ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী সমাবেশে ট্রাম্প, বাইডেনের পক্ষে ওবামার প্রচার

প্রকাশিত: ২২:৩০, ২৩ অক্টোবর ২০২০

নির্বাচনী সমাবেশে ট্রাম্প, বাইডেনের পক্ষে ওবামার প্রচার

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জমে ওঠা প্রচারের মধ্যে পৃথক দুটি নির্বাচনী সমাবেশে একে অপরের প্রতি তীব্র আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার পূর্বসূরি বারাক ওবামা। পেনসিলভানিয়ায় ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেনের পক্ষে প্রচারে নামা ওবামা ট্রাম্পকে ক্রেজি আঙ্কেল বলে আখ্যায়িত করে বলেছেন, রিপাবলিকান এ প্রেসিডেন্ট বর্ণবাদীদের সাফল্য এনে দিয়েছেন। আর নর্থ ক্যারোলাইনার সমাবেশে ট্রাম্প ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের ব্যাপারে পূর্বসূরির ভুল অনুমান নিয়ে টিটকারি করেছেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রাত ৯ টায় ট্রাম্প ও বাইডেনের সর্বশেষ নির্বাচনী বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। খবর বিবিসি ও সিএনএনের। প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের বিতর্ক আয়োজন করা কমিশন অন প্রেসিডেন্টশিয়াল ডিবেটসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় যে প্রার্থী কথা বলবেন তাকেই শুধু কথা বলতে সুযোগ দেয়া হবে। অন্যজনের চেহারা দেখা যাবে না। এমনকি যিনি কথা বলবেন তার মাইক্রোফোনটি শুধু চালু থাকবে অন্যটি বন্ধ করে রাখা হবে। ৯০ মিনিটের অনুষ্ঠানে প্রার্থীরা কোভিড-১৯ নিয়ে লড়াই, আমেরিকান পরিবার, যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে নিজ অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন, জাতীয় নিরাপত্তা ও নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলবেন। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করবেন, এনবিসির ক্রিস্টেন ওয়াকার। এদিকে নির্বাচনের মাত্র ১৩ দিন আগে সব জনমত জরিপে ট্রাম্পকে বাইডেনের চেয়ে বেশ খানিকটা পিছিয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে ‘সুইং স্টেট’ বা ‘দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে’ দুই প্রার্থীর ব্যবধান খুব সামান্য। এ অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটের ফলের ওপরই ৩ নবেম্বরের ভোটে জিতে কে হোয়াইট হাউসের দখল পাবেন তা নির্ভর করবে। যুক্তরাষ্ট্রে এবার রেকর্ড আগাম ভোটও পড়েছে। এরই মধ্যে চার কোটি ২০ লাখ ভোটার ডাকযোগে ও আগাম ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের রায় জানিয়ে এসেছেন। গ্যাস্টোনিয়ার সমাবেশে ট্রাম্পের বেশিরভাগ বক্তব্যই ছিল বাইডেনকে টার্গেট করে। ভোটারদেরকে এবার ‘ট্রাম্পের দ্রুত পুনরুত্থান’ কিংবা বাইডেনের চরম মন্দার মধ্যে একটি বেছে নিতে হবে, বলেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার টেনেসির ন্যাশভিলে হতে যাওয়া শেষ মুখোমুখি বিতর্কের প্রস্তুতি নিতে বাইডেন চলতি সপ্তাহের সব প্রচার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন; অন্যদিকে ট্রাম্পকে দেখা যাচ্ছে ‘ব্যাটল গ্রাউন্ড’ খ্যাত অঙ্গরাজ্যগুলোতে ছুটে বেড়িয়েছেন। নর্থ ক্যারোলাইনার সমাবেশে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট তার পূর্বসূরি ওবামাকে খোঁচা দেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেননি। ট্রাম্পের সমাবেশের ঘণ্টাখানেক আগেই ওবামা আগস্টের ডেমোক্র্যাট কনভেনশনের পর প্রথমবারের মতো বাইডেনের পক্ষে কোন সমাবেশে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন। ট্রাম্পের বক্তব্যের সময় তার সমর্থকদের হিলারিকে উদ্দেশ করে দুয়ো দিতে দেখা গেছে। তারা বলেছেন, কুচুটে হিলারি ক্লিনটনের পক্ষে ওবামার চেয়ে বেশি তো আর কেউ প্রচার চালায়নি। তাই না? সে সময় তিনি সব জায়গায় ছিলেন। আমার মনে হয় সে রাতে (নির্বাচনের ফলাফল নিশ্চিত হওয়ার পর) কুচুটে হিলারির চেয়েও বেশি কষ্ট পেয়েছিলেন বারাক হুসেইন ওবামা। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট তার বক্তব্যে বাইডেনের মনোনয়ন দৌড়ে নামার শুরুর দিকে ওবামার উচ্ছ্বাসের ঘাটতির প্রসঙ্গ টেনেও টিটকারি দেন। বাইডেন ওবামার আমলে ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৬ সালে বাইডেনকে চাপ দিয়ে মনোনয়ন দৌড় থেকে সরিয়ে ওবামাই হিলারিকে সুযোগ করে দিয়েছিলেন বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল। ট্রাম্পকে হারাতে বাইডেনের চেয়ে হিলারির সুযোগ বেশি বলেই সে সময় মনে করেছিলেন তিনি। গত বছর ওবামা ডেমোক্র্যাট পার্টিতে ‘নতুন রক্ত’ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছিলেন। তার এ মন্তব্যকে বাইডেনের প্রতি অনাস্থা হিসেবেও অনেকে বর্ণনা করেছিলেন। পেনসিলভানিয়ায় সমাবেশে ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির বেহাল দশা ও করোনা মোকাবেলায় বর্তমান প্রশাসনের ব্যর্থতার সমালোচনার পাশাপাশি প্রেসিডেন্টের বিভিন্ন টুইট নিয়েও কটাক্ষ করেছেন। সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, বাইডেন জিতলে আমাদের এমন প্রেসিডেন্ট থাকবে না যে তাকে সমর্থন না করায় কাউকে অপমান করবে বা জেলে ঢোকানোর হুমকি দেবে। এটা প্রেসিডেন্টের স্বাভাবিক আচরণ হতে পারে না। ভোটাররা নিজেদের পরিবারের সদস্যদের কাছে থেকেও এমন আচরণ সহ্য করবে না। কোথাও কোথাও হয়ত ক্রেজি আঙ্কেলের ক্ষেত্রে এমনটা (আচরণ সহ্য) হতে পারে। এরপরও কেন অনেকে এ বিষয়ে অজুহাত দেয়? ও, আচ্ছা, এটা কেবলমাত্র তিনি বলে। না, এটা কেবল তিনি নন। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া আছে। এগুলো অন্যান্য মানুষকে নির্দয় হতে উৎসাহিত করে। উৎসাহিত করে বিভেদ সৃষ্টিকারী হতে, বর্ণবাদী হতে। এটি আমাদের সমাজের বুননকে নষ্ট করে দেয়। এসব আচরণই কারণ, এসব চরিত্রই কারণ। হুট করেই আমাদের সবাইকে রক্ষা করতে পারবেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এমনকি নিজের সুরক্ষার প্রাথমিক পদক্ষেপগুলোও নিতে ব্যর্থ হয়েছন। ট্রাম্পের প্রতি ওবামার এসব আক্রমণাত্মক কথাবার্তার সময় কার পার্কিংয়ে থাকা ২৮০ গাড়ির প্রায় সবই হর্ন বাজিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্টের কথায় সমর্থন জানায়। বাইডেনের হয়ে প্রচারণায় অংশ নিতে ওবামা এরপর নবেম্বরের নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য ফ্লোরিডায় যাবেন। শনিবার মিয়ামিতে এবং পরের সপ্তাহে অরল্যান্ডোর প্রচার সমাবেশেও তার অংশ নেয়ার কথা আছে। মরিয়া ট্রাম্প ॥ চার বছর আগে যেবার নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন, বিশ্বের খুব কম লোকই সেবার হিলারি ক্লিনটনের পরিবর্তে তাকে নিয়ে বাজি ধরেছিল। কিন্তু বছরটি ছিল ‘রাজনৈতিক ভূমিকম্পের’ বছর। তাই ভূকিম্পের মতোই ট্রাম্প নতুন যুগের সূচনা করে ক্ষমতায় এসেছিলেন। সময়ের আবর্তনে আবার চলে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের বছর। নানা ঘটনাবহুল চার বছর পেরিয়ে এবারও ট্রাম্প হোয়াইট হাউস দখলের লড়াইয়ে মরিয়া। এ সময়ের মধ্যে অসংখ্যবার বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। কখনও ড্রোন-মিসাইল ছুড়ে, কখনও উল্টোপাল্টা কথা বলে, কখনও টুইট করে, মিথ্যা বলে, অবস্থান বদলে- বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট ট্রাম্পের এসব কীর্তিকলাপের হিসাবও রেখেছে। হোয়াইট হাউসে আস্তানা গাড়ার পর থেকে দেশের ভেতরে-বাইরে অনেক ওলট-পালট ঘটিয়ে দিয়েছেন তিনি। দেশে এক মেয়াদে বদলেছেন একাধিক চীফ অব স্টাফ। প্রেস সেক্রেটারি, উপদেষ্টা- কখন যে কে পদত্যাগ করছেন, কাকে যে ট্রাম্প বরখাস্ত করছেন, তা নিয়ে খাবি খেতে হয়েছে বিশ্বের গণমাধ্যমকে।
×