ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২২:৪২, ২৩ অক্টোবর ২০২০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ উমা চলে এসেছেন মর্তলোকে। সকল আচার মেনে বরণ করে নেয়া হয়েছে তাকে। আর বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো উৎসব। হ্যাঁ, দুর্গোৎসবের কথাই বলছি। এবার কৈলাশ থেকে একটু দেরি করেই এলেন দেবী দুর্গা। আশ্বিনে আসার কথা ছিল বটে। কিন্তু ওই এক মাসেই যে দু’দুটি অমাবস্যা। শাস্ত্রমতে, এক মাসে দুই অমাবস্যার অর্থ এটি মল মাস। এমন মাসে সাধারণত কোন শুভ কাজে হাত দেয়া হয় না। অভিন্ন কারণে পিছিয়ে যায় দুর্গোৎসবও। শারদ উৎসব তাই এবার ঠিক শরতে থাকেনি। কার্তিকে এসে ঠেকেছে। তথাপি অশুভ দূর হয়নি। এখনও চলছে করোনার কাল। সামনে শীত। বিপদ বাড়ার আশঙ্কা আছে। তাই বলে কত আর ঘরে থাকা যায়? সেই কবে বন্ধ হয়েছিল উৎসব অনুষ্ঠান। দুর্গোৎসবও এভাবে যাবে? না, মন মানে না। তাই সীমাবদ্ধতার মাধ্যেও রাজধানীজুড়েই দুর্গা পূজার আয়োজন করা হয়েছে। গত বছর স্বাভাবিক সময় ঢাকায় যে পরিমাণ পূজার আয়োজন করা হয়েছিল, এবারও সংখ্যাটা তেমন পরিবর্তন হয়নি। অল্প বাজেটে চমৎকার করে সাজানো হয়েছে ম-পগুলো। আলোকসজ্জা করা হয়েছে। একেক ম-পের একেক ডিজাইন। আলাদা আলাদা থিম। প্রতিমার ফর্মও একেক জায়গায় একেক রকম। দেখতে বেশ লাগে। মূল রাস্তার ধারে নির্মাণ করা হয়েছে সুদৃশ্য তোরণ। তোরণের নিচ দিয়ে হেঁটে গেলেই ম-পে পৌঁছে যাওয়া যায়। ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ পুরান ঢাকার কয়েকটি আয়োজন ঘুরে দেখা গেল উৎসবের রং মোটামুটি ছড়িয়ে পড়েছে। শাঁখারি বাজার বা তাঁতী বাজারের সরু গলিতে বাড়তি ভিড় নেই। তবে আনন্দটুকু অনুভব করা যায়। নতুন ঢাকার বনানী মাঠ ও কলাবাগান মাঠের আয়োজন বিশেষ দৃষ্টি কাড়ছে। বৃষ্টি বিঘিœত প্রথমদিন বেশিরভাগ পূজারী নিজ নিজ এলাকাতেই পুজো দিয়েছেন। তবে আজ উৎসবের দ্বিতীয়দিনে ঠাকুর দেখতে অনেকেই বের হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর তা হলে উৎসবের আসল ছবিটা সামনে আসবে। একইসঙ্গে বাড়বে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি। এ কারণে প্রায় সব মন্দির ও ম-প থেকে করোনা সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে যথেষ্ট কড়াকড়ি থাকায় অসাম্প্রদায়িক চিন্তার উৎসবপ্রেমী মানুষ কিছুটা বঞ্চিত হবেন এবার। আপাতত তাই মনে হচ্ছে। অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক। খুবই ভয়ঙ্কর একটি ঘটনা আমরা দেখলাম। কয়েকদিন আগের কথা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একটি শিশুর জন্ম হলো। শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করলেন চিকিৎসক। হাসপাতাল থেকে মৃত্যুসনদ দেয়া হলো। তারপর তো আর কিছু থাকে না। থাকার কথা নয়। কাঁদতে কাঁদতে নবজাতককে নিয়ে বাবা ইয়াসিন গেলেন কবরস্থানে। ঠিক তখন আরও একবার চোখের সামনে ভেসে ওঠলো আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার করুণ ছবিটা। কবর খোঁড়ার মুহূর্তে নড়ে ওঠলো শিশুটি! কান্নার শব্দে জানান দিল সে বেঁচে আছে! বাক্সবন্দী শিশুটিকে তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে বের করে আবার ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসা হলো। ভাবা যায়? তবে বরস্থান থেকে জীবিত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যালে ফেরার পাঁচ দিনপর বুধবার রাতে শিশুটি সত্যিই মারা গেছে। বাবা ইয়াসিন মোল্লা বলছিলেন, আমার জান আর নাই। আল্লাহ নিইয়া গেছে। চিকিৎসা নিয়ে প্রশ্ন তিনি তুললেন না আর। কিন্তু আমরা তো তুলবোই। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। সেই হাসপাতালের চিকিৎসক। তার পর এই কা-! দায়িত্ব পালনে কত বেশি অযোগ্য এবং অসৎ হলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে? বলার অপেক্ষা রাখে না, এমন কাজ ফাঁকি দেয়া চিকিৎসক সারাদেশেই কম বেশি আছে। তাদের কারণেই পেশাটি নিত্য প্রশ্নের মুখে পড়ছে। গ্রামের মানুষও এখন জমি বিক্রি করে ভারতে চিকিৎসা করতে যান। তাদের আস্থা এমন ঘটনায় কমবে বৈ বাড়বে না। অথচ নিজেদের পক্ষে সাফাই গেয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এ কে এম নাসিরউদ্দিন বলেছেন, ‘ডেলিভারি হওয়ার পর বাচ্চাটির স্পন্দন ছিল না। আমাদের চিকিৎসকদের নেগলিজেন্সি ছিল না। তারা ৪৫ মিনিট অবজারভেশনে রেখেছেন, তারপরও কোন স্পন্দন না পেয়ে মৃত ঘোষণা করেছেন। অবশ্য যেহেতু সেহেতু করে তিনি বলেছেন, বাচ্চাটি কবরস্থানে গিয়ে নড়েচড়ে উঠেছে, তাই এর দায়ভার এড়ানো যায় না। যদি এড়ানো না যায় তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে? হচ্ছে কী? নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন সাধারণ রোগীরা। আলুর আলাপও বেশ জমে ওঠেছে ঢাকায়। অস্বাভাবিক দাম এখন আলুর। গত কয়েকদিন ধরেই ঢাকায় এ আলোচনা চলছে। দাম কমানোর নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। এরপরও ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি। এ অবস্থায় বুধবার থেকে সরকারী বিপণন সংস্থা টিসিবি ২৫ টাকা কেজি আলু বিক্রি শুরু করেছে। খোলাবাজারে তেল, চিনি, ডাল ও পেঁয়াজের সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে আলুও। টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাকের পেছনে তাই লম্বা লাইন। সীমিত আয়ের মানুষ লম্বা সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে আলু কিনছেন। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই কেজি আলু কিনতে পারছেন। কিন্তু লাইনে দাঁড়িয়ে কিনতে পারছেন না যারা তাদের কী হবে? কতদিনে স্বাভাবিক হবে আলুর দাম? সেদিকেই তাকিয়ে ঢাকার সাধারণ ক্রেতা।
×