর্যন্ত ও ‘সাধুর মোড় অর্কিড ছাত্রাবাস হতে বালিয়াপুকুর বড় বটতলা মোড় পর্যন্ত’ ড্রেনের পাশে ১ দশমিক ২৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ‘বন্ধগেট রেল লাইন থেকে মহিলা কর্মজীবী হোষ্টেল হয়ে মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স পর্যন্ত ড্রেনের পাশে দশমিক ৭৯ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ‘ছোটবনগ্রাম রেল অফিস হতে শালবাগান মোড় পর্যন্ত ড্রেনের পাশে ১ দশমিক ০৭ কিলোমিটার সড়ক এখন দৃশ্যমান। এছাড়া বোসপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি থেকে টিকাপাড়া ঈদগাহ পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ ও টিকাপাড়া গোরস্থানের উত্তর পাশ হতে ওলির বাড়ি হয়ে শিরোইল মঠপুকুর মোড় পর্যন্ত ড্রেনের পাশে ১ দশমিক ১৪ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ‘রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় ৩০টি ওয়ার্ডে প্রায় সাড়ে ২২ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণ করা হয়েছে। রাজশাহী মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও নর্দমাসূমহের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ড্রেন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এদিকে জলাবদ্ধতা দূরকরণে গত মার্চ থেকে মহানগরীর দক্ষিণ থেকে উত্তরমুখী ৪৬টি কালভার্ট এবং বিভিন্ন ড্রেনের ৯০ দিনব্যাপী কাদামাটি উত্তোলন কাজের উদ্বোধন করেন মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্পের আওতায় নর্দমাসমূহে মহানগরীর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান নগরায়নের প্রেক্ষাপটে বর্ধিত এলাকাসমূহে পানি নিষ্কাশনে ৪র্থ পর্যায়ে নর্দমা নির্মাণ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। নগরীতে আলোকিত হয়েছে বিস্তৃত এলাকা। আলোকিত মহানগরী গড়তে ১৫টি গুরুত্বপর্ণ মোড়/চত্বরে বসানো হয়েছে ১৬টি সুউচ্চ বিদ্যুত লাইটের পোল। যার সুফল পাচ্ছেন মহানগরবাসী। রাতে উজ্জ্বল আলোর কারণে নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি নাগরিকদের চলাচল নির্বিঘ্ন ও নিরাপত্তা জোরদার হয়েছে। শুধু তাই নয়, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন নগরের ৩০টি ওয়ার্ডে রাস্তা ও ড্রেনসহ ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। ভাঙা ও খানাখন্দে ভরা রাস্তা হয়েছে নতুন ঝকঝকে। মহানগরীতে উড়াল সড়ক নির্মাণ, গুরুত্বপূর্ণ মোড়সহ সড়ক প্রশস্তকরণ, দৃষ্টিনন্দন ফুটপাথ ও আইল্যান্ড নির্মাণের পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে চলছে কর্মযজ্ঞ। দুই বছরে ৩০টি ওয়ার্ডে প্রায় ২৪ কিলোমিটার নতুন রাস্তা, প্রায় ৪৪ কিলোমিটার পুরাতন রাস্তার কার্পেটিং, প্রায় সাড়ে ২২ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে সিসি ও কার্পেটিং রাস্তা, পুরাতন রাস্তা কার্পেটিং, ড্রেন নির্মাণসহ নানাবিধ উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। সিটি মেয়রের দিক নির্দেশনায় ওয়ার্ডের উন্নয়ন কাজ তত্ত্বাবধায়ন করছেন সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলররা।
×