ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নৌযানে কর্মবিরতি

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ২৩ অক্টোবর ২০২০

নৌযানে কর্মবিরতি

নৌপথে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্য খালাস হওয়া প্রতিদিনের ব্যবসায়িক কর্মযোগ। এখানে শিল্পের কাঁচামালসহ ভোগ্যপণ্য বাইরে থেকে আসতে থাকে। নিয়মিত পণ্য খালাস করতে সংশ্লিষ্ট নৌযান শ্রমিকরা ব্যস্ততম দিন কাটায়। কিন্তু মালিক ও শ্রমিকের আন্তঃবিরোধের রেশ হিসেবে জাহাজের পণ্য ওঠানো-নামানো আপাতত স্থবির হয়ে আছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে ৪০টি বিদেশী বড় জাহাজের ভাড়া বাবদ লোকসান গুনতে হবে প্রতিদিন প্রায় ৪ লাখ ডলার, যা দিতে হবে পণ্য পাঠানো বিদেশী সংস্থাগুলোকে। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয় নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতি। এক দিনেই সাগরঘাটে আটকা পড়েছে ২১ লাখ টন পণ্য, যা বাড়ছে প্রতিদিন। বন্দর ও নদী পথে পণ্য নামাতে না পারার মাশুল দিতে হয় অনেক। শুধু একদিনই বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করতে না পারলে প্রতিটি জাহাজের ভাড়া বাবদ ১০ থেকে ১২ হাজার ডলার মাশুল দিতে হয় আমদানিকারক দেশকে। এ তো গেল ভাড়ার আর্থিক ক্ষতি। তার ওপর কাঁচামাল সরবরাহে বিঘœ তৈরি হলে তার ক্ষতিপূরণও চরমভাবে গুনতে হয়। বাংলাদেশ এখন তেমন দুরবস্থায় আর্থিক লোকসানের দুর্বিপাকে। এ ছাড়া শিল্পজাত পণ্যের কাঁচামালের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশীয় কারখানাগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি উদ্বিগ্ন হয়ে উল্লেখ করেন, পণ্য খালাসের অপারগতায় শিল্প-কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়াও থমকে আছে। বাইরে থেকে আসা অনেক কাঁচামাল শিল্পজাত পণ্যের উৎপাদনে নির্ণায়কের ভূমিকা পালন করে। কারখানার অচলাবস্থায় শ্রমিক-মালিক কেউই স্বস্তিতে থাকবে না। লোকসান গুনতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। এ ছাড়া আছে জাহাজ ভাড়া বাবদ অর্থদ-। পণ্য খালাস করতে দেরি হলে তা কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়। সে টাকা ডলারের মূল্যমানে বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে হবে। সর্বশেষ ক্ষতির আবর্তে পড়ে যাবে পণ্য এবং ভোক্তা শ্রেণীও। এমনিতে করোনা সংক্রমণে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য হুমকির মুখে। তার ওপর অযথা সময় ক্ষেপণ করে আর্থিক লোকসান গোনা, সেটাও কারোর জন্য শুভ সঙ্কেত নয়। ক্ষতির আশঙ্কায় মালিকরা উদ্বিগ্ন এবং বিচলিত। শ্রমিক-মালিক দ্বন্দ্বে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও ভোক্তাশ্রেণী, যা কোনভাবেই কাম্য নয়। সারাদেশে সমুদ্রপথে আমদানিকৃত পণ্যের সিংহভাগ (৯৩%) খালাস হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। বিশ্বে সম্প্রসারিত অর্থনৈতিক মন্দার দুর্দিনে দেশীয় ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়ানোর অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির মধ্যে আছে মাসপ্রতি চার হাজার টাকা খাদ্য ভাতা, কর্মস্থলে মৃত্যুবরণ করা শ্রমিকের পরিবার ১০ লাখ টাকা অনুদানসহ ৯ দফার ভিত্তিতে নৌযান শ্রমিক সংগঠন এই কর্মবিরতিতে অংশ নিয়েছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা অনড় অবস্থানে থাকবে বলে সতর্কও করে দিয়েছে। করোনা সঙ্কটে উদ্ভূত এমন বিপরীত পরিস্থিতিকে উভয়পক্ষই সমঝোতার ভিত্তিতে মিটিয়ে নেবে-এমন প্রত্যাশা সবার।
×