ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মীরসরাই-কক্সবাজার ২৩০ কিমি মেরিন ড্রাইভ সড়ক হচ্ছে

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ২২ অক্টোবর ২০২০

মীরসরাই-কক্সবাজার ২৩০ কিমি মেরিন ড্রাইভ সড়ক হচ্ছে

রাজিব মজুমদার, মীরসরাই, চট্টগ্রাম ॥ মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মিত হবে ২৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। ২৫ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার পাশাপাশি অনেক এগিয়ে দেবে দেশের পর্যটনশিল্পকে। মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থেকে শুরু করে সীতাকুণ্ডের উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ধরে বঙ্গবন্ধু টানেল ব্যবহার করে কর্ণফুলী নদীর অপরপাড়ে এবং সেখান থেকে বাঁশখালী ও চকরিয়া হয়ে কক্সবাজার চলে যাবে সড়কটি। কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল ব্যবহার করা হলেও মাতামুহুরিসহ অন্য নদীগুলোর ওপর ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রকল্পটির সার্ভে শুরু হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান একটি কোম্পানি এই সার্ভে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সূত্র জানায়, দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা গতিশীল করে শিল্পায়ন, পর্যটন এবং আবাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ২৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এটিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া হবে। এতে মীরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৩১০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ প্রস্তুত হবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পের সার্ভে কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা নিশ্চিত করেন। জোরারগঞ্জ থেকে মুহুরি প্রজেক্ট হয়ে মেরিন ড্রাইভ শুরু হবে। এটি দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরকে যুক্ত করবে। মীরসরাই থেকে সীতাকু- হয়ে এই মেরিন ড্রাইভ ফৌজদারহাট দিয়ে পতেঙ্গা হয়ে কর্ণফুলীর তলদেশের টানেল ব্যবহার করবে। টানেলের অপরপাড়ের আনোয়ারা থেকে বাঁশখালী এবং চকরিয়া হয়ে মেরিন ড্রাইভ পৌঁছবে কক্সবাজারের কলাতলীতে। সেখানে কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভে গিয়ে সেটি যুক্ত হবে। জোরারগঞ্জ থেকে শুরু করে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ হবে চার লেনের। এটি সমুদ্রের জোয়ার রেখা থেকে ১৫ ফুট উচ্চতায় থাকবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, মীরসরাই মুহুরি প্রকল্প থেকে নেভাল একাডেমির কাছে টানেল হয়ে চাতরী-চৌমুহনী, বাঁশখালী- পেকুয়া-চৌফলদ-ী-খুরুশকুল সমুদ্র উপকূল হয়ে কক্সবাজার শহরের কলাতলী মেরিন ড্রাইভ সড়ক পর্যন্ত ২৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের রাস্তাটি নির্মিত হবে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সড়ক বিভাগ পৃথক পৃথকভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম অংশে রাস্তার পরিমাণ হবে ৮০ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার অংশে ১৫০ কিলোমিটার। কক্সবাজার থেকে টেকনাফের ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভের সঙ্গে যুক্ত হলে এটি হবে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ। প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, এই মেরিন ড্রাইভ শুধু যোগাযোগের ক্ষেত্রেই নয়; দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জিডিপিতে এক শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনে এই মেরিন ড্রাইভ ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করে ওই কর্মকর্তা বলেন, এই সড়কটি উপকূলীয় অনুন্নত এলাকার জীবনযাত্রা পাল্টে দেবে। ব্যাপক শিল্পায়নের পাশাপাশি আবাসন এবং পর্যটনেও অকল্পনীয় ভূমিকা রাখবে। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ এই মেরিন ড্রাইভের পর্যটন মূল্য কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা এই মুহূর্তে কল্পনাও করা যাচ্ছে না। প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে মন্তব্য করে সড়ক বিভাগের একজন প্রকৌশলী বলেন, প্রকল্পটির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নানাভাবে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই মেরিন ড্রাইভের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরের মীরসরাই অর্থনৈতিক জোন এলাকায় আট কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ শুরু হয়েছে। এই আট কিলোমিটার সড়ক পরবর্তীতে মেরিন ড্রাইভের অংশ হয়ে যাবে। ২৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের ব্যাপারে সার্ভে পরিচালনা করার জন্য গত ২৬ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ার এসএমইসি নামের একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। এই চুক্তির আলোকে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে বিদেশী এই কোম্পানি সার্ভে কার্যক্রম শুরু করেছে। মীরসরাই অংশ থেকে তারা সার্ভে করছে বলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বিদেশী এই প্রতিষ্ঠানকে প্রায় নয় কোটি টাকায় এই সার্ভে কার্যক্রম পরিচালনার কাজটি দেয়া হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
×