ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশের তদন্ত কমিটি

এসআই আকবর গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ২১ অক্টোবর ২০২০

এসআই আকবর গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিলেটে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ সদর দফতর। আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা দেশে না বিদেশে পালিয়ে আছে তা মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাকে গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সদর দফতরের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক মোঃ সোহেল রানা। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, সিলেটের বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই (উপপরিদর্শক) আকবর হোসেনকে বা কারা বা কোন কর্মকর্তা পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে কিনা তা নিশ্চিত হতেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া কোন কর্মকর্তার দায়িত্বহীনতা বা গাফিলতির কারণে এস আই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতেই এমন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে একজন সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শককে। বাকি দুইজনও দায়িত্বশীল পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা। গত ১০ অক্টোবর বিকেলে সিলেটের বন্দর বাজার ফাঁড়ির পুলিশ রায়হান আহমেদ (৩৪) নামের একজনকে গ্রেফতার করে। অভিযোগ মোতাবেক, রাতে ফাঁড়িতে তার ওপর নির্যাতন চালায় পুলিশ। তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য টাকা দাবি করে। ভোরে অপরিচিত একটি মোবাইল ফোন থেকে রায়হানের পিতাকে কল করা হয়। সকালে পিতা থানায় গেলে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলা হয়। গিয়ে জানতে পারেন, তার ছেলে মারা গেছে। লাশের গায়ে নির্যাতনের ভয়াবহ চিহ্ন দেখা যায়। এমন ঘটনার পর ওই ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই আকবর হোসেন ভূঁইয়া দাবি করেন, ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনিতে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে। যেখানে গণপিটুনির ঘটনাস্থলের কথা বলা হয়, সেখানকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়। পর্যালোচনায় গণপিটুনিতে রায়হানের নিহত হওয়ার কোন তথ্য পাওয়া যায় না। এ ঘটনায় ১২ অক্টোবর সিলেট কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। মামলা দায়েরের পর তদন্তভার দেয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআইকে। রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চার পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয় তিন পুলিশ সদস্যকে। মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জনকণ্ঠকে বলেন, ঘটনার পর থেকেই রায়হানের মৃত্যুর সঙ্গে এসআই আকবরের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে। তখনও এস আই আকবর পুলিশের মধ্যেই অর্থাৎ থানা বা ফাঁড়িতে ছিল। এমনকি মামলা দায়েরের পরেও এস আই আকবর পুলিশের মধ্যেই ছিল। তারপরও একজন অভিযুক্ত এস আই পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে পালিয়ে গেল তা একটি রহস্যের বিষয়। আমরা সেই রহস্যের কিনারা করার চেষ্টা করছি। এস আই আকবরকে গ্রেফতার করা সম্ভব হলেই রায়হানের মৃত্যু রহস্যের কিনারা হবে। এসআই আকবরকে গ্রেফতার করতে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত আছে। পাশাপাশি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর পরই এসআই আকবর যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন, এজন্য বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগ ও সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে ছবিসহ বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। পিবিআইয়ের তদন্তকারী দল ইতোমধ্যেই কয়েক দফায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। প্রাথমিক তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অভিযুক্ত উপ-পরিদর্শক আকবর হোসেনকে গ্রেফতার করা জরুরী। এস আই আকবরকে গ্রেফতার করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ কড়া নির্দেশনা জারি করেছেন। সে মোতাবেক সারাদেশে অভিযান অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যেই তদন্তের ধারাবাহিকতায় গত ১৪ অক্টোবর সকাল নয়টার দিকে সিলেট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিসবাহ উদ্দিন ও সজিব আহমদের নেতৃত্বে আখালিয়া এলাকার নবাবী মসজিদের পঞ্চায়েত করবস্থান থেকে রায়হানের লাশ তোলা হয়েছিল। পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
×