ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংগ্রামী সালমার এগিয়ে চলা

প্রকাশিত: ২১:৪০, ২৪ অক্টোবর ২০২০

সংগ্রামী সালমার এগিয়ে চলা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ ছেলের স্বপ্ন ডাক্তার হবে। পঙ্গু পিতার চিকিৎসার পাশাপাশি দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সেবা করবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হবে কীভাবে তা জানেন না মা সালমা বেগম (৩৫)। প্রতিদিন চুলোয় আগুন না জ্বালালে যার সংসার চলে না তিনি কীভাবে ছেলেকে চিকিৎসক বানাবেন। কিন্তু অদম্য মনোবলের কারণে সেই ‘দুঃস্বপ্ন’ও তাকে এখন স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে। সালমা বেগমের বাড়ি মণিরামপুর উপজেলার ব্রহ্মপুর গ্রামে। প্রায় ২০ বছর আগে তার বিয়ে হয়েছিল স্থানীয় হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। চার বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় হাবিবুর পঙ্গু হয়ে যান। সন্তান সাকিবকে নিয়ে শুরু হয় সালমার সংগ্রামী জীবন। স্বামীর কেনা তিন শতক জমিতে ছোট একটা ঘর তুলে থাকার ব্যবস্থা করা গেলেও স্বামীর চিকিৎসা, ছেলের লেখাপড়া, খাওয়া-পরার বন্দোবস্ত হবে কীভাবে! এখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ানো শুরু সালমা বেগমের। কারও ওপর নির্ভরশীল না থেকে নেমে পড়েন কাজে। ঢাকুরিয়া বাজারে ছোট একটা চায়ের দোকান দিয়ে সংসারের সকল ভার নেন নিজের কাঁধে। এরই মাঝে ছেলে ঢাকুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছে। তার স্বপ্ন সে ডাক্তার হবে। সালমা বেগম জানান, দুঃসময়ে কেউ তার পাশে এসে দাঁড়ায়নি। তিনি কারও মুখাপেক্ষিও ছিলেন না। স্বামী-সন্তানকে নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম তাই নিজেই শুরু করেন। ঢাকুরিয়া বাজারে খুপড়ির মতো চায়ের দোকানে রয়েছে একটি বেঞ্চ আর একটি চুলা। যেখানে প্রতিদিন সকাল থেকে চুলায় আগুন জ্বালানো, কেটলিতে পানি ঢালা, গরম পানির সঙ্গে চা-চিনি মিশিয়ে পরিবেশন করার সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে চলে তার স্বপ্ন পূরণের আশাও। তিনি বলেন, ‘ছেলেকে বলেছি আমি যতটুকু পারি চেষ্টা করব। তুমি পড়তে থাকো। বাকি আল্লাহর ইচ্ছা। তবে, সে (ছেলে) ডাক্তার হতে পারবে কি না জানি না, মানুষের মতো মানুষ হলেই আমি খুশি’। সালমা বেগম জানান, ‘সারাদিন কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। মাঝেমধ্যে মনে হয় আর হয়তো পারব না। এই বুঝি পড়ে যাব। কিন্তু স্বামী-সন্তানের মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠলে কোথা থেকে যেন আবার শক্তি এসে ভর করে। আবার আগের মতো কাজ করতে পারি’। ঝড়-বৃষ্টি কোন কিছুতেই থামে না সালমা বেগমের নিত্য সংগ্রাম। ‘থামলে কী হবে-খাওয়াবে কিডা! একবেলা দোকান না খুললে আর একবেলা খাওয়া জোটে না’-বলেন তিনি।
×