ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অনলাইনে নয়, সরাসরি ভর্তি পরীক্ষাই হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ে

প্রকাশিত: ১৮:০৭, ২০ অক্টোবর ২০২০

অনলাইনে নয়, সরাসরি ভর্তি পরীক্ষাই হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ে

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ অনলাইনে নয়, আগের নিয়মেই সরাসরি ভর্র্তি পরীক্ষার মাধ্যমে অনার্স প্রথম বর্র্ষে শিক্ষার্র্থী ভর্র্তি করাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি ২০০ নম্বরের পরিবর্তে এবার ১০০ নম্বরে ভর্তিচ্ছুদের মেধাক্রম তৈরি করা হবে। ভর্র্তিচ্ছু পরীক্ষার্থী ঢাকায় না এসে স্ব স্ব বিভাগে যাতে পরীক্ষা দিতে পারে, সেই চিন্তাও করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এদিকে স্কুলে বিভিন্ন শ্রেনীর বার্ষিক পরীক্ষার বিষয়ে আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে সিদ্ধান্ত জানাবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে মঙ্গলবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ডিনস কমিটির বৈঠকে অনলাইনে পরীক্ষা না নিয়ে ভর্র্তি পরীক্ষার মাধ্যমে অনার্স প্রথম বর্র্ষে শিক্ষার্র্থী ভর্র্তি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্র্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ভর্র্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানান। এবারের ভর্র্তিপরীক্ষার পূর্ণমান থাকবে ১০০। এর মধ্যে লিখিত পরীক্ষার নম্বর থাকবে ৫০ এবং এমসিকিউ নম্বর ৩০। বাকি ২০ নম্বর পরীক্ষার্র্থীর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে দেয়া হবে। ড. এএসএস মাকসুদ কামাল বলেন, করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে এবার পরীক্ষা কেন্দ্র বিভাগভিত্তিক করার চিন্তা রয়েছে। ডিনস কমিটির ভর্র্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত এই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনার পর চূড়ান্ত হবে। কবে এই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে তা জানতে চাইলে সভায় উপস্থিত থাকা একজন ডিন বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে শিক্ষার্থীদের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ভর্তির তারিখ নির্ধারণ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। গতবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলের উপর ১০০ নম্বরের মূল্যায়ন হয়। বাকি ১০০ নম্বরের মধ্যে এমসিকিউ ৬০ নম্বর ও লিখিত অংশে ৪০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে এ বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এসএসসি ও জেএসসি এবং সমমান পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফল তৈরি করা হবে। এ ঘোষণার পর করোনা পরিস্থিতিতে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া বা না হওয়া নিয়ে দ্বিধায় থাকা শিক্ষার্থীরা স্বস্তি পেলেও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে নতুন করে ভাবনায় পড়ে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে গত শনিবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল ওই সভায় দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অংশ নেন। জানা গেছে, করোনা মহামারির কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনলাইনে নেয়ার সিদ্ধান্ত অনেক উপাচার্যরা মত দিয়েছেন ওই বৈঠকে। তবে এমন সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়েছে অনেক শিক্ষার্থী। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে আজ ঘোষণা: মাধ্যমিকের বার্ষিক পরীক্ষার বিষয়ে আজ বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্স করবেন। দুপুর ১২টায় এ প্রেস কনফারেন্স করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের সংবাদ বিবৃতি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন। মাধ্যমিক স্তরে ষষ্ঠ, সপ্তম, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বার্ষিক মূল্যায়ন কীভাবে করা হবে নাকি হবে না, তা জানাতে সংবাদ সম্মেলন করবেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও পাঠদানের ধারাবাহিকতা রক্ষায় অনলাইন, টিভি ও বেতারে পাঠদান চালিয়ে আসছে সরকার। করোনার কারণে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা, অষ্টম শ্রেণির জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা এবং সর্বশেষ এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। চলতি বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত নিজ বিদ্যালয়ে মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সাপেক্ষে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী পাঠদানের জন্য নবেম্বর থেকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। তবে নবেম্বরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা যাবে না বলে মনে করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেক্ষেত্রে পঞ্চম শ্রেণির মূল্যায়ন না করে অটো পাস দেয়া ছাড়া কোনও বিকল্প থাকবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে গণস্বাক্ষরতা অভিযানের সহযোগী সংগঠন ও এডুকেশন ওয়াচ। মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংগঠনগুলোর পক্ষে স্মারকলিপি দিয়ে পরীক্ষা বন্ধ এবং প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা না করার আহ্বান জানানো হয়। করোনা মহামারি ও করোনা পরবর্তীতেও এই পাবলিক পরীক্ষা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে স্মারকলিপিতে। গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বরাবর স্মারকলিপি দেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও এডুকেশন ওয়াচের সদস্য সচিব রাশেদা কে চৌধুরী। স্মারকলিপিতে গণস্বাক্ষরতা অভিযান, এর সহযোগী সব সংগঠন এবং এডুকেশন ওয়াচের শতাধিক সদস্যের স্বাক্ষর নিয়ে সংগঠনগুলোর পক্ষে স্মারকলিপি দেয়া হয়। স্মারকলিপিতে মুখস্থ নির্ভরতা, গাইড-বই অনুসরণ, কোচিং বাণিজ্য ও পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের প্রসার না ঘটিয়ে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থী মূল্যায়নের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। স্মারকলিপিতে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রথিতযশা সকল শিক্ষাবিদের মতে, পঞ্চম শ্রেণিতে প্রবর্তিত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার উদ্দেশ্য সফল হয়নি। বিভিন্ন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এই পরীক্ষাটি মুখস্থ নির্ভরতা, গাইড-বই অনুসরণ, কোচিং বাণিজ্য ও পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের প্রসার ঘটিয়েছে। বিদ্যালয়ের পাঠদান এবং শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মনোযোগ জ্ঞান অর্জন থেকে সরে পরীক্ষামুখী হয়ে গেছে। প্রয়াত অধ্যাপকড. আনিসুজ্জামানের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ২০১৮ সালে সর্বজন ¤্রদ্ধেয় জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছিলেন ‘প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার আদৌ কোনও প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।’ সম্প্রতি স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ তার একটি বক্তব্যে বলেছেন, ‘পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা স্থায়ীভাবে বন্ধ হোক।’
×