ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছয় লেনের মহাসড়ক নির্মাণ কাজ দ্রুত এগোচ্ছে

বগুড়া থেকে ঢাকায় পৌঁছা যাবে সাড়ে ৩ ঘণ্টায়

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ২২ অক্টোবর ২০২০

বগুড়া থেকে ঢাকায় পৌঁছা যাবে সাড়ে ৩ ঘণ্টায়

সমুদ্র হক ॥ উত্তরবঙ্গ থেকে চতুর্দেশীয় সড়ক যোগাযোগে ছয় লেনের (চার লেনের দুই ধারে ছোট যান চলাচলে দুই লেন) জাতীয় মহাসড়ক নির্মান কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে; যা চতুর্দেশীয় সড়ক যোগাযোগের নতুন দিগন্তের উন্মোচন করছে। সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) প্রকল্প-২ এর আওতায় এই সড়কের দৈর্ঘ টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল ও বগুড়া হয়ে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ দশমিক ৪ কিলোমিটার। এই সড়ক ঢাকা থেকে রংপুর পর্যন্ত দ্রুত এবং নিরাপদ যাত্রার পথ সুগম হবে। ইতোমধ্যে সাসেক-১ প্রকল্পের ঢাকার গাজীপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ছয় লেনের মহাসড়ক নির্মিত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন কিছু কাজ বাকি আছে। এদিকে সাসেক-২ প্রকল্পের উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের মধ্যে যে ব্রিজগুলো পড়েছে তাও ছয় লেনের উপযোগী করে নির্মিত হচ্ছে। ব্রিজগুলো নির্মাণ করছে ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (ডব্লিউবিবিআইপি)। সাসেক প্রকল্পের উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০২২ সালের মধ্যে এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত কাজ শেষ হওয়ার পর সাসেক-৩ প্রকল্পের আওতায় রংপুর থেকে লালমনিরহাটের বুড়িমারী পর্যন্ত ১২৪ কিলোমিটার এবং সাসেক-৪ প্রকল্পের আওতায় রংপুর থেকে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা পর্যন্ত ১৯৫ কিলোমিটার ছয় লেনের সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হবে। আশা করা হচ্ছে, এই দুই প্রকল্পের কাজ ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ হবে। এই সড়ক নির্মিত হলে ঢাকা ও উত্তরবঙ্গ থেকে ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে চতুর্দেশীয় সরাসরি সড়ক যোগাযোগের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে। সুদূরপ্রসারি ভাবনায় বাংলাদেশের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক কর্মকা-কে এগিয়ে নেয়াই সাসেক মহাসড়ক প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মাল্টি ট্রান্স ফ্যাসিলিটিজ (এমএফএফ) স্তর ভিত্তিক অর্থায়নে সাসেক উন্নীতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের আরেকটি নাম সাসেক রোড কানেকটিভিটি ঢাকা-নর্থওয়েস্ট করিডর রোড প্রজক্ট। ২০১৬ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। সাসেকের প্রকল্প সূত্র জানায়, চার লেনের মহাসড়কের কথা বলা হয়। তবে তা ছয় লেনের। দ্রুতগতির যানবাহন চলাচলের (ক্যারেজ ওয়ে) চার লেন। এর সঙ্গে অপেক্ষাকৃত ধীরগতির ছোট যানবাহন চলাচলের জন্য আরও দুই লেন যোগ করা হয়েছে। প্রকল্পের এক উর্ধতন কর্মকর্তা রবিবার সকালে এই প্রতিবেদককে জানান,আন্তর্জাতিকমানে নির্মিত সড়কটি চওড়া (১৫০ থেকে ১৬০ ফুট) হওয়ায় প্রতিটি লেনে যানবাহন স্বাচ্ছন্দ্যে দ্রুত চলাচল করতে পারবে। যাত্রীরা অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন। সড়কের ধারে কোন হাটবাজার ও জনসমাগম না থাকায় দুর্ঘটনার হার অনেক কমে যাবে। এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত ৮টি ভাগে (প্যাকেজ) নির্মাণ কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে। হাটিকুমরুল থেকে রংপুর পর্যন্ত সাতটি গ্রুপে নির্মাণ কাজ দ্রত এগিয়ে যাচ্ছে। এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতুর পূর্বপ্রান্ত পর্যন্ত একটি গ্রুপের কাজ শুরু হয়নি। তবে এ বছরই পুনঃদরপত্র হয়ে কাজ শুরু হবে। এই গ্রুপে জমি অধিগ্রহণ করাই আছে। এখন টেন্ডারের পর শুধু কাজ শুরু করা। হাটিকুমরুল থেকে রংপুর পর্যন্ত ৩২৬ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করে রাস্তা চওড়া করা হচ্ছে। এই পথে যাতায়াতকারী যাত্রীরা দেখতে পাচ্ছেন দ্রুত কাজ হচ্ছে। আন্তর্জাতিকমান রক্ষায় এই সড়কে কিছু নক্সা আধুনিকায়ন করা হয়েছে। যেমন পশ্চিমপ্রান্তে বঙ্গবন্ধু সেতু অতিক্রম করার পর সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলের ইন্টারচেঞ্জ (রাজশাহী ও রংপুর দিকে যাওয়ার পৃথক সড়কে সংযোগ) এমনভাবে নির্মিত হচ্ছে যাতে কোনভাবেই যানজটের সৃষ্টি না হয়। সকল যানবাহন বিনা বাধায় গন্তব্যের রুটে উঠতে পারে। দীর্ঘ এই মহাসড়কের পরিকল্পনায় শুরুতে যানজট নিরসনে তিনটি ফ্লাইওভার ছিল এলেঙ্গা বাজার,সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড় ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ। সিরাজগঞ্জের বাইপাসে ইকোনমিক জোন নির্মিত হওয়ায় সেখানেও একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে হচ্ছে। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জের ঝাওল ও বগুড়ায় দুটি রেল ওভারপাস নির্মিত হবে। উল্লেখ্য, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত মিশ্রগেজ রেলপথ নির্মাণের কাজ শীঘ্রই শুরু হচ্ছে। এভাবে প্রকল্পের সঙ্গে নুতন নক্সা যোগ হচ্ছে। ফলে প্রকল্প ব্যয় কিছুটা বেড়েছে। বিশেষ করে প্রকল্পের শুরুতে ভূমি অধিগ্রহণে যে অর্থ ব্যয় ধরা হয়েছিল পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তিনগুণ দাম বাড়িয়ে দেয়ায় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যায়। উত্তরবঙ্গের ছয় লেনের এই সড়ক নির্মাণ সাধারণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। বগুড়া থেকে ঢাকা যাতায়াতের কয়েক যাত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতু অতিক্রমের পর ঢাকা পর্যন্ত আগে বিভিন্ন পয়েন্টে যে জট বাঁধত এখন তা আর নেই। হঠাৎ কখনও অন্য কারণে জট বাঁধে। যাদের প্রাইভেট গাড়ি আছে তারা ভোরে রওনা দিয়ে কখনও সাড়ে ন’টা/দশটার মধ্যেই ঢাকা পৌঁছতে পারেন। এই প্রতিবেদক গত ৬ অক্টোবর বগুড়া থেকে সকাল সাতটার কোচে রওনা দিয়ে ঢাকা পৌঁছেন বেলা পৌনে বারোটায়। তাও পথে খাবার ও ওয়াশরুম ব্যবহারের আধাঘণ্টা বিরতি ছিল। এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত ছয় লেনের সড়ক নির্মিত হলে বগুড়া থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টায় ও রংপুর থেকে পাঁচ ঘণ্টায় ঢাকা পৌঁছা যাবে। এতকাল উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকা পৌঁছতে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তে জয়দেবপুর, চন্দ্রা, কালিয়াকৈর, মীর্জাপুরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে যানজটের কবলে পড়তে হতো। বর্তমানে এসব স্থানে ফ্লাই ওভার ও আন্ডারপাস যানজট কমিয়ে দিয়েছে। সূত্র জানায়, সাসেক প্রকল্পের ঢাকা থেকে বগুড়ার দূরত্ব ১শ’ ৯০ কিলোমিটার এবং ঢাকা থেকে রংপুরের দূরত্ব ৩শ’ ৭ কিলোমিটার। সূত্র জানায়, এই মহাসড়ক আন্তর্জাতিকমানে নির্মিত হচ্ছে আগামী ৫০ বছরের ভাবনায়। বর্তমান নক্সায় উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে দুটি রেলওয়ে ওভারপাস, ৩২ টি ব্রিজ, ১১ টি পথচারী ওভারপাস, একটি ইন্টারচেঞ্জ চারটি ফ্লাইওভার নির্মিত হবে। এদিকে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের রংপুর জোনের আওতায় ডব্লিউবিবিআইপির অধীনে উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের ১৯ টি পয়েন্টে নতুনভাবে নির্মিত ব্রিজগুলো ছয় লেন মহাসড়কের সঙ্গে মিল রেখে নির্মাণ করা হচ্ছে।
×