ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এবার আন্দোলনে নতুন সরকারি তিন শতাধিক কলেজের শিক্ষক

প্রকাশিত: ১৮:০৫, ২০ অক্টোবর ২০২০

এবার আন্দোলনে নতুন সরকারি তিন শতাধিক কলেজের শিক্ষক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্যাডার-নন ক্যাডার দ্বন্দে জটিলতায় পরা নতুন তিন শতাধিক সরকারি কলেজের শিক্ষকরা এবার দ্রুত সংকট নিরসনের দাবিতে আন্দোলন নেমেছেন। সংকট নিরসনে মঙ্গলবার দেশজড়ে একযোগে কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে শিক্ষকরা বলেছেন, তারা ক্যডারে অন্তর্ভুক্তি চাননা। সকল শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারিতে অন্তর্ভুক্ত করে আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের মধ্যে অ্যাডহক নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক ত্রুটিজনিত কারণে কোন শিক্ষক-কর্মচারীকে বঞ্চিত করা যাবেনা। শিক্ষকরা কর্মসূচি থেকে ১৪ দফা দাবিও তুলে ধরেছেন। বর্তমান সরকারের মেয়াদেই গত কয়েক বছরে সরকারি হয়েছে তিন শতাধিক বেসরকারি কলেজ। কিন্তু এসব কলেজের শিক্ষকদের শিক্ষা ক্যাডারে উন্নিত করে নিয়োগের চেষ্টায় আমলাদের অনেকের চেষ্টা দৃশ্যমান হওয়ায় পর শুরু হয় শিক্ষা ক্যাডারের আন্দোলন। এক পর্যায়ে জটিলতা বাড়তে থাকে। এরপর ক্যাডারে অন্তুর্ভুক্ত না করারা পক্ষে অবস্থান আসলেও শিক্ষকদের তথ্য যাচাই বাছাইসক নানা কারনে সরকারি শিক্ষককে এ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। এমন অবস্থার মধ্যে এবার এবার সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির (সকশিস) ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষকরা। সরকারি হওয়া প্রতিষ্ঠানের এ শিক্ষকরা মঙ্গলবার জেলায় জেলায় মানববন্ধন ও সমাবেশ করে তাদের দাবি তুলে ধরেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক ত্রুটিজনিত কারণে কোন শিক্ষক-কর্মচারীকে বঞ্চিত না করে অ্যাডহক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে সরকারিকৃত কলেজগুলোতে সংযুক্তি আদেশপ্রাপ্ত সব শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে কলেজগুলো শিক্ষা ক্যাডারের অনপ্রবেশ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। পিএসসির মাধ্যমে সরকারিকৃত কলেজেগুলোতে ননক্যাডার প্রভাষকদের নিয়োগ দেয়ার দাবি জানানোর দাবিও তোলা হয়েছে কর্মসূচিতে। শিক্ষকরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক ও সাহসিকতাপূর্ণ সিদ্ধান্তে ৩০২টি বেসরকারি কলেজকে সরকারিকরণের জন্য নির্বাচিত করে বিগত ২০১৬ সালে আদেশ জারি করা হয়। এরাপর ওই বছরই কলেজসমূহের নিয়োগ ও অর্থ ব্যয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এরপর শুরু হয় কাগজ পত্র যাচাই- বাছাই। প্রথম পর্যায়ে মাউশির নিয়ন্ত্রাধীন ৯টি আঞ্চলিক পরিচালকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একেকটি টিম সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের নির্বাচিত প্রতিটি কলেজে সরেজমিনে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচলনা করে পরিদর্শন টিম প্রতিটি কলেজের জন্য একেকটি পরিদর্শন প্রতিবেদন তৈরী করে মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠান। বিসিএস(সাধারন শিক্ষা) সমিতির মহাসচিব মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী ও মো. মঈনুল হোসেনের দায়ের করা রিট পিটিশন এবং 'ঘঙ ইঈঝ ঘঙ ঈঅউজঊ' আন্দোলনের ফলে দীর্ঘ সময় অপচয় হয়েছে। শিক্ষকদের অভিযোগ, ২০১৮ সালে শিক্ষা মন্ত্রনালয় সমন্বিত পদ সৃষ্টির আদেশ জারি করে এবং সে অনুযায়ী ঢাকা জেলায় চারটি কলেজকে পদ সৃজনের মডেল হিসেবে বিবেচনা করে পাইলটিং শুরু করে। এই পাইলটিং আজও আলোর মুখ দেখেনি। কর্মসূচি থেকে ১৪ দফা দাবি সরকারের কাছে পেশ করা হয়েছে। দাবিগুলো হচ্ছে- প্রতিষ্ঠান সরকারিকরনের জন্য প্রজ্ঞাপন জারির তারিখে কর্মরত সকল শিক্ষক- কর্মচারীকে আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্য এডহক নিয়োগ দিতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক ত্রুটিজনিত কারণে কোনো শিক্ষক-কর্মচারীকে আত্তীকরণ বঞ্চিত করা ও হয়রানি করা যাবে না। মন্ত্রণালয়ের আত্তীকরণের যাচাই-বাছাই কাজে রেসরকারী কলেজের নিয়োগ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা আছে এমন ব্যক্তি যারা পূর্বে আত্তীকৃত হয়েছে তাদেরকে এবং বর্তমানে য়ারা আত্তীকৃত হতে যাচ্ছে তাদের প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। সদ্য সরকারিকৃত কলেজসমূহ থেকে সংযুক্তি আদেশপ্রাপ্ত সকল শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। এনাম কমিটির সুপারিশ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ শিক্ষক পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পদ ও পদসোপান সৃজন করে পদোন্নতি দিতে হবে। যোগদানের তারিখ থেকে চাকরি শতভাগ গণনা করে কার্যকর চাকরিকাল নির্ধারণ এবং পদোন্নতিসহ সকল ক্ষেত্রেই তা কার্যকর করতে হবে। সরকারি চাকরি নীতিমালা অনুসরণপূর্বক আত্তীকৃত শিক্ষক কর্মচারীদের চাকরি বদলিযোগ্য করতে হবে। বেসরকারি আমলে প্রদত্ত কল্যাণ তাহবিল ও অবসর সুবিধার চাঁদা এমপিও বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে সুবিধাসহ ফেরত দিতে হবে। সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা ২০১৮ এর অসঙ্গতি ও বৈষম্য দূরীকরণ ও বিধির বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় উপবিধিসমূহ প্রণয়নের কাজ জরুরী ভিত্তিতে শুরু এবং প্রণয়নের কাজে আত্তীকৃতদের প্রতিনিধিকে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। আত্তীকৃত শিক্ষকদের স্বতন্ত্রভাবে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া শিক্ষাবোর্ডসহ শিক্ষা প্রশাসনের সকল অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের পদসমূহে আনুপাতিক হারে আত্তীকৃতদেরকে পদায়ন করতে হবে। ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স এ শিক্ষকদের পদ মর্যাদা বা অবস্থান নির্ধারণ করতে হবে। শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালু করতে হবে এবং সকল পর্যায়ের শিক্ষকদের চাকরির অবসর গ্রহণের বয়স ৬৫বছরে উন্নীত করে ন্যাশনাল এডুকেশন সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ৫৮ হাজার শিক্ষক নিয়োগে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবি: বেসরকারি শিক্ষ প্র্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে দ্রুত ‘তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাশী শিক্ষক ফোরামের’র ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল্লাহ রাজু বলেন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) তৃতীয় নিয়োগ চক্রের জন্য ৫৭ হাজার ৩৫৮টি শূন্যপদের চাহিদার বিপরীতে নিবন্ধিত শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে এখন পর্যন্ত ব্যর্থ। এর ফলে নিয়োগপ্রত্যাশী লক্ষাধিক নিবন্ধিত শিক্ষক চরম হতাশা ও দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। অনেকের বয়স ৩৫ অতিক্রম করায় আবেদনের যোগ্যতা হারিয়েছেন। গণবিজ্ঞপ্তি বিলম্বিত হওয়ায় প্রতিনিয়ত অনেকের বয়স ৩৫ অতিক্রম করছে, যা নিবন্ধনধারীদের জন্য গভীর যাতনার।
×