ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সেই শিকদার বড়ির ‘বিশাখ্যাত দুর্গা মন্ডপে’ এবার ভিন্ন চিত্র

প্রকাশিত: ১৪:৩৩, ২৩ অক্টোবর ২০২০

সেই শিকদার বড়ির ‘বিশাখ্যাত দুর্গা মন্ডপে’ এবার ভিন্ন চিত্র

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পনী সিরাজগঞ্জের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার তিনি। বাড়ি দিনাজপুর। নাম শৈলজানন্দ বসাক। এবার শারদীয়া দুর্গা উৎসবে বাগেরহাটের শিকদার বাড়ির পুজা মন্ডপে আসতে চেয়েছিলেন। দেশ-বিদেশে খ্যাতি ছড়ানো এ মন্ডপের কথা তিনি বার বার তাঁর বন্ধু, স্বজনদের মুখে শুনে আসছেন। বিভিন্ন টেলিভিশন ও খবরের কাগজে পড়েছেন। তাই গণপূর্ত সার্কেল খুলনার তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বন্ধু সতীনাথ বসাককে গত বছর বলে রেখেছিলেন, এবার ২০২০ সালে তিনি স্বপরিবারে ‘শিকদার বাড়ির পূজায়’ আসবেন। দিন কয়েক আগে তার বন্ধুকে ফোন করেছিলেন কি ভাবে আসবেন। তখন তার বন্ধু এ প্রতিবেদকের মাধ্যমে জানতে পারেন, করোনা দুর্যোগের কারণে এ বছর এশিয়ার বৃহত্তম ‘শিকদার বাড়ির দুর্গা পূজা’ হচ্ছে না। নিয়ম রক্ষায় কেবলমাত্র ঘট পুজা হবে। আয়োজনের বিশালতা, পরিসর আর মানুষের অভাবনীয় উপচেপড়া ভীড় এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় এর কোন বিকল্প ছিল না। এ কথা জানতে পেরে শৈলজানন্দ বসাক নিবৃত্ত হন। একই ভাবে নারায়ন গঞ্জের ব্যবসায়ী বিমল দাস ও তার বন্ধুরা আশাহত হয়েছেন। তাদেরও ইচ্ছা ছিল এবার শিকদার বাড়িতে পূজা দেখতে আসবেন। এমন হাজার হাজার মানুষ রয়েছেন। শিকদার বাড়ির দুর্গা মন্ডপ মানে কয়েক’শ প্রতিমার মন্ডপ। আলোর রং বাহার। জনপ্রিয় শিল্পিদের সাংস্কৃতিক অনুষ্টান। পঞ্চমী দিন থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্ত অহনিশ মানুষ আর মানুষ। লিটন ও পূজা শিকদার দম্পতির ইচ্ছায় সমাজ সেবক ডা: দুলাল শিকদারের উদ্যোগে ২৫১ প্রতিমা নিয়ে ৯ বছর আগে এখানে পুজার শুরু। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি যুগের নানা ধর্মীয় কাহিনীর পাশাপাশি সমাজ সচেতনতার চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রায় ৮ মাস ধরে প্রতিমা শিল্পীরা প্রতিমা তৈরীতে ব্যস্ত থাকতেন। বিশালত্ব আর বৈচিত্রে যা অনন্য। ব্যক্তি উদ্যোগে এমন আয়োজন অতীতে কখনও হয়নি। তাই আন্তর্জাতিক খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সহসাই। ক্রমশ; মূর্তির সংখ্যা বাড়তে থাকে। গেল বছর যা ছিল ৮০১। রাষ্ট্রদূত থেকে মন্ত্রী প্রায় প্রতি বছরই অতিথির তালিকা থাকতেন। বৈচিত্র আর প্রাণবন্ত আয়োজন দেখে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে লাখ লাখ দর্শনার্থী মুগ্ধ, অভিভূত হতেন। অথচ এবারের চিত্র সম্পূণ্য বিপরীত। একেবারেই অচেনা। সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশাল সেই পূজাপ্যান্ডেলে প্রবেশের দুটি পথই তালাবদ্ধ। যেখানে গত বছর মানুষের ভীড়ে চলতে, দম ফেলতে কষ্ট হত, সেখানে এখন জনশুণ্য। ডা: দুলাল চন্দ্র শিকদার গত বছর প্রয়াত হয়েছেন। তার ছেলে শিল্পপতি লিটন শিকদার ও বৌমা পূজা শিকদার বলেন, ইচ্ছা থাকা সত্বেও করোনা দুর্যোগের কারণে এ বছর অয়োজন করা যায়নি। দেশি-বিদেশি লাখ লাখ ভক্ত, দর্শনার্থী এখানে আসেন। অভাবনীয় উপচেপড়া ভীড় হয়। তাই সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে এই মহাউৎসব পালন করা সম্ভব হত না।’ বাগেরহাট জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অমিত রায় ও সাধারণ সম্পাদক অবনিশ চক্রবত্তী জানান, বাগেরহাটের শিকাদারবাড়িতে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুর্গোৎসবের আয়োজন হয়। তবে এবার করোনার কারনে সেই উৎসব হচ্ছে না। অনুরূপ পূজা হলেও জেলার কোথাও এ বছর উৎসব হবে না।
×