ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় নিষ্প্রাণ আয়োজন ॥ আজ দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ২১ অক্টোবর ২০২০

করোনায় নিষ্প্রাণ আয়োজন ॥ আজ দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রতিবছর শারদোৎসবের আগমনী বার্তায় চারদিক মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এবার সেই উৎসব হচ্ছে শুধু আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে। সারাদেশেই নিষ্প্রাণ আয়োজনের প্রস্তুতি। নানা থিমের চারদিক রোশনাই করা শারদোৎসব নয়, বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে এবার সাত্ত্বিক দুর্গাপূজার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এবার প্রাণের উচ্ছ্বাস যেন নেই কোথাও। কিন্তু উৎসব কখনও বসে থাকে না, দুর্গাপূজার ঘণ্টাধ্বনি ইতোমধ্যেই বেজে উঠেছে। আজ বুধবার দেবীর বোধন। শারদীয় দুর্গাপূজার প্রাক্কালে এই বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙ্গার জন্য বন্দনা পূজা করা হবে। ম-পে-মন্দিরে আজ বুধবার পঞ্চমীতে সায়ংকালে তথা সন্ধ্যায় এই বন্দনা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। আনন্দময়ীর আগমনী সুরে অনুরণিত বাঙালী হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিটি ঘরে ঘরে। কিন্তু সেই উৎসব এবার সত্যিই নিষ্প্রাণ, আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুর্গাষষ্ঠীতে খড়্গ-কৃপাণ, চক্র-গদা, তীর-ধনুক আর ত্রিশূল হস্তে শক্তিরুপেন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধে মণ্ডপে মণ্ডপে ঠাঁই নেবেন। জেগে উঠবেন দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দশভুজা দেবী দুর্গা। খুলে যাবে দশপ্রহরণধারিণী ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার অতল স্নিগ্ধ চোখের পলক। শুরু হবে পাঁচ দিনব্যাপী বাঙালী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আগামীকাল ষষ্ঠীতে দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। অবশ্য আজ বুধবার সন্ধ্যায় বোধনের মধ্য দিয়ে দেবীর আগমনধ্বনি অনুরণিত হতে শুরু করবে। ২৩ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ২৪ অক্টোবর মহাষ্টমী এবং ২৫ অক্টোবর মহানবমী শেষে ২৬ অক্টোবর বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের দুর্গাপূজা। করোনার কারণে জনসমাগম এড়াতে এবার মহাষ্টমীতে ঢাকাসহ অধিকাংশ জায়গাতেই কুমারী পূজার আয়োজন থাকছে না। বোধন দুর্গাপূজার অন্যতম একটি আচার। বোধন শব্দের অর্থ জাগরণ বা চৈতন্যপ্রাপ্ত। পূজা শুরুর আগে সন্ধ্যায় বেলশাখায় দেবীর বোধন দুর্গাপূজার একটি অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ। সাধারণত শুক্লাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বোধন হলেও এবার তিথি অনুযায়ী পঞ্চমীতেই বোধন পড়েছে। বিভিন্ন পুরাণ অনুসারে, ভগবান রামচন্দ্র শরতকালে রাক্ষসরাজ রাবণকে বধ করার উদ্দেশ্যে দুর্গাপূজা করেন। তিনি অকালে এই বোধন করেন বলেই এটি অকালবোধন নামেও খ্যাত। তবে বসন্তকালে চৈত্র মাসে যে দুর্গাপূজা তথা বাসন্তিপূজা অনুষ্ঠিত হয় তাতে বোধন করার প্রয়োজন হয় না। সনাতন বিশ্বাস ও পঞ্জিকামতে, জনগণের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গার এবার দোলায় (পালকি) চড়ে স্বর্গালোক থেকে মর্ত্যালোকে (পৃথিবী) আসবেন। যার ফল হচ্ছে মড়ক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ, মহামারীর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে। দেবী স্বর্গালোকে বিদায় নেবেন গজে (হাতি) চড়ে। যার ফল হিসেবে বসুন্ধরা শস্যপূর্ণা হয়ে উঠবে। এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর দেবী দুর্গার আবাহন বা মহালয়ার মধ্য দিয়ে সূচনা হয়েছিল দেবীপক্ষের। মল মাস অর্থাৎ অশুভ মাস হওয়ায় এবার মহালয়ার ৩৫ দিন পর হেমন্ত ঋতুর কার্তিক মাসে শুরু হচ্ছে দুর্গাপূজা। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, করোনাকালে দুর্গাপূজার উৎসবে যেমন ছেদ পড়েছে, তেমনি ঢাকাসহ সারাদেশে ম-প-মন্দিরের সংখ্যাও কমেছে। এ বছর সারাদেশে ৩০ হাজার ২৩১টি পূজাম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। করোনার কারণে এবার এক হাজার ১৮৫টি পূজা কম হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীতে গতবারের ২৩৭টি থেকে ৬টি কমে এবার ২৩১টি পূজাম-পে দুর্গাপূজার আয়োজন থাকছে। পূজা উদযাপন পরিষদ থেকে আগেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল যে, করোনার কারণে এবারের দুর্গাপূজায় ম-পগুলোতে আলোকসজ্জা, বিশেষ সাজসজ্জা, মেলা, আরতি প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিহার করা হবে। ভক্তিমূলক বাদে অন্য কোন গান বাজানো যাবে না। আতশবাজি বা পটকার ব্যবহার করা যাবে না। সন্ধ্যার মধ্যে আরতি শেষ করে দর্শনার্থীদের মন্দিরে আসতে নিরুৎসাহিত করা হবে। এজন্য রাত নয়টার পর মন্দির বন্ধ করে দিয়ে আর কোন দর্শনার্থীকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। মন্দিরগুলোতে নারী-পুরুষের আলাদা প্রবেশের ব্যবস্থা থাকবে। সামাজিক দূরত্ব মেনে ও মাস্ক ব্যবহার করে ভক্তরা অঞ্জলি দিতে পারবেন। বিজয়া দশমীতে বিজয়ার শোভাযাত্রাও হবে না। প্রসাদ বিতরণেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। মন্দিরগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিমা বিসর্জন দেবে। তবে বিজয়া দশমীতে সিঁদুর খেলা নিয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সপ্তমী তিথিতে দুপুর ১২টা ১ মিনিটে সব মন্দিরে পৃথিবী থেকে করোনামুক্তি ও সবার আরোগ্য কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
×