ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদ্যালয়ে অটো প্রমোশন

প্রকাশিত: ২১:০৬, ২৪ অক্টোবর ২০২০

বিদ্যালয়ে অটো প্রমোশন

একটি শিক্ষাবর্ষের মোটে দুটি মাস যদি বিদ্যালয় খোলা থাকে তাহলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মানসিকতয় কেমন পরিবর্তন আসে সেটি বুঝতে হবে সবার আগে। সামনে আছে নবেম্বর ও ডিসেম্বর- এই দুটি মাস, আর আছে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা। এমন বাস্তবতায় বিদ্যালয় খুলে না দেয়াটাই সমীচীন হবে। করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর মাধ্যমিক স্তরে কোন বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না। পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত হবে সকল শিক্ষার্থী। অর্থাৎ অটো প্রমোশন পাচ্ছে সব শিক্ষার্থী। তাদের মেধা যাচাইয়ের প্রথাগত পদ্ধতি, অর্থাৎ ক্লাস-পরীক্ষা কিংবা বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না। পরীক্ষা না দিয়েই পরবর্তী ক্লাসে ওঠার ভেতরে কোন আনন্দ হয়তো নেই, কিন্তু চলমান বাস্তবতায় এর বিকল্পও তো কিছু নেই। একটি শতাব্দীতে বৈশ্বিক মহামারী কমপক্ষে একবার এসে আমাদের প্রিয় গ্রহটিকে বিপর্যস্ত করে ছাড়ে। সে সময় জীবন বাঁচানোটাই সবচেয়ে জরুরী। সবকিছুর ওপরে চলে আসে জীবনধারণের জন্য খাদ্যের যোগান এবং মহামারীর কবল থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ। আর যদি কেউ আক্রান্ত হয়েই যায় তাহলে তার স্বাস্থ্য পরিচর্যা এবং আরোগ্য করে তোলার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টাই হয়ে ওঠে সবচেয়ে জরুরী কাজ। মহামারীর সময়ে প্রথাগত পদ্ধতিতে পাঠদান এবং শিক্ষার্জন অনেকটাই স্তিমিত হয়ে আসে। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে অনলাইন ক্লাসের আয়োজন করে এবার ঘরে বসে কিছুটা হলেও পাঠ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়েছে। এসবই দেশকে ডিজিটাল স্তরে উত্তরণের সুফল। এমন একটি পর্যায়ে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের জন্য শিক্ষার্থীদের পরের ধাপে উত্তীর্ণ করার বিষয়টিকে বিচার করতে হবে বাস্তবতার নিরিখে, মানবিকতার বিবেচনাবোধ দিয়ে। কট্টর চূড়ান্তবাদী মনোভাব থেকে নয়। তবে বুধবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী জানিযেছেন, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ঘাটতি চিহ্নিত করতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে দেয়া হবে এ্যাসাইনমেন্ট। প্রতি সপ্তাহে এই এ্যাসাইনমেন্ট দেয়া ও জমা নেয়া হবে। যদিও এই মূল্যায়ন পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলবে না। সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার গড় ফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফল নির্ধারণ করা হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা এবং অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি ও জেডিসির পরীক্ষা বাতিল করা হয়। ঠিক এমন অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন অন্যান্য শিক্ষা স্তরের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে ছিলেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সর্বস্তরের মানুষ। শেষ পর্যন্ত অটো প্রমোশনের সিদ্ধান্তটি এলো। আমরা আগেও বলেছি করোনার আঘাত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পড়েছে দেশ, সমাজ ও মানব জীবনের প্রতিটি স্তরে। এর কোন ক্ষতিই সামান্য নয়। অসামান্য ক্ষতি হয়ে গেছে শিক্ষাঙ্গনে, স্পষ্ট করে বললে শিক্ষার্থীদের। বাধ্যতামূলক ঘরবন্দী থাকায় এবং করোনার উদ্বেগ উৎকণ্ঠার কারণে শিক্ষার্থীদের মনোজগতে চাপ তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে নিয়মিত পাঠগ্রহণের বাধ্যবাধকতা না থাকায় এবং এ ব্যাপারে জবাবদিহিতার অনুপস্থিতি তাদের মধ্যে এক ধরনের শিথিলতাও এনে দিয়েছে। বেশিদিন শিক্ষালয়ে না যেতে পারা মানেই সামাজিকভাবে সম্মিলনের ব্যত্যয় ঘটা। সেটিই হয়েছে, যা শুধু শিক্ষার্জন নয়, মানসিক স্বাস্থ্য ও সামাজিক সম্পর্কের জন্যও সমস্যামূলক। একই সঙ্গে বার্ষিক পাঠ্যসূচী সম্পন্ন না থাকার বিষয়টিও বিদ্যমান। শিক্ষার্জনের ক্ষেত্রে সাময়িক স্থবিরতা ক্ষতির কারণ হয়েছে, এটা সত্য। এ ক্ষতি পুষিয়ে সামনের দিকে যাত্রা করতে হবে। সরকার এ বিষয়ে সচেতন বলেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে একের পর এক নতুন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসছে। পরবর্তী শিক্ষাবছরে শিক্ষার্থীরা আবার প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠবে, সানন্দ শিক্ষার ভুবনে নিয়মিত হবে, এমনটাই প্রত্যাশা।
×