ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আলুর খুচরা দাম ৩৫ টাকা কেজি নির্ধারণ

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ২১ অক্টোবর ২০২০

আলুর খুচরা দাম ৩৫ টাকা কেজি নির্ধারণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি আলুর দাম ৩৫ টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ বুধবার থেকে ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র এই দাম কার্যকর করার সরকারী নির্দেশনা রয়েছে। এর আগে কৃষি বিপণন অধিদফতর থেকে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতিকেজি আলুর দাম ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে তা কার্যকর হয়নি। ফলে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ক্রেতাদের কেজিতে ২০-২৫ টাকা বেশি দিয়ে ৫০-৫৫ টাকা দিয়ে আলু কিনতে হয়েছে। সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশে এমন কোন তরকারি নেই যাতে আলুর ব্যবহার হয় না। সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের ভরসা ছিল এই আলু। কিন্তু সেই আলুতে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে হিমাগার মালিক, আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা করছে। এখনও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে প্রতিকেজি আলু ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, আলুর কোল্ডস্টোরেজ, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম পুনর্নির্ধারণ করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইফসুফের সভাপতিত্বে ফার্মগেট খামার বাড়িতে দাম পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড এ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন এবং জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর, বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোজ্জাম্মেল হোসেন, আলুর পাইকারি ও আড়তদার ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। কৃষি বিপণন অধিদফতরের প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে কৃষি বিপণন আইন-২০১৮ এর ধারা ৪(ঝ) অনুযায়ী আলুর দাম কোল্ড স্টোরেজে প্রতিকেজি ২৭ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে প্রতিকেজি ৩০ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি ৩৫ টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়। উল্লেখিত, নির্ধারিত মূল্যে কোল্ড স্টোরেজ, পাইকারি এবং খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতাসহ ত্রিপক্ষ যেন আলু বিক্রি করে সেজন্য কঠোর মনিটরিং ও নজরদারির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সকল জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয়েছে। এর আগে গত ১৪ অক্টোবর প্রতিকেজি আলু ২৩ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে প্রতিকেজি আলু ২৫ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই দাম খুচরা পর্যায়ে কার্যকর হয়নি। বরং সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে আলু। এতে করে নি¤œœবিত্ত স্বল্প আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে। এদিকে, খুচরা পর্যায়ে আলুর প্রতিকেজি সর্বোচ্চ মূল্য ৩৫ টাকা নির্ধারণ হয়েছে। আজ বুধবার থেকে এই মূল্য কার্যকর হবে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, এই দাম আগামীকাল থেকে কার্যকর হবে। তবে অনেকেই যেহেতু আগে থেকে বেশি মূল্যে আলু কিনে রেখেছেন তাই কোথাও কোথাও মূল্যের তারতম্য হতে পারে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আলু পুনর্নির্ধারিত দামে বিক্রি হবে-কৃষিমন্ত্রী ॥ খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আলুর দাম ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে পুনর্নির্ধারণ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কৃষিমন্ত্রী এ কথা জানান। কেজিপ্রতি আলুর দাম ৩৫ টাকার মধ্যে নির্ধারণ করা হবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় খামারবাড়িতে কৃষি বিপণন অধিদফতরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে আলুর দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়। আড়তদার, খুচরা ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বসে দামটা নির্ধারণ করেছে। তিনি বলেন, আগেরবছর কৃষকরা আলুর দাম পায়নি, সরকার চেষ্টা করেও দাম বাড়াতে পারেনি। এতে আলু চাষের এলাকা কমেছে, উৎপাদনও কিছু কম হয়েছে। এর মধ্যে কোভিড মহামারী আসল। আমাদের এবার লক্ষ্য ছিল আলুর দাম বাড়ানোর জন্য। দাম বাড়াতে গিয়ে এমন একটা বিপর্যয়কর অবস্থা হবে, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ, রিক্সাওয়ালা-ভ্যানওয়ালা, শ্রমিক তাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। এত দাম চিন্তাই করা যায় না। ৫০ টাকা কিংবা এরও বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, এবার ত্রাণের মধ্যে আলু দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদেরও আলু দিতে বলেছিলাম। এজন্য আলুর ব্যবহারটাও বেশি হয়েছে। এছাড়া গত পাঁচ মাস ধরে একটানা বৃষ্টি। বৃষ্টিতে শাক-সবজি অনেক কমে গেছে, মানুষ আলু ওপর নির্ভরশীল হয়েছে। তা না হলে কোনক্রমেই আলুর দাম এত বেশি হওয়ার কথা নয়। কৃষিমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীরা সবসময়ই মুনাফার দিকে থাকে। তারা দেখছে, এবার আলু দেরিতে আসবে। এজন্য তারা আলুর দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। খোলা বাজার অর্থনীতি, আমরা তো ওইভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমি সব সময় বিশ্বাস করি সেনাবাহিনী, পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনী দিয়ে কোনদিনই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। সরবরাহ না বাড়ালে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। আমরা মনিটর করতে পারি, চাপ দিতে পারি। অস্বাভাবিক কিছু একটা করলে সেখানে ব্যবস্থা নেয়া যায়। তিনি আশা রেখে আরও বলেন, নতুন আলু আসলে দাম কমে যাবে। এবার আলু অনেক হবে। আলুতে আমাদের ঘাটতি থাকার কোন কারণ নেই। আমাদের পর্যাপ্ত আলু হয়। আশা করি, ভবিষ্যতে এই সমস্যা হবে না। আমরা এখনও চিন্তা করছি যে, আলু কীভাবে রফতানি করা যায়। তিনি বলেন, এই বিপর্যয়ের জন্য আমরা খুবই দুঃখিত। স্বল্প আয়ের মানুষ কষ্ট করছে।
×