ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কামাল হোসেনকে বহিষ্কারের হুমকি গণফোরামের বিদ্রোহীদের

প্রকাশিত: ১৬:১০, ২১ অক্টোবর ২০২০

কামাল হোসেনকে বহিষ্কারের হুমকি গণফোরামের বিদ্রোহীদের

অনলাইন রিপোর্টার ॥ গণফোরামের বিদ্রোহী অংশ বলেছে, গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত না হলে দলের সভাপতি কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে ‘সাংগঠনিক ব্যবস্থা’ নেবে তারা। বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের এ অংশের নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী এই হুঁশিয়ারি দেন। গণফোরামের সাবেক এই নির্বাহী সভাপতি বলেন, এখানে (গণফোরাম) গঠনতন্ত্রবিরোধী যত কর্মকাণ্ড হয়েছে সব কিছু উনার (কামাল হোসেন) প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদদে হয়েছে। আপনি বলতেই পারেন যে উনার সম্মতিক্রমেই হয়েছে, যদি সোজাসুজি বলি। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, মিথ্যা, বানোয়াট, কল্পনাপ্রসূত সাক্ষাৎকার ও উদ্দেশ্যমূলক বিবৃতির মাধ্যমে জাতীয় নেতৃবৃন্দের চরিত্রহনন এবং দুষ্ট চক্রের পৃষ্ঠপোষকতা, রাজনৈতিক ও গঠনতন্ত্রবিরোধী কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কারণে শ্রদ্ধেয় ড. কামাল হোসনের বিষয়ে গঠনতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিতে আমরা বাধ্য হব। সাংগঠনিক ব্যবস্থা কী হতে পারে- এ প্রশ্নে সুব্রত বলেন, উনি যদি এসব কর্মকাণ্ড চালাতে থাকেন, আমি বলতে চাই যে, হয়ত ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব না, প্রয়োজনে তার আগেও যারা যারা এই সমস্ত কাজ করছে গঠনতন্ত্রবিরোধী, আমরা তাদের শোকজ করব। ড. কামাল হোসেনের ব্যাপারেও এটার কোনো ব্যত্যয় হবে না। উনি সভাপতি হোন বা আরেকজন সদস্যই হোন, উনি যদি গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকেন, তার ব্যাপারে যা ব্যবস্থা নিতে হয়, আমাদের গঠনতন্ত্রেই কাছে... কেন্দ্রীয় কমিটির দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতিক্রমে তাকে বহিষ্কার করা যায়। তার আগে শোকজ দিতে হয়। এটাই গঠনতন্ত্রের বিধান। এক প্রশ্নের জবাবে সুব্রত বলেন, আমরা বলেছিলাম, ড. কামাল হোসেনের বিষয়ে ২৬ ডিসেম্বর দলের কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু উনি এখনো রেজা কিবরিয়ার সঙ্গে যোগসাজশে গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন, সেজন্য এই প্রক্রিয়া আগেও হতে পারে। সেটা আমরা দেখব আগামী কাল থেকে উনি (কামাল হোসেন) কী ভূমিকা রাখেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গণফোরামকে রক্ষার প্রত্যায়’ শিরোনামে এই সংবাদ সম্মেলন করে দলের বিদ্রোহী অংশ। গত বছরের ২৬ এপ্রিল গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিলো গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে। সেই কাউন্সিলে কামাল হোসেন সভাপতি ও রেজা কিবরিয়া সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে একদল নেতাকর্মীকে নিয়ে বর্ধিত সভা করে ২৬ ডিসেম্বের গণফোরামের কাউন্সিল অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু। তার নেতৃত্বে ওই সভায় ২১০ সদস্যের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিও গঠন করা হয়। ওই সভা থেকে দলের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে রেজা কিবরিয়া, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মহসিন রশিদ, আওম শফিক উল্লাহ ও মোশতাক আহমেদকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়। এর পাল্টায় গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবে কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে মোস্তফা মহসিন মন্টু, আবু সাইয়িদ, সুব্রত চৌধুরী ও জগলুল হায়দার আফ্রিককে দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা আসে। ১২ ডিসেম্বর জাতীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করে দলের এ অংশটি। বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন বলেন, “রেজা কিবরিয়া ও মুকাব্বির খান- এই দুজনই কিন্তু বিদেশভিত্তিক রাজনীতি করেন। রেজা কিবরিয়ার মাটি ও মানুষের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। মুকাব্বির সাহেব বিদেশে থাকেন, মাঝে মধ্যে দেশে আসতেন, একটা সংগঠনও নাই তার নির্বাচনী এলাকায়। “২০১৮ সালের নির্বাচনের ৬ দিন আগে দেশে নির্বাচনটা করে উনি একটা অদৃশ্য শক্তির ইশারায় নির্বাচিত হয়ে গেলেন। সুলতান মো. মনসুরও একই ঘটনা ঘটিয়েছেন।” সভাপতি কামাল হোসেনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্টু বলেন, “গত ২৭ বছর দলের ভেতরে গণতন্ত্র নেই। উনি (কামাল হোসেন) ২৭ বছর যাবত সভাপতি। এর ভেতরে আমরা ৫/৬ জন কিন্তু সাধারণ সম্পাদক হয়েছি। সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক সাহেব সেক্রেটারি হয়েছেন, আবুল মাল আব্দুল মুহিত সাহেব সেক্রেটারি ছিলেন, সুব্রত দা অন্তর্বতীকালীন সেক্রেটারি ছিলেন, প্রকৌশলী আবুল কাশেম সাহেব ছিলেন, তারপরে আমি হলাম। আমরা সবাই নির্বাচিত সেক্রেটারি জেনারেল হয়েছি। আর উনি একটানা সভাপতি। উনি বলেন, ‘আমি ছেড়ে দেব’, কিন্তু পদ ছাড়েননি।” মন্টু বলেন, দলের কার্যক্রম হবে পার্টি অফিসে, ‘কোনো ব্যক্তির চেম্বার’ কিংবা বাসায় নয়। “আমাদের দুর্ভাগ্য যে, চেম্বার থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে আসতে হত। কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং গত ১৮ মাসের মধ্যে একটাও হয় নাই। এটা তো গণতন্ত্র চর্চা বলে না। তিন মাস পর পর মিটিং করার বিধান।” দলে রেজা কিবরিয়ার সদস্যপদ প্রাপ্তির সাথে সাথে সাধারণ সম্পাদক পদে তাকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি ‘গঠনতন্ত্রবিরোধী’ বলেও মন্তব্য করেন মন্টু্। “আমাদের গঠনতন্ত্রে যেটা আছে, একজনকে প্রাথমিকভাবে দুই বছর সংগঠনে কাজ করতে হবে। কিন্তু রেজা কিবরিয়া এসে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়া তো দূরের কথা, তাকে সরাসরি সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ করে দিলেন উনি (কামাল হোসেন)। এটা কিন্তু কাউন্সিলের মতামত সাপেক্ষে হয়নি, উনার ব্যক্তিগত মতামতে হয়েছে।” গণফোরামের সাবেক নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, “ড. কামাল হোসেনকে একটা বিভ্রান্তির দিকে নিয়ে গেছে। বলতে পারেন, উনার স্মৃতি বিভ্রাটের কারণে তাকে দিয়ে বার বার গণতান্ত্রিক বিপর্যয় ডেকে আনা হচ্ছে। আমরা তাকে অনুরোধ করতে চাই, উনি সম্মনিত ব্যক্তি। জাতির এই সঙ্কটে উনি জাতির বিবেক ও অভিভাবক হিসেবে আমরা তাকে দেখতে চাই।” অন্যদের মধ্যে জগলুল হায়দার আফ্রিক, খান সিদ্দিুকর রহমান, আইয়ুব খান ফারুক, আতাউর রহমান, হাসিব চৌধুরী, হেলাল উদ্দিন, লতিফুল বারী হামিন, নাসির হোসেন, রওশন ইয়াজদানি, তাজুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান বুলু, মাওলানা নাজিম উদ্দিন আজহারি, মুহাম্মদ উল্লাহ মধু, নীলুফার রহমান শাপলা, সানজিদ রহমান শুভ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
×