ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কমেতে শুরু করেছে আলুর দাম

প্রকাশিত: ১৯:০০, ২৩ অক্টোবর ২০২০

কমেতে শুরু করেছে আলুর দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর না হলেও কেজিতে ৫ টাকা কমে খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। কোল্ডস্টোরেজ মালিক, পাইকারি ব্যবসায়ী এবং আড়তদারদের দাবির প্রেক্ষিতে আলুর দাম বাড়িয়ে ৩৫ টাকা পুনঃনির্ধারণ করা হয়। কিন্তু গত তিনদিনে সেই দাম বাজারে কার্যকর হয়নি। চালের দাম সামান্য কমেছে। ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, রসুন ও পেঁয়াজের দাম কমেছে। বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। অপরিবর্তিত রয়েছে শাক-সবজির দাম। সবজির সরবরাগ বেড়েছে। শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, ফার্মগেট বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট, রায়ের বাজার সিটি কর্পোরেশন বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে, আলুর দামে বড় ধরনের কারসাজির সঙ্গে জড়িত রয়েছে হিমাগার মালিক, আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। ন্যায্যমূল্যে কৃষকদের আলু বিক্রি করতে কোন সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কৃষকদের মজুদকৃত আলু হিমাগার মালিক ও আড়তদাররা যোগ-সাজশে কিনে নিয়ে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আর এ কারণে হিমাগারগুলোতে অভিযান পরিচালনা করার জোর দাবি জানিয়েছে ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ কওে এরকম কয়েকটি সংগঠন। এদিকে, খুচরা বাজারে সরকার নির্ধারতি মূল্যে আলু বিক্রি করা না হলেও সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে কমেছে পাঁচ টাকা। এর আগের সপ্তাহে খুচরা বাজাওে প্রতি কেজি আলু ৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজিতে। আর কারওয়ান বাজার পাইকারি আড়তে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকার মধ্যে। আলুর দাম নিয়ে খুচরা বিক্রেতারা দুষছেন আড়তদারদের। আড়ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা কমিশনে পণ্য বিক্রি করেন, হিমাগারে যা দাম রাখা হবে সেই দামেই বিক্রি করা হবে। ফার্মগেট বাজারের খুচরা বিক্রেতা খলিল সেক বলেন, পাইকারি বাজারে আলুর দাম ৩৬-৩৭ টাকা রাখা হয়। পাইকারি থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত এক কেজি আলু নিয়ে আসতে পাঁচ টাকা খরচ অতিরিক্ত পড়ে যায়। এতে কীভাবে আমরা ৩৫ টাকায় বিক্রি করব? পাইকারি বাজারে দাম কমলে আমাদের এখানে দাম কমে আসবে। কারওয়ান বাজারের আড়ত ব্যবসায়ী জসিম উদ্দীন বলেন, আমরা কমিশনে আলু বিক্রি করি। আলুর দাম বাড়াতে আমাদের হাত নেই, আমরা যে দামে পাব সেই দামে বিক্রি করব। প্রসঙ্গত, গত ১৪ অক্টোবর প্রতিকেজি আলুর দাম হিমাগারে ২৩ টাকা, পাইকারিতে ২৫ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি নিশ্চিত করতে সারা দেশের জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়েছিলো কৃষি বিপণন অধিদফতর। সেই দামের প্রতিফলন বাজারে না হওয়ায় ২০ অক্টোবর পুনরায় দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। বর্ধিত দাম হিমাগারে ২৭ টাকা, পাইকারিতে ৩০ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৩৫ টাকা করা হয়। এদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, সরকার নির্ধারিত দামে খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হবে। এজন্য আরও দুএকদিন সময় লাগবে। এদিকে, কমেছে চালের দাম। প্রতিকেজি মোটা চালে ২ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫২ টাকা। এছাড়া মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালে কেজিতে ২ টাকা কমে ৫২-৬০ এবং মাঝার মানের পাইজাম ও লতা ৪৮-৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। ১০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়। এছাড়া পেঁয়াজ ৮০-৮৫, রসুন ৯০-১০০, মসুর ডাল ৮০-১২০, ভোজ্যতেল সয়াবিন প্রতিলিটার ৯২-৯৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। তবে কেজিতে ২০ টাকা কমে প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা ও দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকা। অপরিবর্তিত আছে মাছের বাজার। এসব বাজারে প্রতিকেজি শিং মাছ (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৬০০ টাকা, প্রতিকেজি রুই (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২৮০ টাকা, মৃগেল ১৬০ থেকে ২৫০ টাকা, পাঙাস ১০০ থেকে ১৬০ টাকা, কাতল ১৭০ থেকে ২৮০ টাকা, তেলাপিয়া ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, কৈ মাছ ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, সিলভার কার্প ১০০ টাকা, মিররর কাপ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। আর প্রতিকেজি কাঁচকি ও মলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা, দেশি টেংরা ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, দেশি চিংড়ি (ছোট) ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, হরিণা চিংড়ি ৬০০ টাকা, বাগদা ও গলদা ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা, পাবদা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। বাজারে প্রতিকেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা, বকরির মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা আর গরুর মাংস ৫৫০ টাকা ও মহিষের মাংস ৬০০ টাকা কেজিদরে। সবজির সরববরাহ বাড়ছে ॥ নিত্যপণ্যের বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ছে। তবে দাম আগের মতো অপরিবর্তিত রয়েছে। আগের বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। নতুন করে আর দাম বাড়ার কোন খবর পাওয়া যায়নি। তবে নি¤œচাপের কারণে ভারীবৃষ্টিপাতের কারণে সবজিখেত নষ্ট হওয়ার একটি ঝুঁকি রয়েছে। বাজারে প্রতিকেজি কচুরলতি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, গাজর ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ধনিয়া পাতা ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা। আর প্রতিকেজি মানভেদে ঝিঙা-ধন্দুল-চিচিঙা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল আকারভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ১০০ টাকা, টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কচুর ছড়া ৫০ টাকা ও বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিদরে। দাম অপরিবর্তিত আছে কাঁচামরিচ, করলা, উস্তা, পটলের। বর্তমানে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, করলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, উস্তা ৯০ টাকা, পটল ৭০ টাকা কেজিদরে। সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবরাহ বাড়ায় শীঘ্রই দাম কমে আসবে।
×