ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদের আজ ৭৮ তম জন্ম দিন

প্রকাশিত: ১৩:২৭, ২২ অক্টোবর ২০২০

রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদের আজ ৭৮ তম জন্ম দিন

হাসিব রহমান, ভোলা ॥ কোড়ালিয়া। ভোলা সদরের দক্ষিন দিঘলদী ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম। এক সময়ের অবহেলিত এক অজপাড়া গাঁ হিসাবেই পরিচিতি ছিলো। কিন্তু সেই গ্রামেই এক সমভ্রান্ত পরিবারের জন্ম নেন তোফায়েল আহমেদ। পরিবারের বা প্রিয়জন অনেকের কাছে তিনি প্রিয় আদরের তোফু হিসাবেই পরিচিত। শুধু দ্বীপজেলা ভোলাই নয়, সারা বাংলাদেশেই এক নামে যাকে সকলে চিনেন। সম্মান করেন, ভালোবাসেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্নেহধন্য, ’৬৯-এ পূর্ব বাংলার অবিসংবাদিত ছাত্রনেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সচিব, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, কিংবদন্তি রাজনীতিবিদ, আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা পরিষদের সংসদ, সাবেক শিল্প ও বানিজ্যমন্ত্রী, ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদর আজ বৃহস্পতিবার ৭৮ তম জন্ম দিন। ১৯৪৩ সালের ২২ অক্টোবর কোড়ালিয়া গ্রামে তার জন্ম হয়। তার পিতা মৌলোভি আজহার আলী এবং মা ফাতেমা খানম ছিলেন এলাকার সম্মানীত ব্যাক্তিত্ব। তার পিতা একজন ১৯৬০ সালে ভোলা সরকারি হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে ১৯৬২ সালে আইএসসি পাস ও পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে এমএসসি পাশ করেন। কলেজ জীবন থেকেই তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে সম্পৃত্ত ছিলেন। ব্রজমোহন কলেজ ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক পদে এবং কলেজের হোস্টেল অশ্বিনী কুমার হলের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন ১৯৬২ সনে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ১৯৬৪ তে ইকবাল (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) হল ছাত্র-সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক, ১৯৬৫তে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সহ-সভাপতি, ১৯৬৬-৬৭তে ইকবাল হল ছাত্র-সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ সন পর্যন্ত তিনি ডাকসুর ভিপি থাকাকালীন ৬৯-এর মহান গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৬-এর ৮ মে থেকে ১৯৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৩৩ মাস কারাগারে আটক থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’র সকল রাজবন্দীকে নিঃশর্ত মুক্তিদানে তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সারা বাংলায় তৃণমূল পর্যন্ত তুমুল গণআন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৬৮-৬৯-এ গণজাগরণ ও ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন তিনি ডাকসুর ভিপি হিসেবে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন এবং ’৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল রাজবন্দীকে মুক্ত করেন। ওই সময়ে তোফায়েল আহমেদকে নিয়ে পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় শিরোনাম হয়, তোফায়েল দি গভর্নোর অব ইষ্ট পাকিস্তান।” ওই সময়ে ইকবাল হলের ৩১৫ নাম্বার রুমের সামনে দেশী বিদেশী সাংবাদিকগন তার বক্তব্য নিতে অপেক্ষা করতে আন্দোলনের কর্মসূচী জানার জন্য। ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভার সভাপতি হিসেবে ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে কৃতজ্ঞ জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞচিত্তে গণজোয়ারে জাতির জনককে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাত্র ২৭ বছর বয়সে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে ভোলা দৌলতখান-তজুমদ্দিন-মনপুরা আসন থেকে অংশ নিয়ে এমএনএ নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তিনি মুজিব বাহিনীর অঞ্চল ভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত চার প্রধানের একজন ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালে ১৪ জানুয়ারি তারিখে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সচিবের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৭০-এ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ, ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮,২০১৪এবং ২০১৮সনের সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে সর্বমোট ৮ বার তিনি এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন তিনি শেখ হাসিনা সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় সংসদে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় ̄স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৬৯ সনের কর্মরত পূর্বদেশ পত্রিকার তৎকালীন প্রবীণ সাংবাদিক বর্তমান ভোলা প্রেসক্লাবের সভাপতি প্রত্যক্ষদর্শী এম হাবিবুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকার গঠন করার পর তখন তোফায়েল আহমেদের হাত ধরেই দ্বীপজেলা ভোলার প্রথম উন্নয়নের সূচনা হয়। সেই উন্নয়নের ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। অবহেলিত এই দ্বীপের ৭টি উপজেলার সাথে যোগাযোগের প্রধান কাঁচা মাটির ভোলা-চরফ্যাসন সড়কটি ১৯৭২ সনেই পাকা করা হয়। তার পর ধাপে ধাপে ভোলার বড় বড় যে উন্নয়ন হয়েছে তা তোফায়েল আহমদের প্রচেষ্টাতইে হয়েছে। ভোলার মানুষকে মেঘনার জলোচ্ছাস থেকে রক্ষা করতে বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে দৌলতখানের আমানির বাজার বেড়ি বাঁধ কাজের উদ্বোধন করা হয়। অন্যকোন সরকারের আমালে নদী ভাঙ্গন রোধে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা না হলেও বর্তমানে ভোলার নদী ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী ভাবে ব্লক বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন সরকার ক্ষমতায় আসলেও বতর্মান আওয়ামীলীগ সরকারের সময়েই তোফায়েল আহমেদের প্রচেষ্টায় ভোলার মানুষ ভোলার প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস উত্তোলনের পর তার সুফল পাচ্ছে। গ্যাস ভিত্তিক গড়ে উঠেছে বিদ্যুৎ প্লান্ট, শিল্পকল কারখানা। ভোলার মানুষ আবাসিক গৃহস্থলির কাজেও পেয়েছে গ্যাস সংযোগ। ভোলায় গ্রাম গঞ্জে বিদ্যুত পৌছে দিতে ১৯৯৬ সনে তিনি শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী থাকার সময় তার প্রচেষ্টায় ভোলায় পল্লী বিদ্যুতের কার্যক্রম শুরু হয়। তার প্রচেষ্টায় মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্র ও ফাতেমা খানম শিশু পরিবার (সরকারি) স্থাপন করা হয়। এমনকি দ্বীপজেলা ভোলার সাথে সড়ক পথে সারা দেশের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে গাড়ি চলাচলের জন্য ভোলা- বরিশাল রুটে ফেরি সার্ভিস চালু হয় তার সময়ে। ভোলার গ্রাম গঞ্জের অধিকাংশ রাস্তাঘাট পাকা হয়। দৃষ্টি নন্দন পৌরসভার ভবনসহ পৌর এলাকায় নানা স্থাপনা, পার্কসহ অসংখ্যা দৃশ্যমান উন্নয়ন রয়েছে। এমনকি চিকিৎসা ক্ষেত্রেও আধুনিকতা চলছে। ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে উন্নিত হয়েছে। শুধু সরকারি ভাবে উন্নয়নই নয়, তার ব্যক্তি উদ্যোগে ভোলার উপ শহর বাংলা বাজারে ফাতেমা খানম কমপ্লেক্সে তোফায়েল আহমেদ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে অসংখ্য সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান। পরিনত হয়েছে ভোলার দর্শনীয় স্থানে। সেখানে গেলেই চোখে পড়ে দৃষ্টি নন্দন একটি মসজিদ। তার পাশেরই রয়েছে স্বাধীনতা জাদুঘর। এই যাদুঘরে রয়েছে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা অধ্যায়সহ দেশের নানা ইতিহাসের ডিজিটাল সচিত্র তথ্যভিত্তিক প্রর্দশন, মিনি ষ্টুডিও, বই সংরক্ষন করা আছে। যাধুঘরের পাশেই রয়েছে আধুনিক বৃদ্ধাশ্রম। এখানে অতি যত্ন সহকারে বৃদ্ধদের বসবাসের ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের চিকিৎসা থেকে সকল রকম সুযোগ সুবিধা রয়েছে। এছাড়া ফাতেমা খানম ডিগ্রি কলেজ, ফাতেমা খানম বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। ভোলার মানুষের আধুনিক চিকিৎসা সেবা দিতে তোফায়েল আহমেদের প্রচেষ্টায় নির্মাণ করা হচ্ছে আজহার ফাতেমা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। তাছাড়াও কোড়ালিয়া গ্রামের তেঁতুলিয়া নদীর তীরে মনোরম সাজে সাজানোর ফলে বিনোদন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। প্রতিদিন এসব দেখতে বিভিন্ন বয়সী শত শত নারী পুরুষের ভীড় জমে। তোফায়েল আহমেদ বলেন, তার একটি স্বপ্ন ছিলো ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ করা। সেই সেতু এখন বাস্তবায়নের পথে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তেঁতুলিয়া ও কালাবদর নদীরউপর দিয়ে ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। ইতি মধ্যে ওই সেতু সম্বব্যতা যাচাই কাজ শেষ হয়েছে। কিছু দিন আগে মন্ত্রী পরিষদের সভায় ভোলা-বরিশাল সেতুর অনুমোদন হয়েছে। পিপিইর মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করা হবে। ভোলা হবে বাংলাদেশের উন্নয়নের রোল মডেল।
×