ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী

শেখ হাসিনার অবদান ॥ অর্থনীতির পুনর্জাগরণ

প্রকাশিত: ২০:৪৫, ২৩ অক্টোবর ২০২০

শেখ হাসিনার অবদান ॥ অর্থনীতির পুনর্জাগরণ

একটি দেশের শাসক ইচ্ছে করলে জনকল্যাণের বিষয়টি বিবেচনায় এনে যখন জনকল্যাণমুখী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকেন, তখন সেটি অবশ্যই দুর্যোগকালীনও উন্নয়নের গতি-প্রকৃতিকে সম্মুখ সারির দিকে রেখে থাকে। বাংলাদেশ সৌভাগ্যবান এ কারণে যে, জাতির পিতার পর দেশে তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা, যিনি চারবারের প্রধানমন্ত্রী, তাঁকে এবারেও করোনাকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পেয়েছে। ব্যাস্টিক এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক চলকসমূহে ধীরে ধীরে সমস্যার ভার লাঘব হচ্ছে। মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় কিছুটা এগিয়ে আছে। যোগ্য নেতৃত্বে অর্থনীতিতে যে ধরনের অভ্যন্তরীণ এবং বহিঃস্থ কুপ্রভাব পড়ার কথা সেগুলো ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। অন্ন, বস্ত্র, ক্রয়ক্ষমতা, বাসস্থান, চিকিৎসা, নিরাপত্তা, পানি, সামাজিক এবং নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ব্যবস্থাসহ সকল সূচকে ক্রমান্বয়ে একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ ভাল করে চলেছে। দেখা যাচ্ছে বেসরকারী খাতে চলতি বছরের এপ্রিলে যেখানে ঋণের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮.৮৩ শতাংশ, সেটি আগস্টে ৯.৩৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে সেটি জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের শেষার্ধে দুই ডিজিটে উন্নীত হবে এবং যদি দ্বিতীয়বার করোনা সংক্রমণের ব্যাপকতা না বাড়ে তাহলে ডিসেম্বর নাগাদ ১২.৫ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। করোনাকালে পোশাক খাতে রফতানি আয় কমে গেলেও আবার লকডাউন পরবর্তীতে তা বেড়ে গেছে। এপ্রিলে যেখানে ৫২ কোটি ডলারে নেমে এসেছিল, সেপ্টেম্বরে সেটি ৩০১ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। সম্প্রতি আরএমজি সেক্টরে একটি সমস্যা হচ্ছে ক্রেতাদের শর্তে পণ্য ৯০%-এর ক্ষেত্রে কম মূল্যে রফতানি করতে হচ্ছে। এটি করতে গিয়ে ক্রেতারা ডেফার্ড পেমেন্ট এবং ডিসকাউন্টের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। এদিকে বিজেএমইএর ১,১৩৪টি সদস্যের ফ্যাক্টরির কার্যাদেশ মধ্য এপ্রিলে ৯৭৫.২০ পিসের মতো, যার অর্থমূল্য হচ্ছে মার্কিন ডলারে ৩.১৮ বিলিয়নের মতো হয়, যা বাতিল কিংবা স্থগিত করা হয়েছিল। অপ্রচলিত বাজারে ৬২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কার্যাদেশ সে সময় বাতিল কিংবা ক্রেতা কর্তৃক কার্যাদেশ সে সময় ধরে রাখা হয়। আসলে বিদেশী ক্রেতাদের সবাই যে ন্যায্যমূল্যে পোশাক কিনতে আগ্রহী তা কিন্তু নয়। আমাদের বিক্রেতাদের একাংশও গুণগতমান বজায় না রেখে পণ্য রফতানি করায় সে অসুবিধা প্রকট করে তোলে। এমনকি সরকার যখন কোন প্রণোদনা দেয় তখন একটি সুযোগ সন্ধানী ক্রেতার দল সেই সুযোগ-সুবিধা ও পণ্য কেনার সময় ডিসকাউন্ট নিয়ে গ্রহণ করে থাকে। দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আবার স্থগিতাদেশকৃত পণ্যাদির ক্রয়াদেশ আসতে শুরু করেছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে বিদেশী ক্রেতাদের একটি বড় অংশ ডিসকাউন্টে পণ্য কিনতে আগ্রহী। আসলে পোশাক শিল্প খাতে পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য বেসরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দেশের সরকারপ্রধান সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন যে, বিদেশস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহের কূটনৈতিকবৃন্দকে অবশ্যই অর্থনৈতিক কূটনীতিতে পারদর্শী হতে হবে। পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশীরা ‘ডায়েসপরা’ তত্ত্ব অনুসারে বাংলাদেশে পণ্যের কার্যাদেশ প্রেরণ ও খালাসসহ প্রবাসে দেশের ইমেজ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকাও পালন করতে পারে। সেজন্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। যারা প্রবাসী বাংলাদেশী আছেন তাদের উপযুক্ত সম্মান জানানো প্রয়োজন। কথায় কথায় তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা বাদ দিতে হবে। বরং ব্লু কালার লেবাররা সাদা কালার লেবারদের তুলনায় অধিকহারে দেশে অর্থ প্রেরণ করেন। একজন অর্থনীতির ছাত্র হিসেবে মনে করি, বহিঃস্থ খাতের ক্ষেত্রে বৈদেশিক রিজার্ভের চেয়েও প্রকৃত অবস্থা বুঝতে নিট ফরেন এসেট সাহায্য করে থাকে। সেপ্টেম্বর, ২০২০-এ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৯১২৫.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অবশ্যই দুর্যোগকালীন এটি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। অনেকে হুন্ডি বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে এ অর্থ প্রেরণ করেছে। আবার কেউ কেউ বিদেশে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দেশে চলে আসার জন্য অফিসিয়াল চ্যানেলে অর্থ প্রেরণ করেছে। যে কারণেই প্রেরণ করে থাকুক, তা আমাদের জন্য শাপে বর হয়েছে। এখন এই বৈদেশিক রিজার্ভকে কিভাবে ডমেস্টিক ক্রেডিটে আনা যায় সেটি পরীক্ষা করে দেখার নির্দেশ কিন্তু স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। তার এ নির্দেশটি অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত এবং বাস্তবায়নযোগ্য। আসলে নেট ফরেন এসেটে উদ্বৃত্ত অর্থ ধরে রাখা উচিত নয়। সরকারপ্রধান করোনার প্রাদুর্ভাবকালেই দেশে যাতে সুষ্ঠু অর্থনীতি ব্যবস্থা গড়ে ওঠে সেজন্য নানা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন। এই প্যাকেজসমূহ ছিল মূলত অর্থনীতিকে গতিশীল করার। ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করলেও দেখা গেল বড় ও মাঝারি ব্যাংকগুলো প্রণোদনা প্যাকেজের ক্ষেত্রে বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে অর্থায়ন করেছে। কিন্তু ছোট ও প্রান্তিকদের ক্ষেত্রে তারা প্রণোদনা প্যাকেজ দেয়নি। এতে ব্যাংকাররা সঠিক কাজ করেনি। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংককের কয়েকটি ব্যাংককে শোকজ করার কথা জানা গেছে পত্রিকান্তরে। সমস্যা হলো, ব্যাংকগুলো মুখে যতই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক গোষ্ঠীর গ্রাহকসেবার কথা বলুক, ডিজিটালাইজেশনের কথা বলুক, কিন্তু তারা খেলাপী ঋণ আদায়ে মোটেও পারঙ্গম নয়। প্রধানমন্ত্রী যেখানে স্বয়ং পুঁজির প্রসারের মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় সেবা বিস্তৃত করতে চাচ্ছেন, সেখানে ব্যাংকাররা বড় বেশি নির্লিপ্ত আচরণ করে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রী কিছু ব্যাংকের প্রকৃত অবস্থা যাচাই-বাছাই করে মার্জারের যে প্রস্তাব সম্প্রীতি দিয়েছিলেন, সেটি অত্যন্ত উত্তম প্রস্তাব। যেহেতু সরকারপ্রধান চান দেশের বিস্তৃত পরিম-লে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগুক, সেহেতু ঢাকাকেন্দ্রিক প্রধান কার্যালয় অনেক ব্যাংককে সরিয়ে দেশের নানা জায়গায় করলে অর্থনীতির যে বিস্তার আরও শক্তিশালী হতো বলে ধারণা করি। দুর্বল ব্যাংকগুলো অর্থনীতির জন্য বোঝাস্বরূপ এবং সরকারের এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে বাধাস্বরূপ। তাই তো এদেশে এমন একটি ব্যাংক ব্যবস্থা প্রচলিত আইনের মাধ্যমে গড়ে তোলা দরকার যা দেশের সরকারপ্রধানের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে জনকল্যাণমুখী কর্মকা-ে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায় যে, ঋণ খেলাপীদের ছাড় দিতে ‘গণছাড়’-এর আওতায় ব্যাংকসমূহ ১৩ হাজার ৩০৭ জন খেলাপীকে ছাড় দেয় এবং তাদের ৯ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করলেও আদায় করতে পেরেছে মাত্র ৫৪৮ কোটি টাকা। এই যে স্বল্প আদায় তার জন্য অবশ্যই ব্যাংকিং সেক্টর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপরও দায়িত্ব বর্তায়। দেশে ঢালাওভাবে দোষারোপের সংস্কৃতি বন্ধ করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক কতটুকু দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে করোনাকালে সেটি অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক তদন্ত করা দরকার। কেউ পদ পেলেই হবে না, বরং তাকে অবশ্যই দেশের স্বার্থে সব কর্মকাণ্ড সুচারুরূপে পালন করতে হবে। নচেত তার বিবেক বলে দেয়া উচিত সরকারের অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে পারছি না। আসলে অনেকদিন ধরে ঝুলে থাকা ইস্যু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহের পেইড আপ ক্যাপিটাল বাড়ানোর কর্মসূচী সরকার গ্রহণ করতে পারে তাদের অভ্যন্তরীণ প্রফিট থেকে একটি অংশ বাধ্যতামূলকভাবে কর রেয়াত দিয়ে বরং জমা রেখে। এই করোনাকালে কিছু ব্যতিক্রম বাদে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে সোনালী, জনতা, অগ্রণী এবং রূপালী ব্যাংক সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী বেসরকারী ব্যাংকের তুলনায় অধিকতর সেবামূলক কর্মকা-ে ব্রতী ছিল। তবে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাকাব এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন ব্যাংকের কর্মকা- করোনাকালে যথাক্রমে কৃষি ও শিল্প বিকাশে কি ভূমিকা রেখেছে সেটি পরীক্ষা করে দেখা দরকার। আবার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক যথার্থ অর্থে মানবকল্যাণে বিশেষ করে প্রবাসী যারা দেশে এসেছেন এবং বিদেশ যাওয়ার জন্য ঋণ চেয়েও পাননি তাদের ব্যাপারে অবশ্যই তদন্ত করা দরকার। একই কথা প্রযোজ্য কর্মসংস্থান ব্যাংক এবং আনসার-ভিডিপি ব্যাংকের ক্ষেত্রেও। গ্রামীণ ব্যাংকের যে ভৌত অবকাঠামো ২০২০ সালে দাঁড়িয়েছে এটি মোটেই কাজ করছে না। গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে প্রফেসর ড. একেএম মনোয়ার উদ্দিন আহমদের রিপোর্টটি বিবেচনায় নিয়ে এটিকে সরকার কর্তৃক আধুনিকায়ন এবং জনকল্যাণে কাজ করার জন্য ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা করা গেলে বরং গ্রামীণ এলাকায় লাভবান হবে। পানির মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, এজেন্ট ব্যাংকিং ‘ডিপেনডেন্সি’ তত্ত্বের মতোই গ্রামীণ এলাকা থেকে পুঁজি শহরে পাচার করেছে। অন্যদিকে সাব ব্যাংকিং মূলত গ্রামীণ এলাকায় সঠিকভাবে ঋণ দেয়া এবং আদায়ে সক্ষম হচ্ছে না। একটি দেশে যেখানে ৫৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক আছে, সেখানে পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকগুলো বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় খুলে সারপ্লাস এবং ডেফিসিট ইউনিটের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে অসুবিধা কোথায়? বরং এ ব্যাপারে বিস্তৃত পদক্ষেপ সরকারকে উন্নয়ন কার্যক্রম জোরদার এবং উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়ক হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক তহবিল ব্যবস্থাপনায় যুতসই প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। সময়ের প্রয়োজনে যুতসই প্রযুক্তি তথা ফিনটেক, আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স চ্যাটব্যাট এবং বল্কচেইনের ও বিগ ডাটাসহ ইন্টারনেট অব থিংকিংয়ের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। ব্যাংকিংসহ দেশের সব আর্থিক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় পরিচালিত সম্পদ এবং দায়ের ব্যবস্থাপনায় এক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করতে হবে। পাশাপাশি ঋণ খেলাপীদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। ঋণ গ্রহীতারা যাতে সঠিক সময় ঋণের অর্থ ফেরত দেন সেজন্য আইনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপ দেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবশ্যই সরকারপ্রধানের নির্দেশ অনুযায়ী যথাযথভাবে কাজ করতে হবে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের পরিচালনায় কেবল সঞ্চয় নয়, বরং বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিলে কেবল গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যে দৃপ্ত অঙ্গীকারে সরকারপ্রধান যে কাজ করে চলেছেন তা বাস্তবতার আলোকধারায় সেটি বাস্তবায়ন হবে। নচেত কেবল কথামালার ফানুস উড়িয়ে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্তরা আর যাই হোক সরকারপ্রধানের অর্থনৈতিক মুক্তির স্বার্থ পূরণে সক্ষম নন। পিকেএসএফ যথার্থ অর্থে দেশে তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় প্রশংসিত কাজ করে চলেছে। পিকেএসএফের সমৃদ্ধ কর্মসূচীটি কেবল দেশে নয় বিদেশেও প্রশংসিত হয়েছে। পিকেএসএফের মাধ্যমে অধিকতর অর্থ বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা দরকার। বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনে প্রান্তিক এনজিওসমূহকে তহবিল দান করে থাকে। বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের নিজস্ব ভিশন, মিশন এবং ঋণ প্রদান মডেলটি আমি সুপারিশ করেছিলাম। পাশাপাশি তার আর্থিক দায়িত্বশীলতার প্রয়োজন রয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় সাধারণ মানুষের জীবনমান এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য কঠোরতম ব্যবস্থা করতে গেলে কিভাবে বিএনএফের ফান্ডিং তৈরি হবে সেটি অর্থ মন্ত্রণালয়কে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। আজ দেশে যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি তৈরি হয়েছে তার মূলে নিউক্লিয়াস হচ্ছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার প্রত্যাশা করছে ২০২০-২১ সালে বাংলাদেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৮.২%। সরকারী নীতি অবশ্যই গ্রামীণ পর্যায় থেকে আরম্ভ করে সব পর্যায়ে উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্রে দৃঢ়প্রতিজ্ঞভাবে যদি পালন করা যায় সেজন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। যেহেতু বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত অভ্যন্তরীণ চলকসমূহের ওপর নির্ভরশীল সেহেতু স্থানীয় পর্যায়ের অর্থনীতির উন্নয়ন এবং আমদানি বিকল্পায়ন শিল্প প্রতিষ্ঠায় কর রেয়াতসহ সব সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ের অর্থনীতির ওপর করোনাকালে অধিকহারে মনোসংযোগ সরকার ঠিকই করেছে, কিন্তু বাস্তবায়নকারীরা তাদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে না। যারা সরকারপ্রধানের ইচ্ছায় অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণের ক্ষেত্রে নির্দেশিত কার্যক্রমের বিরোধিতা করবে তাদের জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকা দরকার। আবার ধরুন এপ্রিল মাসে প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থায়ন করতে বলেছে অথচ অক্টোবরে এসেও দিচ্ছে না- এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অর্থনীতি কিভাবে মৌলিক কাঠামোয় প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে পুনরুজ্জীবনকে সক্রিয় করে তোলে সেজন্য যথার্থ অর্থে নীতিমালা প্রণয়ন, প্রয়োজনে সংযোজন ও বিয়োজন এবং দেশের অগ্রযাত্রাকে গতিময়তা দিতে হবে। বাংলাদেশের বেগবান অর্থনীতিকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে হবে এবং নারী-পুরুষ সমতাভিত্তিক মানবকল্যাণ সূচকের উত্থান ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে রাজনৈতিক মতাদর্শের বাস্তবায়ন দরকার। লেখক : ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল ইকোনমিস্ট আইটি এক্সপার্ট [email protected]
×