ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দিল্লীকে বেজিংয়ের বার্তা

এক চীন নীতি মেনে চলুন

প্রকাশিত: ২৩:৫৩, ২২ অক্টোবর ২০২০

এক চীন নীতি মেনে চলুন

অবশেষে তাইওয়ানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে ভারত। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তাইওয়ান ভারতকে কাছে পেতে চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। তাইপের ধারণা ভারতের মতো একটি বড় বাজারে প্রবেশ করতে পারলে আন্তর্জাতিকভাবে তাইওয়ানের গুরুত্ব বাড়বে। পাশাপাশি চীনের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক টানাপোড়েনের ফলও ঘরে তুলতে পারবে তাইপে। এতে বেজায় চটেছে চীন। বেজিং দিল্লীকে এক চীন নীতি মানার আহ্বান জানিয়েছে। খবর আলজাজিরা অনলাইনের। ভারতের বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার প্রথম থেকেই তাইওয়ান দেশটির সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে চেয়েছে। এ বিষয়ে ভারতের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র বাণিজ্য সূত্র জানান, ভারত ও তাইওয়ানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় নিবন্ধন করা হতে পারে। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীন-ভারত চলমান সম্পর্কের জেরে ভারত ও তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তার মতে তাইওয়ানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনের ফলে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্স খাত উপকৃত হতে পারে। তবে এ চুক্তি ঠিক কবে নাগাদ হতে পারে- এ বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। উল্লেখ্য, চলতি মাসের প্রথম দিকে মোদি সরকার তাইওয়ানের প্রখ্যাত ফক্সকন টেকনোলজি গ্রুপ, উইসট্রন ও পিজাটরন কর্পোশেনের সঙ্গে এক শ’ ৪৩ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র যোগেশ বাজোয়া আপাতত এসব বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। অপরদিকে তাইওয়ানের বাণিজ্য মধ্যস্থতাকারী জং ডেংও এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোন মন্তব্য করেননি। ভারত এখনও তাইওয়ানকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। তবে দেশ দুটি প্রতিনিধি অফিসের সাহায্যে নানা ধরনের কাজ করে। এদিকে ভারত-তাইওয়ান বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান মঙ্গলবার বলেন, বিশ্ববাসীকে মনে রাখা দরকার তাইওয়ান চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভারতসহ অন্যান্য দেশের কাছে আমরা এক চীন নীতি মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি। সম্প্রতি কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, তাইওয়ানে হামলার সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন। আর এরই অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীকে আধুনিকভাবে সজ্জিত করে চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলে মোতায়েন করা হয়েছে। একটি সামরিক সূত্র জানিয়েছে, উপকূলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ডিএফ-১৭ প্রস্তুত রেখেছে চীন। এছাড়া দ্বীপটিতে নিয়মিত চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে পিপলস লিবারেশন আর্মি ও সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে। সামরিক সূত্রটি আরও জানিয়েছে, বেজিং ওই অঞ্চলে পুরনো ক্ষেপণাস্ত্র ডিএফ-১১ ও ডিএফ-১৫স’র স্থলে নতুন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ডিএফ-১৭ মোতায়েন করেছে। নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্রটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানতে অনেক কার্যকর। ডিএফ-১৭ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ২৫শ’ কিলোমিটার দূরের বস্তুকে সঠিকভাবে আঘাত করতে সক্ষম। এটি চীনের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গত বছর অক্টোবরে জাতীয় দিবসে জনসম্মুখে আনা হয়। চীনের ক্ষমতাসীন দলকে তাইওয়ান কখনোই তার স্বার্থ রক্ষায় কাজে লাগাতে পারেনি। কানাডাভিত্তিক কানওয়া ডিফেন্স রিভিও’র তথ্য অনুযায়ী, স্যাটেলাইটের একটি ছবিতে ফুজিয়ান ও গুয়ানডংয়ে নৌ সেনা ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনের প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। তথ্যে বলা হয়, ‘ফুজিয়ান ও গুয়ানডং এখন অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আছে।’ চীনের প্রেসিডেন্ট দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ গুয়াংডনের একটি সামরিক ঘাঁটি পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি সৈন্যদের যুদ্ধের জন্য সদাপ্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। চীনের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে গত কয়েকদিনে বিপুলসংখ্যক সেনাবাহিনীকে নিয়ে আসায় এ সন্দেহ আরও ঘোরতর হচ্ছে। সামরিক বিশেষজ্ঞরাও ধারণা করছেন, তাইওয়ানে শীঘ্রই হামলা চালাতে পারে চীন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গত সপ্তাহে দেশটির সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য তৈরি হতে বলেছিলেন। এরপরই চীনা সেনার এই গতিবিধি তাইওয়ানে সেনা অভিযানের সম্ভাবনাকেই জোরালো করেছে। চীন বরাবরই তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে। প্রয়োজনে তাইওয়ান দখলে সেনাকে ব্যবহার করা হবে, সে সম্ভাবনার কথা অতীতে স্বীকারও করে নিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। গত কয়েক বছর ধরেই তাইওয়ানের আশপাশে চীনের সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১৮ এবং ১৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চীনের মূল ভূখ- এবং তাইওয়ানের মধ্যবর্তী অংশ দিয়ে প্রায় ৪০টি চীনা যুদ্ধবিমানকে উড়ে যেতে দেখা যায়। এই ঘটনাকে দেশে নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষে বিপদ সংকেত বলে উল্লেখ করেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েন।
×