ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আয়ান আব্রাজ

বিশ্ব টেনিসে তারুণ্যের দাপট

প্রকাশিত: ২৩:৪৭, ২১ অক্টোবর ২০২০

বিশ্ব টেনিসে তারুণ্যের দাপট

করোনাভাইরাসের কারণে এবারের মৌসুমটা ছিল ভিন্ন রকমের। স্বাভাবিক গতি কেড়ে নেয় বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ নামের এই ভয়ঙ্কর ভাইরাস। করোনার বিভীষিকাময় ভয়-আতঙ্কের কারণে বিশ্ব টেনিসের অন্যতম মর্যাদার টুর্নামেন্ট উইম্বলডন তো বাতিলই করতে হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যা প্রথম দেখল বিশ্ব টেনিস। তথাপি বাকি দুটি টুর্নামেন্ট তথা ইউএস ওপেন এবং ফ্রেঞ্চ ওপেন পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। নিউইয়র্কে কোন দর্শককে অনুমতি দেয়া হয়নি গ্যালারিতে বসে খেলা দেখতে। যে কারণে এবার বন্ধ স্টেডিয়ামেই খেলতে হয়েছে টেনিস খেলোয়াড়দের। অন্যদিকে রোঁলা গ্যারোঁয় স্বল্পসংখ্যক দর্শককে অনুমতি দেয়া হয় গ্যালারিতে বসে খেলা দেখার জন্য। তথাপি গত মৌসুমের মতো এবারও তারুণ্যের দাপট দেখল বিশ্ব টেনিস। মৌসুমের শুরু থেকেই চমকপ্রদ পারফর্মেন্স উপহার দিয়েছে বেশ কয়েকজন তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়রা। যাদের মধ্যে সোফিয়া কেনিন, নাওমি ওসাকা এবং ইগা সুইয়াটেকের নাম উল্লেখযোগ্য। মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। এই টুর্নামেন্টের প্রথম আসরে ফাইনালে উঠেই বাজিমাত করেন তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় সোফিয়া কেনিন। অসাধারণ পারফর্ম করেই ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর শিরোপার স্বাদ পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের ২১ বছর বয়সী এই তরুণী। পিছিয়ে পড়েও ফাইনালে স্পেনের গারবিন মুগুরুজাকে ২-১ সেটে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের নারী এককে চ্যাম্পিয়ন হন কেনিন। রড লেভার এ্যারেনায় দুই ঘণ্টা তিন মিনিটের লড়াইয়ে বরাবরের মতো আগ্রাসী খেলা উপহার দিয়ে তিনি জিতেছেন ৪-৬, ৬-২ ও ৬-২ গেমে। এর আগে সেমিফাইনালে কেনিন সরাসরি সেটে ২-০ ব্যবধানে হারিয়েছিলেন র?্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর তারকা ও ফেবারিট অস্ট্রেলিয়ান এ্যাশলি বার্টিকে। ১৪তম বাছাই কেনিন এবারই প্রথম কোন গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে জায়গা করে নেন। মস্কোতে জন্ম নেয়া এই আমেরিকান খেলোয়াড় এর আগে কখনও কোন গ্র্যান্ড স্ল্যামের চতুর্থ রাউন্ডও পার হতে পারেননি। অন্যদিকে, স্প্যানিশ তারকা মুগুরুজা এর আগে দুটি গ্র্যান্ডস্লাম জিতেছেন। ২০১৬ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ২০১৭ সালে তিনি পেয়েছিলেন উইম্বলডন শিরোপার স্বাদ। তবে গেল বছরটা একদমই ভাল কাটেনি তার। ফলে অবাছাই হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে পা রেখেছিলেন তিনি। অন্যদিকে গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেরার মুকুট জিতে নেন কেনিন। সেই সময়ে তার বয়স ছিল ২১ বছর ৮০ দিন। তার আগে ২০০৮ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন রাশিয়ার মারিয়া শারাপোভা। ফাইনাল শেষে তাই প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের আনন্দে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি কেনিন। ম্যাচ শেষে নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার স্বপ্ন আজ আনুষ্ঠানিকভাবে সত্যি হয়েছে। এই অনুভূতি আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। এটা অসাধারণ ব্যাপার। যদি আপনার কোন স্বপ্ন থেকে থাকে, সেটা পূরণ করার জন্য চেষ্টা করুন, স্বপ্ন সত্যি হবেই।’ এরপরই বিশ্বব্যাপী শুরু হয় করোনাভাইরাসের ধাক্কা। তারপরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আয়োজন করা হয় ইউএস ওপেনের। আর এখানেও দেখা যায় তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় নাওমি ওসাকার ঝলক। ফাইনালের মঞ্চে ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কাকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ইউএস ওপেনের নারী এককে চ্যাম্পিয়ন হন ওসাকা। ফ্ল্যাশিং মিডোসে প্রথম সেটে ৩১ বছর বয়সী সাবেক এক নম্বর তারকা আজারেঙ্কার সামনে দাঁড়াতেই পারেননি ওসাকা। কিন্তু পরের দুই সেটে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ জিতে নেন ১-৬, ৬-৩, ৬-৩ গেমে। ২২ বছর বয়সী এই তারকার এটি তৃতীয় গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট। ইউএস ওপেনের দ্বিতীয়। এ নিয়ে তিনটি গ্র্যান্ড স্লামের ফাইনালে খেলে সবকটিতেই জিতলেন ওসাকা। ২০১৮ ইউএস ওপেন জয়ের পর জেতেন ২০১৯ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া পুলিশের বর্ণবাদী হত্যাকা- খুব নাড়িয়ে দিয়েছে ওসাকাকে। তাই সাত ম্যাচের জন্য টার্গেট করে সাত ব্যক্তির নামাঙ্কিত মাস্ক পরেছিলেন। যারা সেখানে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হয়েছেন। ফাইনালে ওসাকা যে মাস্কটি পরেছিলেন, তাতে লেখা ছিল তামির রাইসের নাম। ২০১৪ সালে ওহাইও রাজ্যে এক সন্দেহভাজনের অস্ত্র নিয়ে ঘোরার খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে খেলনা বন্দুক হাতে থাকা এই কৃষ্ণাঙ্গ বালককে গুলি করে হত্যা করে। ওসাকা যেন এসব শোককে শক্তি বানিয়েই কোর্টে নেমেছিলেন এবার। যার ফলে ইউএস ওপেন অধরাই থেকে যায় আজারেঙ্কার। আগের দুই ফাইনালে ২০১২ ও ২০১৩ আসরে হেরেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সেরেনা উইলিয়ামসের বিপক্ষে। ফ্রেঞ্চ ওপেনেও আরেক তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের শো দেখা গেছে। দুর্দান্ত খেলেই রোঁলা গ্যারোঁর নতুন রানীর মুকুট পড়েন ইগা সুইয়াটেক। সোফিয়া কেনিনকে পরাজিত করে ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর শিরোপা জয়ের স্বাদ পান। টুর্নামেন্টের ফাইনালে পোল্যান্ডের এই তারকা খেলোয়াড় ইগা সুইয়াটেক ৬-৪ এবং ৬-১ ব্যবধানে পরাজিত করেন আমেরিকান তারকা সোফিয়া কেনিনকে। সেইসঙ্গে পোল্যান্ডের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ফরাসী ওপেনের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়লেন ইগা সুইয়াটেক। তাও আবার অবাছাই খেলোয়াড় হিসেবে। করোনাভাইরাসের কারণে এবারের ফ্রেঞ্চ ওপেনে অংশ নেননি বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ তারকা এ্যাশলে বার্টি। চোটের কারণে খেলেননি ইউএস ওপেনের চ্যাম্পিয়ন নাওমি ওসাকা। এই ইনজুরিতে ছিটকে যান সেরেনা উইলিয়ামসও। তাই রোঁলা গ্যারোঁয় এবার ফেবারিটের তকমাটা গায়ে মাখানো ছিল সিমোনা হ্যালেপের।
×