ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে নতুন জাহাজ বুকিং হয়নি ॥ খুলনা ও নারায়ণগঞ্জে বিক্ষোভ

নৌশ্রমিক ধর্মঘটে পণ্য খালাস বন্ধ, জলপথে অচলাবস্থা

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ২১ অক্টোবর ২০২০

নৌশ্রমিক ধর্মঘটে পণ্য খালাস বন্ধ, জলপথে অচলাবস্থা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ নৌশ্রমিক ফেডারেশনের এগারো দফা এবং লাইটারেজ শ্রমিকদের ১৫ দফা দাবিতে চলমান নৌশ্রমিক ধর্মঘটে অচল হওয়ার পথে নদী বন্দরগুলো। ফলে চট্টগ্রাম, মওলাসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্য খালাস বিঘিœত হচ্ছে। জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে নৌশ্রমিক ধর্মঘটে বহির্নোঙ্গরে পণ্য লাইটারিং (খালাস) বন্ধ রয়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ জলপথে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে মংলা, খুলনা, বরিশাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ও নারাণগঞ্জ নৌবন্দরে। খাদ্যভাতা প্রদানসহ ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ধর্মঘট বা কর্মবিরতি পালনকালে খুলনা ও নারায়ণগঞ্জে সোমবার শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার। চট্টগ্রাম অফিস জানান, নৌযান শ্রমিকদের লাগাতার ধর্মঘটের ফলে বন্ধ হয়ে গেছে চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙ্গরে পণ্য লাইটারিং এবং অভ্যন্তরীণ জলপথে মালামাল পরিবহন। মঙ্গলবার ধর্মঘটের প্রথম দিনেই দেখা দেয় অচলাবস্থা। কর্মসূচী অব্যাহত রাখার ঘোষণায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন আমদানিকারক এবং বন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই বন্ধ থাকে বহির্নোঙ্গরে মাদার ভেসেল থেকে পণ্য লাইটারিং। আগের দিন যে পণ্যগুলো জাহাজে তোলা হয়েছিল সেগুলোও পরিবাহিত হচ্ছে না। ফলে অনেক জাহাজ ভাসছে বিভিন্ন ধরনের পণ্যবোঝাই অবস্থায়। নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত সকল সংগঠন এ কর্মসূচীতে যোগ দিয়েছে। ফলে কর্ণফুলীতে অলস ভেসে আছে দেড় হাজারেরও অধিক লাইটার, ট্যাঙ্কার ও বাল্কহেড। বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসাইন জানান, নৌযান শ্রমিকদের দাবিগুলো নিয়ে দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক এমনকি বহুপাক্ষিক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তাতে কোন সমাধান আসেনি। ফলে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী লাগাতার কর্মবিরতিতে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। নৌযান শ্রমিকদের এ কর্মসূচী চলছে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বানে। এর মধ্যে ফেডারেশনের দাবি খাদ্য ভাতাসহ ১১ দফা। আর লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের দাবি খাদ্য ভাতা, পরিচয়পত্র, নিয়োগপত্র প্রদানসহ ১৫ দফা। উভয় সংগঠনই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচী চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোঃ ওমর ফারুক জানান, শ্রমিকদের ধর্মঘটের ফলে বহির্নোঙ্গরে পণ্য লাইটারিং বন্ধ আছে। তবে জেটিতে কন্টেনার ও জেনারেল কার্গো উঠানামা স্বাভাবিক রয়েছে। বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারিও অন্যান্য দিনের মতোই চলছে। অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী জাহাজগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ওয়াটার টান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশিদ জনকণ্ঠকে জানান, ধর্মঘটের কারণে মঙ্গলবার নতুন করে কোন জাহাজ বুকিং হয়নি। আগের দিন কিছু জাহাজে পণ্য বোঝাই হয়েছিল। সেই জাহাজগুলোও গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে না গিয়ে পণ্য নিয়েই ভাসছে। ধর্মঘট নিরসনে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম মঙ্গলবার এক পত্রের মাধ্যমে এ আহ্বান জানান। খুলনা অফিস জানায়, বাল্কহেডসহ সব নৌযান ও নৌপথে চাঁদাবাজি-ডাকাতি বন্ধ করা, বেতন-ভাতার সুযোগ-সুবিধাসহ ১১ দফা দাবিতে মঙ্গলবার খুলনায় নৌযান শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করে। ধর্মঘটের সমর্থনে সকালে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের খুলনা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে মহানগরীর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঘাট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন শ্রমিকরা। মংলা ॥ নৌযান শ্রমিকদের নিয়োগপত্র চালু, সার্ভিস বুক প্রদান ও শতভাগ খাদ্য ভাতা প্রদানসহ ১১ দফা দাবিতে মধ্যরাত থেকে মংলা বন্দরসহ সারাদেশের নদীপথে পণ্যবাহী নৌযানের শ্রমিকেরা অনির্দিষ্টকালে কর্মবিরতি পালন শুরু করেছেন। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মোঃ বাহারুল ইসলাম বাহার জানান, এই ১১ দফা দাবি নিয়ে গতরাতে ঢাকায় বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের সঙ্গে মালিক ও শ্রমিকদের বৈঠক হয়। গভীর রাত পর্যন্ত এ বৈঠক হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। তাই গত মধ্যরাত থেকে নৌযান শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালে কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও জানান, ১১ দফা দাবি নিয়ে গত দুই বছরে নৌযান শ্রমিকরা ৩ বার কর্মবিরতি পালন করেছে। এরপর শ্রমপ্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মালিক-শ্রমিক বৈঠকে দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলেও তা মেনে নেয়নি মালিক সমিতির কতিপয় নেতা। বরিশাল ॥ নৌপথে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি বন্ধ, খাদ্যভাতা প্রদানসহ ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বরিশালে শুরু হয়েছে নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতি। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এ ধর্মঘট দাবি পূরণের বিষয়ে কোন সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার এ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের বরিশাল অঞ্চলের সভাপতি শেখ আবুল হাসেম। তিনি জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবথেকে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ লক্ষ্যে আপাতত যাত্রীবাহী নৌযান এ কর্মসূচীর বাইরে রাখা হয়েছে। তবে সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিট অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকে সকল পণ্যবাহী নৌযান বন্ধ রেখেছে বরিশালের শ্রমিকরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন কর্মসূচী চলবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নদী বন্দরে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌ ধর্মঘট শুরু করেছে নৌযান শ্রমিকরা। নৌ-ধর্মঘটের কারণে আশুগঞ্জ নৌ বন্দরে সার, রড, সিমেন্ট, পাথর, কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আটকা অর্ধশতাধিক জাহাজ। এছাড়া পণ্য উঠানামাও বন্ধ রয়েছে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে নদী বন্দরের কার্যক্রম। বেকার হয়ে পড়েছে বন্দরের হাজারো শ্রমিক। সোমবার রাত ১২টা ১মিনিট থেকে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে সারাদেশের ন্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌযান-শ্রমিকদের ধর্মঘট শুরু করে শ্রমিকরা। তবে আশুগঞ্জ থেকে ৬টি নৌ রুটে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। প্রতিদিন ভারতের ত্রিপুরাসহ দেশের সিলেট বিভাগ, ময়মনসিংহ বিভাগ, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানের নানা পণ্য নিয়ে আশুগঞ্জ বন্দরে নোঙ্গর করে অন্তত অর্ধশতাধিক জাহাজ। নারায়ণগঞ্জ ॥ নৌযান শ্রমিক কর্মচারীদের খাদ্য ভাতা নির্ধারণ করে চলতি বছরের মার্চ থেকে কার্যকর করাসহ ১৫ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে সোমবার ১৯ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা থেকে সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও লাগাতার কর্মবিরতি পালন করছে নৌযান শ্রমিকরাও। মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ নগরীর ৫নং ঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে কর্মবিরতির সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সবুজ শিকদার, কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হাবিবুর রহমান মাস্টার, আক্তার হোসেন, কবির হোসেন, মিরাজ, হাফেজ শাহাদাতসহ জেলা কমিটির নেতাকর্মীরা। এছাড়া নদীবন্দরে সামনে নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে বিপুল সংখ্যক পণ্যবাহী জাহাজ। শ্রমিকরা এ সময় অসল সময় পার করছেন। লোড আনলোড বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে বসে আছেন লোক আনলোড শ্রমিকরা।
×