ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নর্থ ক্যারোলাইনা, নেভাদায় ট্রাম্প ও বাইডেনের জোর প্রচার

প্রকাশিত: ২২:৪১, ২০ অক্টোবর ২০২০

নর্থ ক্যারোলাইনা, নেভাদায় ট্রাম্প ও বাইডেনের জোর প্রচার

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মার্কিন নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে দুই অঙ্গরাজ্যে জোরালো প্রচার চালাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেন। স্থানীয় সময় ১৮ অক্টোবর রবিবার বাইডেন নর্থ ক্যারোলাইনা ও ট্রাম্প নেভাদায় নির্বাচনী সমাবেশ করেছেন। নির্বাচনী সমাবেশে প্রার্থীদের আগ্রাসী বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে হার-জিতের লড়াই যেন শুরু হয়ে গেছে। খবর সিএনএন, পলিটিকে, ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস ও লস এ্যাঞ্জেলেস টাইমসের। বাইডেন বলছেন, ট্রাম্প ক্রমাগত মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন। আর ট্রাম্প বলেছেন, বাইডেন একজন দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক। সুইং স্টেট হিসেবে পরিচিত নর্থ ক্যারোলাইনায় বাইডেন বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি এখনও মিথ্যার বেসাতি করে চলছেন। এদিকে ট্রাম্প বলছেন, করোনা পরিস্থিতি সংকুচিত হয়ে আসছে। বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ এলাকায় সংক্রমণ বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। এমন করে বাড়তে থাকলে আবারও লকডাউনে যাওয়ার কথা বলতে হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবীদের। করোনার সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় ৮০ লাখ মানুষের সংক্রমণ নিয়ে দেশটি লড়াই করছে মহামারীর সঙ্গে। দেশজুড়ে বিরাজ করছে অস্বাভাবিক অবস্থা। এ কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রচার চালাচ্ছেন বাইডেন। খোলা মাঠে কোন সমাবেশ নয়, গাড়ির বহর নিয়ে নর্থ ক্যারোলাইনার ডুরহাম নগরীর একটি পার্কিং লটে সমাবেশ করেছেন তিনি। লোকজন মাস্ক পরিহিত অবস্থায় বাইডেনের বক্তব্য শুনেছেন। মুখ থেকে মাস্ক সরিয়ে বাইডেন বলেছেন, করোনা মোকাবেলায় ট্রাম্প শুরু থেকেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তার ব্যর্থতার কারণেই এত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ভ্যাকসিন নিয়ে ট্রাম্প মানুষকে মিথ্যা আশাবাদ দিচ্ছেন। ক্রমাগত মিথ্যে কথাই বলে যাচ্ছেন ট্রাম্প। তিনি নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের পদ্ধতিগত বর্ণবিদ্বেষের অবসান করবেন, কৃষ্ণাঙ্গদের সম্পদ বৃদ্ধির কর্মসূচী হাতে নেবেন। ২০১৬ সালে নর্থ ক্যারোলাইনায় জয় পেয়েছিলেন ট্রাম্প। এবারে জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, অন্তত ৩ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন বাইডেন। সেখানে কৃষ্ণাঙ্গ ও নারীদের ভোটে বাইডেন ব্যাপক সমর্থন পাবেন বলে মার্কিন গণমাধ্যমের প্রকাশিত বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে। নেভাদায় সপ্তাহ শুরুর দিন প্রার্থনায় যোগ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। গির্জার ধর্মগুরু ডেনিস গাউলেট এক পর্যায়ে ট্রাম্পের দিকে এগিয়ে যান। তারা দুজন কিছুক্ষণ কথা বলেন। প্রার্থনায় যোগ দেয়া বেশ সম্মানের উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, কিছু লোক আছে যারা এসব মানেন না। এর পর ট্রাম্প গির্জার দান বাক্সে দান করে নেভাদার প্রচার সমাবেশে যোগ দেন। করোনা মোকাবেলায় ট্রাম্প শুরু থেকেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তার ব্যর্থতার কারণেই মানুষের মৃত্যু বেশি হওয়া সত্ত্বেও ভ্যাকসিন নিয়ে তিনি মানুষকে মিথ্যা আশাবাদ দিচ্ছেন। ক্রমাগত মিথ্যে কথাই বলে যাচ্ছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গণমাধ্যম ॥ নির্বাচনের এখনও ১৬ দিন বাকি আছে। আর ট্রাম্প বর্তমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতাসীন। তারপরও ইতোমধ্যে অনেকেই তাকে খরচের খাতায় ফেলে দিয়েছে। দেশটির প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস এক বিশেষ সম্পাদকীয় নিবন্ধে ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের বিরুদ্ধে স্পষ্ট করে কথা বলেছে। ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচন হবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় হুমকি এ কথা উল্লেখ করে পত্রিকাটি লিখেছে, ট্রাম্পের বিপর্যয় সৃষ্টিকারী চার বছর যুক্তরাষ্ট্রকে দেশের ভেতরে ও বাইরে প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তিনি ক্ষমতা অপব্যবহার করেছেন ও নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বৈধতা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। যে নীতিমালা বছরের পর বছর এই দেশকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে, তিনি তা ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছেন। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনে অযোগ্য। প্রায় একই ভাষায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কথা বলেছে আরেক প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট। তারাও সম্পাদকীয় নিবন্ধে লিখেছে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ইতিহাসের ‘সবচেয়ে মন্দ প্রেসিডেন্ট’। অন্যদিকে বাইডেন সম্পর্কে ওয়াশিংটন পোস্ট মন্তব্য করেছে, তিনি একজন যোগ্য ও সম্মানজনক প্রার্থী, অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে এই মুহূর্তে তাকেই প্রয়োজন। অন্যান্য প্রধান পত্রিকার মধ্যে লস এ্যাঞ্জেলেস টাইমস, টাম্পা বে টাইমস, ডেট্রয়েট ফ্রি প্রেস ও ফ্লোরিডার সান-সেন্টিনেল বাইডেনকে সমর্থন জানিয়েছে। অপর কয়েকটি প্রধান পত্রিকা ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য টেক্সাসের এল পাসো টাইমস ও বোস্টন হেরাল্ড। ট্রাম্প ইতোপূর্বে ঘোষণা করেছিলেন, নিউইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্টসহ অধিকাংশ প্রধান পত্রিকা ও টিভি নেটওয়ার্ক তাকেই সমর্থন করবে। বলা বাহুল্য, সে কথা সত্য প্রমাণিত হয়নি। নিজ দলেই সমালোচিত ট্রাম্প ॥ নিজ দলের ভেতরেই ট্রাম্পের অবস্থা নড়বড়ে হয়ে পড়ছে। নির্বাচনে পরাজয়ের পূর্বাভাস তার বিরুদ্ধে যাচ্ছে টের পেয়ে রিপাবলিকান দলের অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতা নিজেদের আনুগত্য পরিবর্তন করে নিচ্ছেন। যেসব রিপাবলিকান সিনেটর অথবা কংগ্রেস সদস্য পুনর্নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন, তাদের মধ্যেই এই প্রবণতা বেশি। বস্তুত এটি তাদের নিজেদের গা বাঁচানোর চেষ্টা। তাদের একজন হলেন নেব্রাস্কার সিনেটর বেন স্যাসে, যিনি কঠোরতম ভাষায় ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্পের কারণে রিপাবলিকান দল সিনেটে তার নিয়ন্ত্রণ হারাতে যাচ্ছে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন এই মধ্যপন্থী রিপাবলিকান। এমনকি ট্রাম্পের দুই বিশ্বস্ত অনুসারী, সিনেটর মিচ ম্যাককনেল ও সিনেটর লিন্ডসি গ্রাহাম ট্রাম্পের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করছেন। ট্রাম্প নিজেও পরাজয়ের আঁচ পেয়েছেন। গত শনিবার জর্জিয়ায় এক নির্বাচনী সভায় কিছুটা স্বগতোক্তির মতো তিনি মন্তব্য করেন, বাইডেনের মতো এমন একজন অযোগ্য প্রার্থীর হাতে যদি তিনি পরাজিত হন, তাহলে তাকে হয়ত এই দেশ ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হবে। তার ভাষায়, ভাবতে পারো, আমার সারা জীবন সামনে পড়ে আছে। এরপর তাহলে আমি করব কি? স্বপ্ন ফিকে হয়ে আসছে ট্রাম্পের ॥ ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে থেকে যাওয়ার স্বপ্ন ক্রমশ ফিকে হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির মাঠ এখন প্রায় দখল করে আছেন বাইডেন। দেশজুড়ে প্রায় সব জনমত জরিপসহ শেষ মুহূর্তের প্রচার ও তহবিল সংগ্রহেও ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন তিনি। করোনায় সংক্রমিত হওয়ার পর ধারণা করা হয়েছিল, নির্বাচনী প্রচারের ধরন পাল্টাবেন ট্রাম্প। তার মুখ থেকে শোনা যাবে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান, থাকবে সহমর্মিতা আর সহনশীলতার রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য। কিন্তু ট্রাম্প সে পথে হাঁটেননি। এখনও হাঁটছেন তার সেই চিরচেনা পথে। বিভেদ আর উসকে দেয়া বক্তব্যই দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। করোনা মহামারীতে দুই লাখ ১৯ হাজার মানুষের মৃত্যুতেও প্রেসিডেন্ট জনগণের কাছে কোন সহানুভূতির বার্তা নিয়ে এখনও উপস্থিত হননি। এর পরও তার কট্টর সমর্থকরা মনে করেন, জাদু দেখাবেন ট্রাম্প। যদিও এমন জাদুর কোন সমাজ বৈজ্ঞানিক হিসাব রাজনৈতিক বিশ্লেষকের কাছে নেই। ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে এখনও অক্টোবর সারপ্রাইজ হিসেবে ভরসা আসছে ২২ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় দুই প্রার্থীর শেষ বিতর্ক।
×