ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ পুরনো রোহিঙ্গা সমস্যা

প্রকাশিত: ২০:৪০, ২০ অক্টোবর ২০২০

সিডনির মেলব্যাগ ॥ পুরনো রোহিঙ্গা সমস্যা

কক্সবাজারের টেকনাফে নয় বছর বয়সী এক মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণের মামলায় এক রোহিঙ্গা শিক্ষককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বৃহস্পতিবার বাহারছড়া ইউনিয়নের উত্তর শিলখালী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান টেকনাফ থানার ওসি মোঃ হাফিজুর রহমান। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে উত্তর শিলখালী আলহেরা ইবতেদায়ি নূরানী মাদ্রাসায় এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। গ্রেফতার মৌলভী নূরুল হক (২০) ওই মাদ্রাসার শিক্ষক। সে টেকনাফের স্থানীয় এক রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। সারাদেশে ধর্ষণের প্রবণতা বেড়েছে। এই প্রবণতা করোনার ভয়ে কাবু থাকেনি। বরং একটু থমকে এখন আবার পূর্ণ শক্তিতে ফিরছে। রোজ এক বা একাধিক বলাৎকারের খবর আর ঘটনা শুনছে জাতি। বলাবাহুল্য, পজিটিভ নিউজের চাইতে নেগেটিভ নিউজ বেশি জনপ্রিয় বলে ধর্ষকরাই পরিচিত। সমাজে- জাতিতে এদের নিয়ে যত আলোচনা তার সিকিভাগও প্রচার নেই সেসব মানুষের যারা ধর্ষকদের ধরিয়ে দেয়। সিলেটের এমসি কলেজের ঘটনায় ধর্ষক নেতা রঞ্জিত আর পাপীরা যেভাবে পরিচিতি পেয়েছে সেভাবে পায়নি মিহিত। মিহিতও ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতা। সাহস করে ঘটনা ধামাচাপা দিতে আসা নেতাদের থামিয়ে তিনি এই ঘটনা মিডিয়া ও মানুষের সামনে নিয়ে আসেন। কিন্তু দেখুন কেউ তাকে চেনে না। এটাই আমাদের সমাজের বর্তমান চিত্র। আমি আজ এই ঘটনা নিয়ে লিখতে বসিনি। আমার মূল বিষয় অন্যত্র। বলে রাখি আমি বিএনপির রাজনীতি বুঝি না। তাদের যুবরাজের ইতিহাস বিকৃতি আর মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু বিষয়ে মিথ্যাচার আমার অপছন্দ। আমি সেনা শাসনের ভেতর দিয়ে এই দলের নেতার স্বরূপ দেখা মানুষ। কিন্তু বর্তমান রাজনীতিহীন সময়ে রাজনীতিবিদদের ভেতর আমার মির্জা ফখরুলকে মন্দ লাগে না। এর নানাবিধ কারণের ভেতর একটি হলো তাকে সব সময় মিডিয়ায় কথা বলতে দেখি না। তিনি তার দলের রিজভী কিংবা সরকারী দলের মুখপাত্রের মতো প্রায় প্রতিদিন এসে আমাদের বাণী শোনান না। তার আরেকটি গুণ চমৎকার বাংলা বলেন। মিতভাষী মির্জা ফখরুলকে আজ দেখলাম রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কথা বলতে। এ বিষয়েও একটা কথা বলে রাখি। আবেগপ্রবণ বাঙালী কি করে কি বোঝে তা অনুমান করাও মুশকিল। শুরুতে সরকারী দল তো পারলে কেঁদেই দেয়। আওয়ামী লীগের নেতাদের দেখে কথা শুনে মনে হয়েছিল একাত্তরের মতো কোন পরিস্থিতির মোকাবেলা করছেন তারা। একেক দল রোহিঙ্গা আসে আর আমাদের নেতা মিডিয়ার আবেগ উপচে পড়ে। সবাই মাইক্রোফোন হাতে হয় উখিয়া নয়ত কক্সবাজার বা টেকনাফ। আমরা মনে মনে প্রমাদ গুনছিলাম। ভাবছিলাম একবেলা না খেয়ে তাদের খাওয়ানোর ভেতর আবেগ থাকলেও যুক্তি নেই। কিন্তু সে কথা বলে বিপদে পড়ার মতো ঘাড়ে একাধিক মাথা ছিল না আমাদের। বরং আমরা এও দেখেছি সে সময় অতি আবেগ আর ধর্মের নামে মাঠে নেমে পড়া সুবিধাবাদীরা বললেন এদের মেয়েদের বিয়ে করে ফেলাও নাকি পুণ্যের কাজ। হায় কপাল! এরা তখনও জানত না স্বামী পাঁচ-দশ বছর না থাকলেও রোহিঙ্গা নারীদের সন্তানের বয়স তিন বা চার বছর। এর উত্তরও তারা স্পষ্ট করে বলেছে। স্বামী না থাকলে কি হবে, তার ভাই তো আছে। এই সম্প্রদায়ের ওপর যে অনাচার আর অত্যাচার চলেছে তা মানবেতর আর অবর্ণনীয়। বিশেষত সামরিক শাসকের লৌহ কঠিন দেশ মিয়ানমারের শাস্তি আর কঠোরতা ভয়াবহ। আরও একটা বিষয় দেখুন- তারা কিন্তু দেশপ্রেমী। তাই রোহিঙ্গা বিষয়ে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী আউং সান সুচিও কথা বলেন নির্যাতকদের হয়ে। তাদের দেশীয় স্বার্থে তারা সবাই এক। আমাদের নোবেল বিজয়ী মুখ খোলেন না। মুখ খুলতে দেরি করেছে বিরোধী রাজনীতি। আজ এতদিন পর মির্জা ফখরুলের বোধোদয়ে তাই মনে হলো তিনি আমাদের সঙ্গে, জাতির সঙ্গে মশকরা করছেন। তার বক্তব্যে তিনি বলছেন, ‘যারা ক্ষমতাশালী, পরাক্রমশালী, তারা নিজেদের সম্পদকে টিকিয়ে রাখার জন্য অন্যদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে, রাষ্ট্রের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে, রাজ্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। ঠিক একইভাবে আজকে বাংলাদেশেও একটা শক্তি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, মানুষের অধিকারগুলো হরণ করেছে এবং স্বাধীনতাযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’ তাঁর কথামতো রোহিঙ্গা সমস্যা আন্তর্জাতিক চক্রান্ত। আর এটা মোকাবেলা করার কোন সাহস বা শক্তি নেই সরকারের। কিন্তু আপনারা কি করেছেন? একবার মাত্র দেখেছিলাম গাড়িবহর নিয়ে রোহিঙ্গাদের দেখতে যাওয়ার সময় আটকে দেয়া হয়েছিল আপনাদের। সম্ভবত গাড়ির বহরে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়েছিল। ব্যস, এতেই শেষ? ফখরুল সাহেব, আপনি নিশ্চয়ই খবর দেখেন। ১ অক্টোবরে ভারতে কি ঘটেছে নিশ্চয়ই দেখেছেন? করোনার কঠিন সময়েও সেখানকার বিরোধী দল থেমে থাকেনি। উত্তর প্রদেশে গণধর্ষণের ঘটনা সরেজমিনে দেখার জন্য যাওয়ার সময় আক্রান্ত হয়েছেন ইন্দিরা গান্ধীর দ্রৌহিত্র রাজীব গান্ধীর পুত্র রাহুল গান্ধী। ভারতের পুলিশ কিন্তু গণতন্ত্র বোঝে বলে মনে হলো না। বরং তাদের এ্যাকশন দেখে মনে হলো উপমহাদেশের পুলিশের কালচার এক। তাদের শারীরিক ভাষা ও লাঠিচার্জও এক রকমের। প্রায় মাটিতে লুটিয়ে পড়া রাহুল গান্ধী এর পরও থামতে চাননি। আপনারা না হয় গ্রেফতারই হতেন। কিন্তু একবারও তো কোন বিষয়ে মাঠে নামেন না। এত ধর্ষণের ঘটনা, এত অপমান, একবারও কি দল নিয়ে গিয়ে তাদের সান্ত¡না দিয়েছেন? গড়ে তুলেছেন কোন সামাজিক প্রতিরোধ? আরও একটা কথা- সেদিন কিন্তু আপনারাও রোহিঙ্গাদের জন্য ভালবাসা আর কাঁদতে গিয়েছিলেন। আজ মনে হচ্ছে এটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। যে কথাটা আমরা নানা কারণে ইনিয়ে-বিনিয়ে বলেও বোঝাতে পারিনি, আজ তা স্বীকার করলেন, তবে বড় দেরিতে। দেশে যে রাজনীতি নেই সেজন্য আপনারাও কম দায়ী নন। নিজেদের নেত্রীর জন্যও আপানারা মাঠে নামেননি। শেখ হাসিনাকে দেখুন। তাঁর ইমেজ আর প্রজ্ঞার কারণে আওয়ামী লীগ এত কিছুর পরও কেমন বহাল তবিয়তে আছে। তাঁকে টোকা দিলেও সারাদেশে খবর হয়ে যাবে। আর আপনারা কথা বলতে বলতেই দিন গুজরান করে দিলেন। রোহিঙ্গা সমস্যাটি ইতোমধ্যে বিষফোঁড়া হয়ে পেকে গেছে জনাব। এখন যা বের হবে তা এই লেখার শুরুতে বলা গল্পের মতো পুঁজ আর গন্ধময় পদার্থ। এরা আমাদের নারীদের ধর্ষণেও সফলকাম এবং জানে এসব করলেও কিছু হবে না। না বিচার, না শাস্তি। আর হলেইবা কি? তারা যা পাচ্ছে, যা পেয়েছে তাই তো যথেষ্ট। মূলত আমাদের চট্টগ্রামকে ধ্বংস করে ছাড়বে এরা। তারপর হাত বাড়াবে দেশের সব জায়গায়। যে কারণেই হোক তাদের অবিলম্বে ফেরত দেয়া এখন আর বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করে না। মির্জা সাহেব আপনি নিশ্চয়ই জানেন প্রত্যাবর্তনের ঘটনা বা নাটকে আমরা দেখেছি তারা যেতেও অনাগ্রহী। জামাই আদরে থাকা রোহিঙ্গাদের নিয়ে কিছু করতে হলে সবার ঐক্য আর কাজের জন্য মাঠে নামার বিকল্প নেই। আপনারা কি তা করবেন? না, বোধোদয়েই সন্তুষ্ট রাখবেন আমাদের? [email protected]
×